Tuesday, July 5, 2016

ঘুটুর যুদ্ধ

  পাগলা হাওয়া -১                                           
    ঘুটুর যুদ্ধ
আদিগন্ত মাঠের শেষ প্রান্তের ঝাপসা গাছপালার মাথায় শেষ বিকেলের সূর্য; পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে বিষ গলায় ডেকে। এক ঝাঁক বুনোহাঁস পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে উড়ে চলেছে আকাশে ফুলের মালা গেঁথে-সূর্যটা বারবার ঢাকা পড়রছে যেন; ওগুলো কি সূর্যের ভেতর ঢুকে পড়বে নাকি। সূর্যের পটভূমিকায় পাখিগুলাকে মনে হচ্ছে মেঘ-কালো। সূর্যের বুকে যেন ছবি হয়ে ভাসছে ওরা। কিন্তু না, এভাবে তাকিয়ে থাকলেত চলবেনা ঘুটুর। সূর্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে আবার সে হাঁটতে শুরু করে। রোধ পড়ে পিঠে; লম্বা ছায়াটা তাই ভূতের মত আগে আগে হাঁটছে। ঘাড়ে পিঠে ঝোলান বিরাট কচু তিনটি যেন ভূতের লম্বা তিনটি কান বা শিং। রাস্তাটা মাঠের বুক বরাবর সোজা চলে গেছে পূর্বমুখো, ওপথেই প্রায় টলতে টলতে এগোচ্ছে ঘুটু। মাঘের শীত উপেক্ষা করে সাত-সকালে মায়ের বক্ষুকি খেয়ে উঠে পড়েছিল আজ, পুকুরপাড় থেকে কচু তিনটি কেটে দড়িতে বেঁধে না খেয়েই রওনা দিয়েছিল বাজারমুখো। কচু তিনটি বেচে চাল-ডাল কিনে তার ঘরে ফেরার কথা। ঘরে ফিরলে চুলোর আগুন জ্বলবে, পেটের আগুন নিভবে। গত রাত থেকেই পেটে আগুন; নেভানোর চেষ্টাতেই সে বাজারে এসেছিল। এসেছিল সবজির বাজারে। দর দাম যে হয়নি তা নয়, তিনটি কচুর মধ্যে বড়টির সর্বোচ্চ দাম যে ভদ্রলোক বলেছিলেন, তাতেও আধাসের চাল হবে না। ঘুটু বেচেনি। মায়ের বারণ ছিল। বাজারে আজকাল শাকসবজির অভাব নেই, এন্তার। দাম তাই পানির মত। গেরস্তরা ঘরেরটা খায়, না পারতে কেনেনা। পাইকাররা আজ হাটে আসেনি; শহরমুখো বাস নাকি ধর্মঘট। অবশ্য, শেষ বেলায় ঘুটু যে কোনমূল্যেই হোক কচু তিনটি বেচতে চেয়েছিল, খদ্দের মেলেনি। কান্না পা্িচছল তার। ভেবেছিল হাটেই ফেলে আসে। কিন্তু মা বকবে,তাছাড়া রাতে অন্তত কচুর জাউ খেয়ে পেটটাকে বুঝ দেয়া যাবে। কিন্তু এখন ধুলোভরা পথ বেয়ে হাঁটতে তার দারুণ কষ্ট হচ্ছে। ঘেমে নেয়ে গেছে, ঘাড়-মাথায় ব্যথা করছে। বাজারে যাবার সময় যতটুকু ওজন ছিল কচু তিনটের, এখন যেন তিন গুণ বেড়ে গেছে। পাথর। তবুও হাঁটছে সে এলোমেলো। গায়ে শুধু একটা পাতলা ময়লা গেঞ্জি। পরনে পাছা ফাটা হাফপ্যান্ট। বোতাম ছিঁড়ে  গেছে-বারবার খসে পড়তে চায়। বারবার কচু তিনটিকে মাটিতে রেখে টেনেটেনে ঠিকঠাক করে। বাতাস ফুটছে শরীরে সুইয়ের মত। শীত। তবুও ঘামছে সে দরদর। তিনটি টিয়ে উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। কয়েকজন