পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি কার্যকর হউক
আলী ফোরকান
জনসংখ্যা সমস্যা। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা খুব অচিরেই ভয়ংকর সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জনসংখ্যা সমস্যাকে খুব বড় সমস্যা নয় বলে মন্তব্য করেছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই ছোট ভূখন্ডে কত লোক বাস করে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের আছে কি? জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত সঠিক। প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ভেতরই বেশি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, চরাঞ্চল ও বস্তিতে প্রায় পরিবারেই ৫ থেকে ১০টা শিশু সন্তান দেখতে পাওয়া যায়। হতদরিদ্র এসব পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে সুন্দর সরকারি স্বাস্থ্য অবকাঠামো থাকলেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কাছে কমই পৌঁছে। আমাদের রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স, ইউনিয়ন সাবসেন্টার, স্যাটেলাইট ক্লিনিক। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে, গ্রামে রয়েছে মাঠকর্মী। এতসব কিছু থাকার পরও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি কার্যত দৃশ্যমান ও ফলপ্রসূ নয়। কর্মসূচি কাগজে-কলমে বক্তৃতা-বিবৃতিতে আছে, বাস্তবে নেই। আশির দশকে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে বিএভিসের কার্যক্রম ছিল। ভেসেকটমি লাইগেশনের বড় বড় ক্যাম্প বসত। এখন এসব কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়। প্রচার-প্রচারণাও নেই। প্রত্যন্ত জনপদের সক্ষম দম্পতিদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সচেতন করতে হব। কনডম নিরাপদ জš§নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নয়। স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা এক সন্তান বা দুই সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অনেক দেশেই এরকম উদাহরণ রয়েছে। রেশন কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, ফেয়ার প্রাইস কার্ড, হেলথ কার্ড, স্বাস্থ্য বীমা (যদি থাকে) ইত্যাদি সরকারি সেবা কার্যক্রম সর্বোচ্চ দুই সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। নেতিবাচক দিকগুলোকে আমলে নিয়ে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসংখ্যা সম্পর্কে ইমাম প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। পুস্তিকা বিতরণের পাশাপাশি ইমাম সাহেবদের শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বক্তব্য দিতে হবে। জনসংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো সফল হবে না। সম্পদহীন দরিদ্র দম্পতিরা তাদের সন্তানদেরই অধিক সম্পদ মনে করেন। এই সন্তানরা খুব কম সময়েই তাদের সম্পদে পরিণত হয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে এসব শিশু-কিশোর শহরে আসে কাজের সন্ধানে। সবার ভাগ্যে তো আর ভালো কাজ জোটে না। অনেকেই অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। গ্রামে এক সময় যে সুফলা ধানী জমি ছিল, অধিক জনসংখ্যার চাপে তার অনেকটায় এখন বসতবাড়ি। গ্রামে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। রয়েছে সম্পদ গড়ার অস্থির প্রতিযোগিতা। নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে। দুর্নীতি ব্যাপক আকার নিচ্ছে। শহরগুলোতে একই দৃশ্য। জনসংখ্যাকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রচলিত কার্যক্রমকে জোরদার করার পাশাপাশি জনগণকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ কার্যক্রম। বর্তমানে টেলিভিশন একটি জনপ্রিয় প্রচার মাধ্যম। বিটিভিতে যে রকম আলোচনা ও নাটিকা নিয়মিত প্রচার করা হয়, বেসরকারি সব টেলিভিশনেও এসব অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচারের জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকা উচিত। প্রিন্ট মিডিয়াসহ সব মিডিয়ারই জনস্বার্থে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা উচিত। পরিশেষে বলব, কোন সমস্যা ভয়ংকর আকারে আবির্ভূত হওয়ার আগেই তার লাগাম টেনে ধরা উচিত। দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন হোক। আমাদের প্রিয় জš§ভূমি সবার জন্য হয়ে উঠুক সুন্দর, মনোরম ও বাসযোগ্য।
0 comments:
Post a Comment