Tuesday, July 5, 2016

পঙ্ক থেকে ফুটে ওঠা



পাগলা হাওয়া ৮
পঙ্ক থেকে ফুটে ওঠা
শাায়লা,ইসলামের কথা খুব ভাবে। ভাবে যে, এবারে একদিন সত্যি সত্যি সে চলে যাবে ইসলামের পাঁচতলার ফ্ল্যাটটিতে। গিয়ে বলবে, এই তো এসে গেলাম। চারতলার কোলাপসিবল গেটের সঙ্গে লাগানো কলিংবেলের বোতামটি কয়েকবার টেপার পরই ইসলাম যখন পাঁচতলার বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচের দিকে তাকাবে তখনই শাায়লা বলবে, এই ইসলাম, আমি এসে গেছি। নিচে এসো নেমে, কোলাপসিবল গেটটি খুলে দাও। আমি ওপরে উঠবো। ইসলামের এই বাড়িটি পাকিস্তানী আমলের গোড়ার দিকে বানানো। বেশ বড়সড়ো জায়গা নিয়ে গাছগাছালি ঘেরা এই বাড়িটিতে এতো নির্জনতা যে, কোন মানুষ বাড়িটিতে থাকে বলে মনে হয় না শায়লার কাছে। শাায়লাকে ইসলাম কতোদিন ধরে বলছে ইসলামের বাসায় আসবার জন্য। প্রথম প্রথম শাায়লা শুধু হাসতো, কিছু বলতো না, পরের দিকে শায়লা তার হাসির সঙ্গে দুএকটি বাক্যও যুক্ত করা শুরু করেছে এই রকমের। দেখি শাায়লা বলে দেখি আর কতোদিন বলবে? সত্যি আসো না একদিন। ইসলাম অন্তরঙ্গ হয়ে কথা বলে। এসে কী হবে? গাড়িতে বসে ইসলামকে বলে শাায়লা । এই তো দেখা হচ্ছে। তা হচ্ছে ইসলাম আবেগগ্রস্ত হয়। কিন্তু আসলে অন্যর কম দেখা হতে পারে। পারে না? মানে? মানে, একটু অন্যরকম। তোমার ভালো লাগবে শাায়লা । জানি। তাহলে? শাায়লা হাসে। ইসলামের দিকে তাকায়। শাায়লা তার গাড়িতে মাঝে-মধ্যে ইসলামকে ড্রপ দেয় বাড়ির সামনে। তখন বাড়িটিকে দেখে। আসলেই ইসলামের বাড়িটি একটু অন্যরকমের। আজকাল এই ধরনের গাছগাছালিঘেরা ছায়াচ্ছন্ন বাড়ি প্রায় উঠেই যাচ্ছে। চারিদিকে পুরনো বাড়িগুলো ভেঙে গড়ে তোলা হচ্ছে রাশি রাশি সুউচ্চ ভবন। স্কাইস্ক্রেপার । এই সুউচ্চ ভবনগুলো ভেতরে পাখির বাসার মতো অসংখ্য ফ্ল্যাট ঠাসাঠাসি করে যেন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ফ্ল্যাটগুলোতে কিলবিল করছে মানুষ নামের কিছু প্রাণী। এই ভবনগুলোর আশেপাশে বাড়তি কোন জায়গা কিংবা সবুজতা তৈরি করতে পারে এমন কোন গাছগাছালি পর্যন্ত নেই। খাঁ খাঁ করে বাড়িগুলো। ইসলামদের বাড়ি তার উল্টো। বাড়িটার সামনে এলেই চোখে সবুজ স্পর্শ করে এক মুহূর্তে কতো গাছ বাড়িটার চারপাশে? কতো নির্জনতা? শাায়লা কখনো কখনো ইসলামকে এই বাড়ি থেকে তুলে নিতে আসে। গাড়িতে বসে বসে বাড়িটাকে দেখে। ভাবে এই সবুজ বাড়িটায় কোন শান্তির কাছে যাওয়ার জন্য তাকে আহবান করে ইসলাম। ইসলামের আহবানটির ভেতরকার সুরগুলো খুব বোঝে শাায়লা। সেই শাায়লার জন্য এই যে একটা কাতরতা ইসলাম বহন করছে, অনেকদিন ধরে তার পেছনেও শাায়লারই একটা সম্মতি অন্ততপক্ষে আকারের ইঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে কখনো কখনো। শাায়লা অবশ্য এ ও বোঝে তার সম্মতিগুলোকে সে অনেক সময়ই এক ধরনের অদ্ভুত অসম্মতির আবরণ দিয়ে ঢেকে তবেই উপস্থাপনা করে ইসলামের কাছে। ইসলামের কষ্ট হয়। শাায়লা নিজেকেই জিজ্ঞেস করে তাহলে কী সে উপভোগ করে শুধুই ইসলামের কষ্ট হওয়াটাকে? শাায়লার কাছে মনে হয় কখনো কখনো যে হ্যাঁ, সে ইসলামের কষ্ট হওয়াটাকে খুবই উপভোগ করে মনে মনে। আবার এমনও হয় যে