তার পাশ ঘেঁসে। পাকা ধানের ঘ্রাণে খিদেটা বেড়ে যায়। নাক টেনে মিষ্টি ঘ্রাণ নিতে থাকে সে। বাঁ দিকে বলদের শিংয়ে বসে আছে একটি ফিঙে পাখি। ঘুটু একটু দাঁড়ায়। ভাবে, ধারে কাছেই হয়ত পাখিটার বাসা। কিন্তু খুঁজে দেখার সময়ত নেই। শরীর টলছে খিদেয়। বাঁ দিকেই জলা। পানি খেতে ইচ্ছে করে খুব। কচু তিনটি রেখে এগোয়। আঁজলায় তুলে পেট পরে পানি খায়। তিনটি জলপিঁপি শাপলা পাতার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে ছবির মত। একটি পানকৌড়ি ডানা মেলে রোদ পোয়াচ্ছে এই শেষ বিকেলে। খুব ভাল লাগে তার। খিদের জ্বালাটা সে ভুলে যায় মুহূর্তের জন্য। সরকারদের পুকুরপাড় দিয়ে যাবার সময় শোনে দারুণ হৈ হুল্লোড়। উঁচু পাড়টা বেয়ে উঠে। দেখে, জালটেনে মাছ ধরছে সরকার বাড়ির লোকজন। বিরাট বিরাট রুই-কাতলা লাফালাফি করছে ভয়ে। বহু লোক পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখছে। পুকুর পাড়ে চেয়ার পেতে বসা নিধু সর্দার। তার পায়ের কাছে মাছের কাড়ি। লাফালাফি। দাপাদাপি। রূপালী ঝিলিক। কচুতিনটি মাটিতে রেখে এগোয় ঘুটু, দাঁড়ায় কাছাকাছি গিয়ে। দু'চোখে সে মাছ গিলতে থাকে। কি বড় বড় মাছ! রুইগুলো কেমন রক্তের মত লাল। পাইকাররা মাছ মাপতে শুরু করেছে। দরদামও চলছে কারো কারো সঙ্গে। কেউ কেউ নিধু সর্দারকে বলে দু একটা করে কিনছে খাবার জন্য। হঠাৎই নিধু সর্দারের চোখ পড়ে ঘুটুর উপর। অতি উৎসুক এই বালকটির চাহনি আর শুকনো মুখ দেখ মনে দয়া জাগে। পাশে দাঁড়ান এজনকে জিজ্ঞেস করেন, কে ওই ছেলেটি? জবাব আসে, ওতো ধুমঘাটের কাশেম আলীর ছোয়াল। খুলনায় নিউজপ্রিন্ট মিলে চাকরি করতো। নিউজপ্রিন্ট মিলের বয়লার বিস্ফোরণে একটা চোখ কানা হইয়ে গেইল। মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ারপর পর গ্রামে ফিরে আসছিলো। ওইতো-যে কাশেম আলী এইবার সুন্দরবনে মাছ ধরিতে যাইয়ে বাঘের পেটে গেইছে। নিধু সর্দার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন ঘুটুর দিকে। তারপর কাছে ডেকে বলেন, তুমি একটা মাছ নেবে খোকা? ঘুটুর বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠে, চোখ দুটো চকচক। মুখে অবিশ্বাস। কিন্তু বিরাট একটা রুইমাছ যখন নিধু সর্দারের নির্দেশে তার এক লোক ঘুটুর কোলে তুলে দিল, তখন সে মাছটির কানকোর ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল; তারপর খুশিতে মাছটিকে পেটে চেপে হাঁটতে শুরু করল। মাছটির ওজন হবে কমপক্ষে সাত সের, কিন্তুঘুটুর মনে হচ্ছিল শুকনো পাতার মত হালকা। ক্ষিধেও ভুলে গেছে। শীত লাগছেনা। নিধু সর্দার তাকিয়ে আছেন ঘুটুর দিকে। রাজাকরদের হাত