মাদক: নিরাপদ ঢাকা-সিলেট রুট
আলী ফোরকান
মাদক পাচারের অন্যতম রুট এখন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এ রুটে মাদক চোরাচালান বেড়েছে আশংকাজনকভাবে। অভিনব কায়দায়, নতুন নতুন কৌশলে মাদক পাচারকারী চক্র যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এ রুটে আসছে ইয়াবা,হেরোইন কোকেন, ফেনসিডিল, প্যাথেড্রিন এবং তা চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় । প্রকাশিত তথ্যানুসন্ধানী সংবাদের তথ্য মতে, সীমান্ত পেড়িয়ে মাদক দ্রব্য ভৈরব পর্যন্ত আসার পর অন্তত ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীর হাত বদল হয়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছে। আর এ চেইনের অন্যতম ভূমিকা পালন করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। এসব সোর্সের বেশিরভাগই বড় বড় মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর সোর্স ছাড়া পুলিশ বা র্যাবের কাজ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। প্রধান দুটি কারণেই এরা সোর্সের কাজ করে থাকে এবং তথ্য দিয়ে থাকে। একটি হল নগদ অর্থের লোভ এবং তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সোর্সরাই মূলত বড় বড় মাদকের চালান আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে। ছোট ছোট চালান আটকের তথ্য দিয়ে এরা বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করে এবং বড় চালানের ব্যাপারে তারা গোপনীয়তা রক্ষা করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদক পাচারকারীদের নিয়োজিত সোর্সরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চেকপোস্ট ও টহল পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তাদের সতর্ক করে দিচ্ছে। চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের অভিযান দেখলেই সোর্সরা মুঠোফোনে সেই খবর মাদক ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিচ্ছে। সোর্সদের মাধ্যমে সতর্ক হয়ে তারা তখন পরিবহন এবং গন্তব্যের পথ পরিবর্তন করে। জানা গেছে, তাদের এ ঈঁদুর-বিড়াল খেলার পেছনে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যও জড়িত রয়েছে। বর্তমানে এ রুটটি দিয়ে প্রচুর পরিমাণ মাদক পাচার হচ্ছে যা, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানার পরিসংখ্যানই অনুমান করা যায়। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এ সড়কে ভৈরব থেকে রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া পর্যন্ত ১৩টি স্পটে সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে আসা মাদক দ্রব্যের চালান ডেলিভারি দেয়া হয়ে থাকে। এ স্পটগুলো হলÑ মর্জাল, ইটখোলা, ভেলানগর, সাহেপ্রতাব, পাঁচদোনা, মাধবদী, বাগবাড়ী, ছনপাড়া, পাঁচরুখি, ভুলতা-গাউছিয়া, তারাব ও মুড়াপাড়া। ওই ১৩টি স্পটে নিয়মিত পুলিশ টহল দিলেও মাদক চোরাচালান থামানো যাচ্ছে না। ভৈরব থেকে পাঁচদোনা পর্যন্ত একটি প্রভাবশালী মহল মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কথিত আছে, এখানে বেশ কিছু সংখ্যক সুন্দরী যুবতী মাদক পাচারের কাজে নিয়োজিত আছে। তাদের ব্যবহার করে দূর্নীতিবাজ ও মাদকসেবী কর্মকর্তাদের বশে আনা হয়। মাধবদী, বাগবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ৩ জন প্রভাবশালী। ছনপাড়া ও পাঁচরুখি, রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া এলাকা আছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী। মায়নামার ও ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল¬া জেলার বিভিন্ন এলাকা হয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক প্রবেশ করে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বাহন ছাড়াও নৌকা যোগে আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ও গোপালদী বাজারে আসে মাদক দ্রব্য। এখান থেকে বাস দিয়ে মাদকগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে থাকে। কুমিল্ল¬া জেলা পুলিশ জানিয়েছেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থানে যাবে পুলিশ।
এলাকাবাসীর দাবি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে এবং বিশনন্দী ও গোপালদী বাজারে নিয়মিত পুলিশ পোস্ট বসিয়ে চেক না করলে মাদকের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ জানান, পুলিশের নিয়মিত অভিযানের বাইরেও মাদকের ব্যাপারে বিশেষভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং মাদকের মামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশাকরি এ মহা-সড়কে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকুক।
0 comments:
Post a Comment