ইয়াবায় সয়লাব দেশ
আলী ফোরকান
সারাদেশে শহর এবং গ্রামেও পৌঁছে গেছে মরণ নেশা ইয়াবা। এ ব্যবসা এক সময় গোপনে হলেও এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। হাটবাজার, পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও ইয়াবা সহজে পাওয়া যাচ্ছে। মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন সহজে খদ্দেরদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের ভেতর মাছ- মাংস, শাকসবজির দোকানে যেভাবে খদ্দেরদের ভিড়, ঠিক সেভাবেই যেন আশপাশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজার খদ্দেরদের ভিড় দেখা যায়। কাঁচা বাজারে জমজমাট এত খদ্দের দেখে কারো বোঝার উপায় নেই এখানে চলছে মাদকের ব্যবসা। কাওরান বাজারস্থ তেজগাও বস্তি ও মালিবাগ রেলগেট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাজার করতে যাওয়া খদ্দেরের চেয়ে মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। খিলগাঁও বাজারের মুরগিপট্টিতেও অভিন্ন চেহারা। রাজধানী ছাড়াও দেশের সবখানেই এখন সহজে যেকোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে। পুরানা পল্টনের এক ইয়াবা ব্যবসায়ী জানায়, ঢাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ ইয়াবার চালান পৌছে যাচ্ছে। জিপি, আর সেভেন, সিট, আইস ও চম্পা নামের ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চলছে। এসব ইয়াবা মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে বলা হলেও এর অর্ধেকেরও বেশি তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার গোপন কারখানায়। গত কয় বছরে দুটি কারখানার সন্ধানও পেয়েছে পুলিশ। ওই ব্যবসায়ী আরো জানায়, প্রতিটি ইয়াবা ট্যাবলেট আড়াইশ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এগুলোর কোয়ালিটি ভিন্ন ভিন্ন। আবার সরাসরি মিয়ানমার থেকে কিছু ইয়াবা ঢাকায় আসে। সেগুলোর দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা প্রতিটি বিক্রি হয়। নিউমার্কেট এলাকায় ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজার রীতিমতো হাট বসে। ধনাঢ্য ব্যক্তির তরুণ- তরুণীরা দামি গাড়ি হাঁকিয়ে যথাসময়ে যথাস্থানে পৌঁছে এবং চোখের পলকে লেনদেন করে দ্রুত চলে যায়। রাজধানীর পূর্ব মাদারটেকের শরীফাবাগ ও এলাহীবাগ এলাকাবাসী চুরি, মাদকসেবীদের উৎপাত, ছিনতাইসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে লিখিতভাবে অবহিত করেও প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। নির্জন এলাকা হওয়ায় সন্ধ্যার পরেই শুরু হয়ে যায় অপরাধীদের উৎপাত। চুরি আর মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয় এলাকাটি। প্রকাশ্যে চলে মাদক কেনাবেচা। বিশেষ করে পূর্ব মাদারটেক এলাহীবাগ সড়কের গ্যারেজগুলোতে চলে তাদের অবাধ বিচরণ। এ সড়কে যাতায়াতকারীদের পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে। দিনের বেলায় শিক্ষার্থী মেয়েদের যাতায়াতের সময় শিকার হতে হয় নানা বিড়ম্বনায়। শরীফাবাগের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সবসময়ই থাকতে হয় চরম দুশ্চিন্তায়। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বেশিদিন মেয়েদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক।
0 comments:
Post a Comment