থেকে এক দিন রক্ষা করেছিল তার জীবন ওই বালকটির সাহসী পিতা-পাক সেনাদের গুলির মুখ থেকেও একদিন তাকে রেহাই দিয়েছিল কাশেম আলী; ওই মুহূর্তে কাশেম না হলে কিছুতেই বাঁচতে পারতনা সেদিন। রাস্তায় বহুবার মাছটি আছড়ে পড়ল। ধুলো মেখে একাকার। তুবও ঘুটুর কাছ থেকে মুক্তি চায় সে। একটি খাল পেরুনোর সময় মাছটি বুঝি পানির গন্ধে পাগল হয়ে মারল একটা জাপটা। ফসকে যাচ্ছিল, ঘুটু তাড়াতাড়ি খাল পেরোল। তখনই মাছটি ঝাটকা মেরে খাল পাড়ে পড়ল। ঘুটু জাপটে ধরল। ধস্তাধস্তি। যুদ্ধ। ঘেমে যায় ঘুটু । অবশেষে মাছটি পরাজিত হয়। দুটো মেছো ঈগল বারবার মাথার উপর উড়ে ছোঁ মারতে চায়। ঘুটু ঢিল ছুঁড়ে তাড়ায়, কিন্তু পিছু ছাড়েনা। মাথার উপর দিয়ে ঘুরে ঘুরে উড়তে থাকে। ঘুটরু লোমগুলো খাড়া হয়ে থাকে ভয়ে; উত্তেজনায় কাঁপছে সে। বারবার তাকাচ্ছে এবং মুখ দিয়ে হুসহাস শব্দ করে তাড়াতে চাইছে হিংস্র পাখি দুটোকে। বেলাটা বোধহয় ডুবে যেতে বসেছে, পাখি দুটো তাই ক্লান্ত দিয়ে ফিরে যায়। উঠোনে এসে মাছটাকে মাটিতে ফেলে মাকে ডাকতে থাকে চিৎকার করে। মা গেছে ও পাড়ার মোড়ল বাড়িতে ঢেঁকি পার দিতে। ঘুটু বসে মাছটিকে দেখতে থাকে টিপেটুপে। আদর করতে থাকে। মাছটির চোখ দুটো স্থির এখন। ঘুটুর সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধ করে সে হেরে গেছে। উঠোনে পা ফেলে মাছ দেখে মা হতবাক। এত বড় মাছ! কোহানে পালি বাজান। ঘুটু এক নিঃশ্বাসে সব বলে। মা এসে মাছটিকে কোলে টেনে নেন। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। মাছটা খাবে কি দিয়ে ঘরে একটাও চাল নেই। হঠাৎ ই বলেন, -কচু তিনডে কত বেচিছিস? চাল আনিছিস? এতক্ষণে ঘুটুর মনে পড়ে কচু তিনটিকে সে পুকুরপাড়ে ফেলে এসেছে। মাকে বলে সে কথা মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, এতবড় মাছ কি ভাত ছাড়া খাওয়া যায়। তেল-নুন নাহয় চাইয়ে আনবানে, চাল পাবানে কোহানে? ঘুটু ফস করে বলে ফেলে, মোড়ল বাড়ি যাইয়ে চাইয়ে আনগে। কয়হান কোটা মাছ নাহয় দিয়ে আসপানে। মা মাথা নেড়ে বলেন,-দেবেনানে বাজান। পাওনার চাইতে বেশি আনা হইছে। বড় বিবির যে মিজাজ! তার উপর আবার তার মাইয়ের বিয়ে সামনের মাসে। ঘুটু এবার ঝট করে উঠে দাঁড়ায়। মার গলা ধরে বলে,-তুমি চিন্তা কইরে না মা মাছ কটতি লাগো, আমি ধান আনতি যাতিছি। মা বলেন,-বাজান, সন্ধ্যে হইয়ে আইছে এহন তুই মাঠে যাসনে; ইন্দুরের গাঁতায় সাপ আছে। মনে নেই তোর বাপরে একবার ঘাদিল। ওঝা না পালিত মরত সেইবার। -মনে আছে মা। বাজানের বুড়ো আঙ্গুলি কামড় দেল, সঙ্গে সঙ্গে কোমরের গামছা খুইলে হাত বাইন্ধে ফেলায়। কোদাল দিয়ে