শাায়লা ইসলামের কষ্টগুলোকে স্পর্শ করে নিজেও এক ধরনের কষ্টের দ্বারা স্পৃষ্ট হয়। বুকে তখন কী রকম যেন ব্যথা লাগে। ইসলামের করুণ হয়ে আশা মুখখানাকে শাায়লার খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করে। শাায়লা ইসলামের সঙ্গে এই নিয়ে মাঝে মাঝে কথাও বলে। শাায়লা কখনো কখনো নিজের ভেতরকার দ্বন্দ্বে জর্জরিতও হতে থাকে। কিন্তু সে সবকিছুই লুকিয়ে রাখতে পারে। বাইরের কারোর পক্ষে সেটা বোঝা একেবারেই অসম্ভব। শাায়লা বলে, নিষ্ঠুর বলে মনে হয় আমাকে তোমার?হয়। ইসলাম ম্লান হাসে। কিন্তু কেন এমন করো। না এবং হ্যাঁ এর মাঝখানে তুমি পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকো শাায়লা । আমি সহ্য করি এবং ধৈর্যও ধরি। কিন্তু কতো আর সহ্য করা আর ধৈর্য ধরা যায়?
আমি কী করবো, বলো? শাায়লা উত্তর দেয়। আমিতো আমাকে তৈরি করে তুলি বারবার। তারপর সেই তৈরি করা জিনিসটা মড়মড় করে ধসে পড়ে। আমি কখনো কখনো তোমাকে তোমার বাসা থেকে যখন তুলতে যাই তখন মোবাইলে তোমাকে বলি, ইসলাম আমি! তুমি তখন আমাকে জিজ্ঞেস করো, তুমি এখন কোথায়, শাায়লা? তুমি যখন আমাকে ‘তুমি এখন কোথায় শাায়লা ’ বলে প্রশ্ন করো তখন আমার খুব ভালো লাগে। আমি কান পেতে তোমার এই উদগ্রিব হওয়া প্রশ্নটা শুনি। তোমার কী কী আমার ভালো লাগে এবং তোমার মতো কিছু আমার ভালো লাগে সেটা আমি তোমাকে জানতেই দিই না। মেয়েরা জানতে না দিলে কিন্তু ছেলেরা বুঝতে পারে না। কিন্তু ছেলেরা জানতে না দিলেও মেয়েরা অনেকটাই বুঝতে পারে। মেয়েদের ওপর ছেলেদের অনেক ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব আছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে মেয়েরাই আছে এগিয়ে, এখানে প্রকৃতির একটা কারসাজি আছে, ইসলাম । কী একমত হচ্ছো না, তুমি? হচ্ছো তাহলে? হ্যাঁ সেটাই ঠিক। তুমি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। ইসলাম, অন্তত আমার কাছে। কিন্তু আমি জানি তুমি আরো অনেক মেয়ের কাছেই আকর্ষণীয় একজন পুরুষ। তুমি দেখতে খুব একটা হ্যান্ডসাম কেউ নও আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু তারপরও তুমি অদ্ভুত ধরনের একজন হ্যান্ডসাম মানুষ সব মিলিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে কিংবা তথাকথিত সামাজিক বিচারে যে পুরুষটিকে হ্যান্ডসাম বলে মনে হয় না। সেই বিশেষ পুরুষটির সঙ্গে মিশতে গেলে যদি তার ভেতর থেকেই আস্তে আস্তে একজন চমৎকার হ্যান্ডসাম মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে তাহলে সেটা কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তুমি সে রকমই একটা ভয়ঙ্কর মানুষ। কক্সবাজার সাগর পাড়ে তোমার একজন বান্ধবী রাবেয়ার সঙ্গে সাগরতীরে সাঁতার কাটার সেই গল্পটি তখন, কখনো কখনো, আমার মনে পড়ে। তুমি সাঁতার কাটতে কাটতে রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলে যে সেই সাগরে কোন ভয় পাওয়ার মতো প্রাণী আছে কিনা? কী উত্তর দিয়েছিলেন তোমাকে রাবেয়া? রাবেয়া বলেছিলো, হ্যাঁ আছে এবং সেটা হলে তুমি। ঠিকই বলেছিলে রাবেয়া। তুমি ভীষণ সুন্দর রকমের ভয়ঙ্কর একজন মানুষ, ইসলাম। আমি