Monday, July 11, 2016

জ্ঞানভিত্তিক সমাজের সন্ধানে




জ্ঞানভিত্তিক সমাজের সন্ধানে
আলী ফোরকান
 যে কোনো উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা সম্পদ। তবে সে জনসংখ্যাকে দক্ষ  কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া  উন্নয়নের স্বার্থে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের (ইউআইটিএস) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এরকম মন্তব্যই করেছিলেন। কারন আগে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হতো, আর আজ জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী প্রাধান্য পাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য হতে হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কার্যকর সমন্বয় ও সহযোগিতাই হবে ভবিষ্যতে অর্থনীতি ও উন্নয়নের চালিকা শক্তি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিশ্বায়নের এই যুগের প্রেক্ষাপটে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল বলেছিলেন, ঞযব নধঃঃষব ড়ভ ঃযব ভঁঃঁৎব রিষষ নব নধঃঃষব ভড়ৎ ঃধষবহঃং. বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠনের জন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে নিজেদের প্রয়োজনেই। বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। বিশ্বায়নের কিছু কুফল থাকলেও এর সুফলও রয়েছে, যদি সুফলের দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তাহলে এর সুবাদে গোটা বিশ্ব এক পরিবারে পরিণত হতে পারে। এতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং জ্ঞানেরও বিনিময় হবে। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের সুফল পাবে সবাই। চেষ্টা না থাকলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার সমূহ সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো যাবে না। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দ্রুত অপসারণ করা তাই অপরিহার্য। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার অন্যতম হলো সরকারি নীতি এবং শিক্ষাঙ্গনে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। উন্নত দেশে গবেষণার ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। আমাদের দেশে এই খাতে বরাদ্দ খুবই কম। এ ছাড়া উদ্ভাবক এবং উদ্ভাবনকেও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় না। জ্ঞান-বিজ্ঞান লালনে আমাদের উদাসীনতা আছে। জ্ঞান বিকশিত করার ক্ষেত্র শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষাঙ্গনকে বলা হয়, ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনগুলোতে নৈরাজ্য বিরাজমান থাকায় সেখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অšে¦ষণে ব্রত হওয়ার পরিবর্তে ভিন্নতর কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, জ্ঞান ও প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি বা দেশের পরিচয়ের মাপকাঠি। দক্ষতাগুণে ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এই সুবাদে সংস্থাগুলোর নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তেও তারা প্রভাব বিস্তার করছে। যা তাদের দেশের স্বার্থকে সংরক্ষিত করছে। দক্ষ জনশক্তি রাষ্ট্রের সম্পদ। পশ্চিমা দেশগুলোতে জনসংখ্যা হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকায় সেসব দেশে কর্মক্ষম লোকের অভাব দেখা দিয়েছে। শূন্যতা পূরণের জন্য ওই দেশগুলোকে বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ লোক নিতে হচ্ছে, এতেও চাহিদা পূরণ না হওয়ায় অবসরপ্রাপ্তদের বিভিন্ন পদে পুন:নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এক তথ্যে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ লাখ লোকের প্রয়োজন হবে। ২০৬০ সালের মধ্যে প্রয়োজন হবে ৪ কোটি ৬০ লাখ লোক। আমাদের মতো জনাধিক্যের দেশের জন্য এটা একটা সুখবর। এ সুযোগ কাজে লাগাতে সক্ষম হলে জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশের কর্মসংস্থান হবে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে। এতে একদিকে মোটা অংকের রেমিট্যান্স যেমন আসবে, অন্যদিকে উন্নত দেশে কাজে লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশ গঠনেও অবদান রাখতে সক্ষম হবে অনেকেই। প্রতিবেশি দেশ ভারত এই সুযোগ ইতিমধ্যেই কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বায়নের সুফল পেতে হলে উন্নত প্রযুক্তি শেয়ার করতে হবে অবশ্যই। বর্তমানে জ্ঞান আহরণের অপরিমেয় সুযোগ বিদ্যমান। তথ্য প্রযুক্তির অসাধারণ উন্নতি এই সুযোগ হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা দক্ষতা ইতিমধ্যে অর্জন করলেও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তা অপ্রতুল। জ্ঞানের ঘাটতি পূরণ করতে হলে জ্ঞান অšে¦ষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর তাহলেই কেবল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। 


0 comments:

Post a Comment