গাঁতা খুইচে সাপটারে মাইরে ফেলাল। আমারে কামড়াতি পারবেনানে মা। ঘুটু ছোট্ট কোদাল হাতে ছোটে মাঠের দিকে। বেলা ডুবতে বসেছে-ডগমগে সূর্যটা গাছের নিচে নেমে গেছে অনেক আগে। সন্ধ্যা নামছে দ্রুত গতিতে। বিশাল মাঠ। ফসল উঠে গেছে অধিকাংশ ক্ষেতের। শূন্য মাঠ তাই যেন শোকে ও শীতে এখন কাঁদছে নীরবে। ঘুটু কোদাল ঘাড়ে ছুটছে মাঠের বুক দিয়ে ছায়ামূর্তির মত। তার লক্ষ্য একটা উুঁচু খড়বন। ধান এবার ভাল হয়েছিল। সুন্দরবন থেকে ফিরে এসে বাজানের ধান কাটার আশা ছিল-অবশ্য পরের ক্ষেতে। ঝরা ধান ও ধানের শিষ কুড়োনোর ইচ্ছা ছিল এবারও। প্রতি বছর দুই বাপ-বেটা এ করে বেশ কয়েক সের ধান সংগ্রহ করত। এবার মণ ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় এবার শুধু ধান গাছগুলোকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, যেনবা ইচ্ছে করেই প্রতিটি ধান শিষ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে ছাড়িয়ে দিয়েছে মাঠময়। জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টির  জলে ধান গাছ ও ঝরাধান পচে গেছে। তাই ইঁদুরগুলোও এবার তেমন সুবিধে করতে পারেনি। পাকার শুরুতে যা সংগ্রহ করেছিল তাই সঞ্চয়। ঘুটু ভাবে, আজ যদি বাজান থাকত! যেভাবেই হোক চালের যোগাড় হতো। সেত অসম্ভব খাটত এই বিলের ক্ষেতে ক্ষেতে। দিন মজুর। সব কাজ জানত। একটা চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একটি পা টেনে টেনে হাঁটত। ঘুটুকে কথায় কথায় বোঝাত, মার প্যাটেরতে পইড়েই যুদ্ধ করা আরম্ভ হয়। সে যুদ্ধ চলে মরার আগ পর্যন্ত। তাই যুদ্ধ করবি; হাইরে যাবিনে-মনে রাখবি, হাইরে যায়া মানেই মইরে যায়া। উঁচু খড়ের জমিটার প্রান্তে অনেকগুলো গর্ত। কোদাল চালায় ঘুটু পাগলের মত। ফুড়ুৎ করে বেরিয়ে ভয়ার্ত ডেকে উড়ে যায় একটি সুঁই চোরা পাখি। দ্বিতীয় গর্তটার কিছুটা ফুপিয়ে ভেতরে হাত ঢুকায় সে। হাতে যেন বরফ ছোয়। চট করে হাতটাকে টেনে আনতে চায়, কিন্তু পেঁচিয়ে যায় বরফ। টান দিয়ে  বেরে করতেই তার হাত পেঁচানো সাপটা ফস করে ফণা তোলে; হুমূর্তেই ঘুটু বাঁ হাতে ধরে ফলে ঘাড় অধিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায়। সাপটা মোচড়াচ্ছে ভয়ানক শক্তিতে। ঘুটুও ঘাড়গলা পেচে রেখেছে প্রচন্ড শক্তিতে। সাপটা তারের মত পেঁচ দিয়ে তার কচি হাতখানা পিশে ফেলতে চাইছে। হাত অবস। বোধশূন্য। রক্ত চলাচল বন্ধ। হাড়খানা এখনি চট কের ভেঙে যাবে বুঝি। তাড়াতাড়ি ঘুটু হাতখানা লম্বভাবে মাটিতে রাখে-পেচে ধরে সাপটির দেহ। কিন্তু সাপটি বেঙ গেলার মত শরীর মোচড়াচ্ছে-ফুলে উঠতে চাইছে গ্যাস বেলুনের মত। বারবার জিভ বের করছে। কুঁতকুতে চোখে, রাজ্যের ঘৃণা। ভয় ও আতঙ্কে ঘুটুর গলার শির ফুলে উঠেছে সাপটির মতই-ঁিছড়ে যাবার দশা। অপটু হাতের শিরাও জেগে গেছে। এখন ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। কিন্তু ছাড়ার জো নেই। হয় ওকে মারতে হবে না হলে েিনজেই মরতে হবে। ওদিকে আঁধার নেমে এসেছে। