Monday, August 1, 2016

মাদক: বাড়ছে লাশের সংখ্যা

মাদক: বাড়ছে লাশের সংখ্যা
আলী ফোরকান
দেশে দিন দিনই মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে লাশের সংখ্যা। মাদকের ছোবলে আমাদের অতি চেনা মুখগুলো অকালে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশিত মাদক সংক্রান্ত সংবাদ সচেতন পাঠককে ভাবনায়ই ফেলে। কারন সংবাদ গুলো মোটেও সুখকর নয়। এ অবস্থায় আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনে মাদকের ব্যবহার সবাইকেই উদ্বিগ্ন করেছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। এ থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯০ সালের ২০নং আইন) প্রণীত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ওই আইন ১৯৯০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ২(ঠ) ধারায় মাদকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে মতে মূলত অপিয়াম পপি বা তৎনিঃসৃত আঠালো পদার্থ; আফিম; আফিম থেকে উদ্ভূত মরফিন, কোডিন, হেরোইন ইত্যাদি এবং এদের ক্ষারগুলো; শতকরা ০.২%-এর অধিক মরফিনযুক্ত যে কোনো পদার্থ, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি আফিমের সমধর্মী দ্রব্য যথা- পেথিড্রিন, হাইড্রোমরফিন, ডিমেরাল, বেটাপ্রোডাইন ইত্যাদি, কোকা পাতা এবং তা থেকে উদ্ভূত সব দ্রব্য, কোকেন এবং ০.১%-এর অধিক কোকেনযুক্ত যে কোনো পদার্থ অথবা কোকেনের যে কোনো ক্ষার, চরস, হাশিশ, গাঁজাগাছ, গাঁজা, ভাংগাছ, ভাং, গাঁজা বা ভাং সহযোগে প্রস্তুত যে কোনো পদার্থ, অ্যালকোহল এবং ০.৫%-এর অধিক অ্যালকোহলযুক্ত যেকোনো পদার্থ, রেক্টিফাইড স্পিরিট এবং তৎসহযোগে যে কোনো ওষুধ বা তরল পদার্থ, বিয়ার, বারবিচুয়েটস, তাড়ি, পচুই, মেথিলেটেড স্পিরিট ইত্যাদি দ্রব্য মাদক হিসেবে পরিচিত। ভারতে তৈরি ফেনসিডিল সিরাপ আমাদের দেশে মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহƒত হয়ে আসছে। এই সিরাপের লেবেলে তা কাশির সিরাপ বলে উল্লিখিত আছে।
এই সিরাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আফিম থেকে উদ্ভূত কোডিন, এই কারণেই ফেনসিডিল সিরাপ সেবন করলে মাদকতা আসে। তাই ফেনসিডিল সিরাপ মাদক হিসেবে পরিচিত। অভিভাবকরা আজ চিন্তিত তাদের সন্তানদের মাদকাসক্তি নিয়ে। মাদকের হিংস্র ছোবল থেকে সারা জাতি চায় আত্মরক্ষা করতে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ হয়নি বলেই আজ মাদক নিয়ে এত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। মাদক সেবনের কুফল সম্পর্কে মহাসমারোহে আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। বিভিন্ন এনজিও মাদক সেবন নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। মাদক পাচার, বহন ও ব্যবহারের বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে। তবু মাদক ব্যবহার কমেনি। ফেনসিডিল, গাজা, হিরোইন, ইয়াবা, প্যাথেডিনের ব্যবসা রমরমা। নারী, পুরুষ উভয় শ্রেণীর মধ্যে মাদক সেবন প্রবণতা বাড়ছে। সাধারণ কৌতূহল থেকে শুরু হয়। পরে আসক্তি তীব্র হয়ে সাধারণ জীবনযাপন বিপন্ন হয়। নিঃসঙ্গতা ও বেকারত্ব থেকেও মাদক সেবনে আসক্তি জšে§। ডিশ এ্যান্টেনার যুগে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন এদেশের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীকে সমকামী, নেশাগ্রস্ত ও পশুপাখি সহযোগে বাস করার মানসিকতা তৈরী করছে। ঘুমের ওষুধ, হিরোইন, গাজা, এমনকি কুকুর মারার ইনজেকশন সেবন করছে মাদকসেবীরা। বিষ শরীরে ঢুকিয়ে নেশা করার মতো অভ্যাস গড়ে উঠছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। এদেশে ইংরেজরা বিনামূলে চা বিতরণ করে চাপায়ী সৃষ্টি করেছিল। অনেক স্থানে বিনামূল্যে মাদকদ্রব্য বিতরণ করে মাদকাসক্ত একটি শ্রেণী তৈরী করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় মাদক বেচা-কেনা হরদম হচ্ছে। শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্তানরাই অধিক মাদকাসক্ত। ধনী শ্রেণীর মেয়েরা লেখাপড়া নিয়মিত না করে মাদক সেবন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। নেশার রাজ্যে আজ হাবুডুবু খাচ্ছে দেশের যুব সমাজ। মাদকের কারণেই পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘটছে সহিংস ঘটনা। বেড়েছে চুরি, ডাকাতি,রাহাজানি,ছিনতাই, চাঁদাবাজি। তবে মাদক বিক্রেতাদের যে পুলিশ একেবারেই ধরছে না তা নয়। মাঝে মাঝে মাদক সহ ২/৪ জনকে গ্রেফতার করা হলেও মাদক বিক্রেতারা আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে এসে পূণরায় ব্যবসা পরিচালনা করছে। 

0 comments:

Post a Comment