মাদকাসক্ত থেকে ফেরার গল্প
আলী ফোরকান
দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা। বাড়ছে মাদকাসক্তও। তবে ইতিমধ্যে অনেকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দে চিকিৎসা নিচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরের আনাচে-কানাচে, বাসাবাড়িতে গড়ে উঠছে মাদক ব্যবসার স্পট। দিন দিন এ স্পটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। যে ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তার সাথে তার গোটা পরিবার জড়িয়ে পড়ছে। স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং পুত্রবধূ থেকে শুরু করে নাতি-নাতনী পর্যন্ত এ ব্যবসা করছে। নগদ অর্থের এ সর্বনাশা লোভ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এমনকি, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও এ ব্যবসার সাথে যুক্ত হচ্ছে অনেকে। প্রকাশিত সংবাদের সুত্র মতে,একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপে জানা যায়, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ছত্রছায়ায় থেকেই তাদের অনেকে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তারপরও এমন কোন দিন নেই যেদিন র্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়নি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে ইয়বা,ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। পূর্বে ৫/১০ বোতল ফেনসিডিল এবং যতসামান্য গাঁজা, হেরোইন ও মরফিন ইনজেকশনসহ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হতো। এখন আটক করা হয় হাজার হাজার ইয়বা, হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল, কয়েক কেজি গাঁজা ও হেরোইন এবং শত শত পিস মরফিন ইনজেকশনসহ। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পরে তারা আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ১৫ হাজারের ওপর মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এতে একটি পরিবারের ১০ জন সদস্য পর্যন্ত এ ব্যবসার সাথে জড়িত। ঐ সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন নেশা করছে কমপক্ষে ৭/৮ হাজার মাদকসেবী। ১০ হাজারের ওপর রয়েছে যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাদক সেবন করে। দক্ষিণাঞ্চলে মাদকসেবীদের প্রথম পছন্দ ফেনসিডিল সিরাপ। এর পরের স্থানে রয়েছে ইয়বা,হরোইন, গাঁজা ও মরফিন ইনজেকশন। মাদকসেবীর মধ্যে বেশিরভাগ উচ্চবিত্ত এবং নি¤œশ্রেণীর ঘরের সন্তান। সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার। মধ্যবিত্ত ও নি¤œশ্রেণীর পরিবারের সন্তানরা মাদক সেবনের জন্য টাকা না পেয়ে তারা ছিনতাই পর্যন্ত করছে। এমনকি ঘরের মালামাল বিক্রি করে নেশা করছে। এ জন্য পিতা-মাতা তাদের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে সন্তানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা পর্যন্ত দায়ের করছে। এমনকি মাদকাসক্ত সন্তানকে পুলিশে সোপর্দের মত একাধিক ঘটনাও ঘটছে দক্ষিণাঞ্চলের থানাগুলোতে। মাদকাসক্ত অনেকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পরিবারের কাছে আত্মসমর্পণও করছে। তবে এর সংখ্যা খুবই নগণ্য। ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত সুমন নেশা ছেড়ে দক্ষিণাঞ্চলের মাদকাসক্ত যুবকদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে বরিশাল ক্লাব রোডে গড়ে তুলেছেন হলিকেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ ।ঐ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দু’শতাধিক মাদকাসক্ত যুবক স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। নগরীর সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সুমন জানান, কলেজ জীবন থেকে বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শে শখের বশে একটু একটু করে নেশায় তার হাতেখড়ি হয়। প্রথমে গাঁজা দিয়ে শুরু হয় নেশা। গাঁজার সাথে সাথে ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরে গাঁজা, ফেনসিডিল ও বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে মরফিন ইনজেকশন নিয়ে নেশা করত সুমন। এক পর্যায়ে সুমন তার পরিবারের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ঐ সময় তার পরিবার থেকে তাকে ভারতে পাঠানো হয়। সেখানে তার রক্ত পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর সুমন দেশে ফিরে ঢাকাস্থ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দে র আহ্বানে ভর্তি হয়। সেখানে তিন মাসের কোর্সে সুমন সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর সুমন বাসায় না ফিরে ঐ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৭ মাস সেখানে কাজ করে নতুন জীবন ফিরে পায়। সে দক্ষিণাঞ্চলের কমপক্ষে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত ১০ হাজার যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ২০০৭ সালে গড়ে তোলেন হলি কেয়ার মাদক নিরাময় কেন্দ । বর্তমানে সেখানে ১৫ জন মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় বিশেজ্ঞরা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও সাক্ষীর অভাবে ছাড়া পেয়ে সে পুনরায় ঐ পেশায় আত্মনিয়োগ করছে। মাদকাসক্তি কমাতে বিশেষজ্ঞরা মাদক ব্যবসায়ী নির্মূল করার উপর জোর দেন।
0 comments:
Post a Comment