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুড়। বুতুম পেঁচো ওড়াওড়ি করছে-হয়ত বা সাপটিকে ধরার মতলবে আছে। আহা যদি একটা ভুতুম এসে সাপটির মাথাটা গিলে উড়ে যেত। কিংবা আসত দুটো বেজী! কিন্তু এখনও সন্ধ্যা-বেজী আসবেনা। আশেপাশে কোন মানুষও নেই। চিৎকার করেও লাভ নেই কেউ শুনবে না। ধারে কাছে গাছও নেই যে পিশে ঘসে মারবে। হাতটাও শুন্যে তোলার জো নেই-খট করে ভেঙ্গে যাবে পাটকাঠির মত। সাপটা ফুঁসছে। ফাঁক পেলে মরণ কামড় দেবে। সুযোগ দেয়া যাবে না। ঘুটুর মনে পড়ে এক ঝড়ের দিনের কথা। প্রচন্ড ঝড়। বৃষ্টি। বারবার ঝাপটা আসছে দৈত্যের মতো খিঁটিয়ে-লন্ডভন্ড করতে চাইছে তাদের নড়বড়ে কুঁড়েখানাকে। কিন্তু কুঁড়ের চালায় দড়ি বেঁধে টেনে আছে বাবা-মা এবং সে নিজে। ঝাপটা আসছে, এরা প্রাণপণ টেনে ধরছে। প্রচন্ড যুদ্ধ। প্রায় এক ঘন্টা যুদ্ধের পর হেরে গেল ঝড়। জিতে গেল ওরা তিনজন। সেকি আনন্দ! হারিয়ে দেবার আনন্দ। যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। বাজান বলেছিল-বুঝলিরে বাজান, এর নাম যুদ্ধ। সাবধান, হারবিনে কিন্তু। হারা মানেই মইরে যাাওয়া। বাবার কথা মনে পড়তেই ঘুটু শক্ত হয়ে ওঠে। মাটিতে চেপে ধরে ঘসতে থাকে জোরে জোরে। সাপটিও কম যায় না। সমানে যুদ্ধ চলে। এক সময় নেতিয়েপড়ে সাপটি। বানরের মত সাপের মাথাটা মাটিতে ঘসে ঘসে ক্ষয়ে ফেলে। তারপর মরা সাপটিকে ছুড়ে দেয় শূন্যে।  ওই শূন্য থেকেই একটি ভুতুম পেঁচা সাপটিকে ধরে উড়ে গিয়ে বসে দূরের কছা গাছে। আর ঘুটু উঠে দাাঁড়িয়ে টলছে। দারুণ পিপাসায় বুক ফেটে যেতে চাইছে। তবুও সে এগোয়। ওই গর্ত থেকে সংগ্রহ করে সের খাকে ধান। তারপর গামছায় বেঁধে টলতে টলতে এগোয়। কিন্তু হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। ভয়ও করছে অন্ধকারের জন্য। অকাশে ধ্রুব তারা। বাড়ি এখনও অনেক দূর। হঠাৎ ই দেখতে পায় বহু দূরে একটি টিমটিম আলো, এদিকেই আসছে। একটু পরেই শুনতে পায় দুরাগত কন্ঠ-মা তাকে ডাকছে খুঁজে খুঁজে। ঘটুর মুখে হাসি ফোটে। শরীরে নতুন শক্তি আসে। মায়ের ডাকে এত শক্তি। সেও চিৎকার করে ওঠে-আমি আসতাছি মা-আসতিছি। চালও পাইছি মা-চাল পাইছ। ঘুটু ছুটে চলেছে মাঠ পেরিয়ে ওই মায়ের হাতের মাটির প্রদীপ লক্ষ্য করে। 



0 comments:

Post a Comment