তোমার কাছে থাকলে কেমন যেন গলে যেতে থাকি। আমি ভেতরে ভেতরে যতোই গলতে থাকি, বাইরে বাইরে আমি ততোই ঋজু হয়ে ঢাকতে থাকি নিজেকে। সেটা তুমি একেবারেই বুঝতে পারো না। আমাকে তোমার কাছে কঠোর বলে মনে হয়। আমাকে তোমার কাছে নিষ্ঠুর বলেও হয়তো বা মনে হয়, ইসলাম। যা হোক, তোমার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলি, আমি এখন তোমার বাসার সামনে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। নেমে এসো তুমি। তখন তুমি বলো, এসে গেছো তুমি? আমি নামছি, সেটা তো হচ্ছেই শাায়লা । কিন্তু তুমি একটু উঠে আসবে না? তখন আমি বলি, না, না, দেরি হয়ে যাচ্ছে। ইসলাম। তুমি তাড়াতাড়ি নেমে আসো। আমি গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছি। ইসলাম তুমি যখন জোরাজুরি করো কোন বিষয়ে আমি তখন অনেক সময়ই ঠিক কথা বলে উত্তর দিতে পারি না। যেমন ধরো গাড়িতে থাকলে সামনে ড্রাইভার থাকে। ড্রাইভার সবসময় উৎকণ্ঠ হয়ে থাকে আমি কার সঙ্গে টেলিফোনে কী বলি? ড্রাইভাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শয়তান হয়। আমি শুধু বলতে থাকি, ঠিক আছে পরে কথা হবে। তুমি নেমে এসো। তুমি খুব মনক্ষুণœ হওয়ার জন্য তখনই তৈরি হয়ে যাও। তুমি মনক্ষুণœ হও। আমি কী করবো বলো, ইসলাম। আমি তো আসলেই কখনো কখনো তোমার বাড়িতে চলে যেতেই চাই। কিন্তু যাওয়া হয় না। কিন্তু এমন তো হতে পারে না যেতে না যেতে একদিন সত্যিই আমি তোমার ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হবো। তোমার সিঁড়ির গোড়ার কলিং বেলটার বাটনে টিপ মারবো। যদি কলিং বেল নষ্ট থাকে তাহলে কোলাপসিবল গেটটার তালাটাকে ঠকঠক করে নাড়াতে থাকবো। আমার তালা নাড়ানোর শব্দে তোমার বাড়ির সামনের গাছগাছালিগুলোর পাখিগুলো হঠাৎ করে কিচিরমিচির করে উঠবে। এক টুকরো বৃষ্টি ভরা মেঘ হয়তো তখন নেমে আসবে খুব নিবিড় করে তোমার বাড়ির চারপাশের জমে থাকা সবুজগুলোর ওপর। ওরা আর্দ্র হয়ে উঠবে বৃষ্টি ভরা মেঘের স্পর্শে। আমি তোমার বাড়ির সামনের রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকি। গাছের সবুজতাগুলো আমার সঙ্গে কথা বলে। মেঘগুলো কুশল শুধায়। আমি এক টুকরো মেঘ দিয়ে আমার গ্রিবায় জমে ওঠা ঘাম মুছে ফেলি। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই, রাস্তার পাশে ফুটপাত এবং তার পরেই একটি ড্রেন, যেমনটি আমাদের ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে প্রায় চোখে পড়ে। আমাদের শহরগুলোর ড্রেনের ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক মানের নয়। ড্রেনটির পরেই তোমার বাড়ির শুরু।
ড্রেনটিকে হঠাৎ করে একটি পঙ্কের নদীর মতো মনে হয় আমার কাছে। দেখি কতো আবর্জনা আর অকথ্য সব জিনিসপত্র ভেসে যাচ্ছে সেই পঙ্কের নদী দিয়ে। আমার সমস্ত শরীরটা ঘিনঘিন করে ওঠে ইসলাম। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সেই পঙ্কের নদীতে যখন ধস নামে সেটা এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে ওঠে। তখন শুধু ধসই নামে না, তখন সেই পঙ্কের নদীতে কতো মড়া ভেসে যায়। কাদের মড়া তারা আমি জানি না, ইসলাম। আমার সমস্ত শরীর তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ভিজে ওঠে, প্রায় আর্দ্র হয়ে ওঠে অজান্তে। আমার বগলটা ভিজে যায়। একদিন আমি রাবেয়ার বগল ভিজে যাওয়া ঘামের গন্ধ পেয়েছিলাম তোমার ঘাড় আর স্পন্ধের কাছ থেকে। আমি তোমাকে বলিনি। সেই গন্ধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি খানিকটা কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। খুব যে কটু ছিলো সেই গন্ধ তা না, ইসলাম। তবুও একটি মেয়ের বগলের গন্ধ তো। একটি মেয়ে হয়ে আমার কাছে সেটা তেমন একটা সহনীয় বলে তো মনে হবে না। মনে করো, আমারই একজন ছেলেবন্ধুর বগলের গন্ধ কি তোমার কাছে খুব একটা ভালো লাগবে। লাগবে না। না, তুমি আবার ভেবে বসে থেকো না গোপনে গোপনে আমার একজন ছেলে বন্ধু আছে যা আমি এর আগে কখনো তোমার কাছে বলিনি । সত্যি আমার কোন ছেলে বন্ধু নেই। কিন্তু আমার অনেক মেয়ে বন্ধু আছে। অন্তত ছিলো। যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তখন। হল জীবনে মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে হৈচৈ করতাম, আড্ডা মারতাম যার কোন দিনরাত ছিল না। এই ইশরাত, মেয়েরা কিন্তু নোংরা হয় খুব, সেটা তোমরা ছেলেরা তেমন একটা জানতে পারো না। বিশেষ করে হল লাইফে। কিছু কিছু মেয়ে কী যে নোংরা হয় যা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। তুমি তো আর কখনো মেয়েদের বাথ রুমে যাওনি, কী করে বুঝবে সেই বাথরুমের পরিস্থিতিটা। আমার এখনো ঘিনঘিন করে ওঠে শরীরটা। আমার এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় দুপুরে ভাত ঘুম দিয়ে উঠে স্যাঁতস্যাঁতে প্রায়োন্ধকার বাথরুমে গিয়ে প্রবেশ করেছি আমি। আমি আমার শাড়ির কিংবা ম্যাক্সির দুই পাশের কিনারা টেনে ধরে সাবধানে পা ফেলে এগুচ্ছি বেসিনের দিকে। এখানে-ওখানে মেঝেতে পানি জমে আছে। একটা চাপা দুর্গন্ধ উঠে আসছে চারপাশ থেকে । এখানে-ওখানে পড়ে আছে মেয়েদের ব্যবহৃত কিছু স্যানিটারি ন্যাপকিন। রক্তাক্ত সাদা ইঁদুরের মতো। যেন পঁচে ফুলে আছে। কোথাও কালো একগোছা চুল। পানিতে ভাসা একদলা কফ বিচ্ছিরি রকম হলুদ হয়ে জমে থাকা আলো-অন্ধকারে যেন সাঁতার কাটছে। ইসলাম তুমি ভাবতেও পারবে না কী ভয়ঙ্কর নোংরা একটা বাথরুমে গিয়ে আমি এখনো নিজেকে হাঁপিয়ে উঠতে দেখি। কেন আমার এরকম হয় বলো? প্রায় প্রায় আমার এরকম হয়। আমি তখন এই নোংরা আর পঙ্কের মধ্য থেকেই ফুলের মতো ফুটে উঠতে থাকি। এই ফুটে ওঠাটা এখনো যেন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি আমার জীবনে। এখনো যেন নোংরা আর পঙ্ক লেগে থাকে আমার শরীরে, ইসলাম। না , ইসলাম, সব মেয়েই নোংরা না। মেয়েরা সুন্দরও। তবে তারা সকলেই পঙ্ক থেকে, নোংরা থেক ফুটে উঠতে থাকে। এই ফুটে ওঠাটা কখনো সম্পূর্ণ হয়, কখনো হয় না। আমি তোমাকে যখন খানিকটা সম্মতির মতো কিছু একটা জানান দিই, তখন মনে হয় পঙ্ক থেকে আমার ফুটে ওঠাটা এই বুঝি সম্পূর্ণ হলো। কিন্তু তারপরই কেন জানিনা আমার মনে হতে শুরু করে , না আমার ফুটে ওঠাটা একেবারেই এখনো সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি। আমি এখনো সম্পূর্ণ ফুটে উঠিনি। আমার শরীরে এখনো নোংরা লেগে আছে।
২.
