মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রুখতে হবে
আলী ফোরকান
দিনাজপুরের হাকিমপুরের মাদকাসক্ত শিশুর পিতা মাদকব্যবসায়ী। তার ক্রেতারা গোপনে একটু একটু করে মাদক খাওয়ায়ে শিশুটিকেও মাদকাসক্ত করে তুলেছে। এখন প্রতিদিন আধাবোতল ফেনসিডিল না খেলে শিশুটির চলে না। দেশে মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তির বিস্তার কী ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তা উপলব্ধি করার জন্য ফেনসিডিল আসক্ত শিশুটিই একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। কয়েকদিন আগে সংবাদপত্রে রাজধানীতেও নেশাগ্রস্ত পথশিশুর সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়া একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকাসক্ত পথশিশুদের মাদক গ্রহণের চিত্র উদ্বেগজনক। বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৯১% কিশোর ও যুবক। পূর্বেকার যে কোন সময়ের তুলনায় মাদকের সর্বানাশা ছোবল রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলÑ সর্বত্রই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এখন মাদকের ব্যবসা রমরমা। বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরের সুত্র মতে, সারা দেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী চার উপজেলার অসংখ্য পয়েন্ট দিয়ে ব্যাপক হারে ফেনসিডিল আসছে। ফেনসিডিল ছাড়াও আছে মদ, গাঁজা, ভাং, হেরোইনসহ নেশা জাতীয় নানা ট্যাবলেট। মাদক চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকা এখন সারা রাত ধরে শত শত মোটর সাইকেল, মানুষের ছোটাছুটি, হাঁকডাক ও মাইক্রোবাসের চলাচলের শব্দে সরগরম থাকে। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় এলাকায় ৩০ থেকে ৪০টি ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠেছে। জানা যায়, ইতিপূর্বে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে একটি তালিকাও হস্তান্তর করা হয়েছে। যেখানে সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখন্ডে ৩২টি ফেনসিডিলের কারখানার নাম-ঠিকানা রয়েছে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের অবস্থান মাদক উৎপাদনকারী কয়েকটি দেশের খুব কাছাকাছি। অভিযোগ রয়েছে, অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসাবেও ব্যবহƒত হয়। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে এই প্রশ্নে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সীমান্তে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতবাদী তৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ সর্বতোভাবে ভারতকে সহায়তা করছে। ভারতের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত ফেনসিডিল কারখানা বন্ধের ব্যাপারেও ভারতের সহযোগিতা লাভের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্ত যাতে মাদক চোরকারবারিদের অভয়ারণ্য হয়ে না ওঠে। সে জন্য সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিতদের সতর্ক ভূমিকা জোরদার করতে হবে অবশ্যই। দেশের ভেতরেও যাতে ফেনসিডিল বেচাকেনা না হতে পারে, সে ব্যাপারে তৎপর হতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, মাদকের অবৈধ ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ল্যাটিন আমেরিকার কলম্বিয়া ও মেক্সিকো অকার্যকর রাষ্ট্রের অভিধা পেয়ছে। সময় থাকতে সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকেও। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। মাদকের ব্যাপারে প্রতিটি পরিবারকে সজাগ ও সচেতন থাকা প্রয়োজন। পরিবার ও সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠনেও সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ড.ফোরকান আলী
লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ
০১৭১১৫৭৯২৬৭
0 comments:
Post a Comment