শাায়লা ইসলামকে বলে, তোমাকে বলিনি, সেদিন কিন্তু আমি তোমার সিঁড়ির গোড়ার কোলাপসিবল গেট পর্যন্ত ওঠে গিয়েছিলাম। কলিং বেল বাজেনি ইলেকট্রিসিটি ছিলো না বলে। তালা দিয়ে ঠকঠক করেছিলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু তুমি শুনতে পাওনি। ভাগ্যিস তুমি সেদিন শুনতে পাওনি। সেদিন আমি একটি অটোরিকশায় গিয়েছিলাম তোমার বাড়িতে তোমাকে তুলে নেবার জন্য। অটোরিকশার ড্রাইভার তো আর আমাকে চেনে না কিংবা জানেনা আমি কার কাছে যাচ্ছি। সাহসটা কী সেই কারণেই হয়েছিলো আমার? আমার নিজের ড্রাইভার থাকলে হয়তো উঠতাম না সেদিন আমি। কী করে উঠতে পারতাম বলো। বেশিরভাগ ড্রাইভারই তো দুষ্টু প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারা মনিবের নানা কাজকে লক্ষ্য করে এবং সেই সম্পর্কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে। এক সময় আমি আর তালা দিয়ে ঠকঠক করাটাকে দীর্ঘায়িত করলাম না। আর একটু ঠকঠকালেই তুমি কিন্তু শুনতে পেতে। তুমি যদি শুনতে পেতে আর আমি যদি তোমার সেই নির্জন ফ্ল্যাটে যেতাম তাহলে তুমি কী করতে ইসলাম? তুমি এমন কী কথা বলতে আমাকে যে কথা নিতান্তই বলবার দরকার পড়ে তোমার সেই আমাকেই। এমন কী কথা তোমার আছে যা কিনা কেবল আমাকেই শুনতে হবে বলে তুমি কেবল ভাবো। আমার কী তখন শরীরটা আর্দ্র হয়ে উঠতো ধীরে ধীরে? আমার গ্রিবায় জমে ওঠা স্বেদগুলো তখন কি ঝলমল করে উঠতো তোমার চোখের আলোয়? আর আমার অন্তরের শব্দগুলো কী তখন বাতাসের শব্দের মতো শি শি করে বেরিয়ে আসতো আমার কণ্ঠ দিয়ে? কেন ইসলাম গাড়িতে যখন আমরা যাই তখন উইন্ডস্ক্রিন নামিয়ে নিতেই যে শিৎকালে বাতাসের কাছ থেকে ঝরে পড়ে তা কি তুমি কখনো খেয়াল করোনি? একদিন রাত্রিতে আমাদের বাড়ির ছাদে গর্ভবতীর মতো নেমে এসেছিলো একটা পূর্ণিমার চাঁদ, তার কথা কি তুমি একেবারেই ভুলে গেছো! এই পূর্ণিমাটাই গর্ভবতী হওয়ার আগে একদিন আমাদেরই বাড়ির ছাদে এসে খুব করে চিৎকার করেছিলো। তোমার কী সেই কথা মনে নেই, ইসলাম?

0 comments:

Post a Comment