Tuesday, August 2, 2016

মাদক :হাত বাড়ালেই মিলে

মাদক :হাত বাড়ালেই মিলে
আলী ফোরকান
মাদকের করাল গ্রাসে এখন বিপর্যস্ত দেশের সব শিল্প ও বন্দর নগরী। কোকেনের মত মূল্যবান ও ভয়ানক মাদকের চালানও আসছে বিভিন্ন বন্দর ও শিল্পনগরীর আনাচে কানাচে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃংখলা বাহিণীর হাতে আটক ও হচ্ছে, কোটি কোটি টাকার কোকেন , হিরোইন, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এসব মাদকের চালান নানা কৌশলে এখানে চলে আসছে। তবে সবচেয়ে বেশী আশঙ্কার কথা হল দেশের প্রতিটি জেলা,উপজেলা, প্রতিটি পাড়া মহল্ল¬ায় এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা। নৈতিক স্খলন ঘটছে যুব সমাজের। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী এই নেশার জগতে প্রবেশ করে জীবন ধ্বংস করছে বলে অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন। প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও রোধ করা যাচ্ছে না মাদকের রাহু গ্রাস। বরং বিভিন্ন বিভন্ন জেলা,উপজেলা,ইউনিয়ন ও গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে শীষ দিয়ে মাদক বিক্রির কারবার চলছে বলে জানা গেছে। সচেতন মহলের মতে,দেশকে মাদকের বিষাক্ত থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে শুধু প্রশাসনের অভিযান হলেই চলবে না। এজন্য প্রয়োজন একটি সামাজিক আন্দোলন। দলমতনির্বিশেষে এই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রকাশিত তথ্যানুসন্ধানি রির্পোটে জানা গেছে, দেশের মাদক ব্যবসার অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বন্দরনগরী। প্রতিদিন বিভিন্ন বন্দও ও শিল্প নগরীতে স্থল ও নৌ-পথে মাদকের বিপুল পরিমাণ চালান প্রবেশ করে। পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সিমেন্ট, বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল ও বিদেশী মদ আসছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। এইসব জাহাজ রাতের অন্ধকারে ভীড়ছে বন্দর এলাকায়। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকের সবচেয়ে বেশী ব্যবসা চলছে শহর, বন্দর, কাঁচপুর, ফতুল¬া, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায়। শুধুমাত্র রূপগঞ্জেই রয়েছে মাদকের প্রায় দুই শতাধিক স্পট। এর মধ্যে রূপগঞ্জের রুপসী, তারাবো, কাজীপাড়া, বরপা, খাতুন, হাটাবো, কাঞ্চন, কায়েতপাড়া, কুলুপাড়া, নয়াপাড়া এলাকায় রয়েছে বড় স্পট। এখান থেকে পুরো উপজেলায় মাদক সাপ্লাই দেয়া হয়। জানা গেছে, সোনারগাঁয়ে রয়েছে মাদকের প্রায় শতাধিক স্পট। লাদুরচর, জামপুর, বারদী, ফুলবাড়িয়া, পানাম, নোয়াইল, মেঘনা, বৈদ্যের বাজার,মোগড়াপাড়া এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত স্পট। এর মধ্যে মোগড়াপাড়া হচ্ছে প্রধান কেন্দ । সোনারগাঁ জাদুঘর এলাকাটিতে মাদক বিক্রি হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। গত কয়েকমাসে এখানকার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বহু মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ । এসব কেন্দে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই যুবক এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবতীও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কেন্দ্রের পরিচালক জানান, মূলত একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা নিরাময় কেন্দ্র খুলেছিলাম। কিন্তু মাদকের পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, কেন্দ্র গুলো এখন ব্যবসায়িক চিন্তাধারায় গড়ে উঠছে। জানা গেছে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতেই প্রায় দেড় শতাধিক মাদকস্পট রয়েছে। শহরের খানপুর, টানবাজার সুইপার কলোনী, শহীদ নগর ডিয়ারা, সৈয়দপুর, নগর খানপুর, হাজীগঞ্জ, তলা, ব্যাংক কলোনী, মাছুয়াপাড়া, আমলাপাড়া, নন্দীপাড়া, জামতলা, ধোপাপট্টি, পালপাড়া, ৫নং ঘাট, বৌ-বাজার, বাবুরাইল, নয়াপাড়া, জলারপাড়া, জিমখানা, নতুন জিমখানা, সূতারপাড়া, নিতাইগঞ্জ, নয়ামাটি, বালুরমাঠ, শহরের শহীদ মিনার এলাকা, ফতুল্লার কুতুবাইল, রেললাইন, কাঠেরপুল, পৌষার পুকুর পাড়, দেওভোগ, শিবু মার্কেট, নতুন ষ্টেডিয়াম এলাকা, বাড়ৈভোগ, মাসদাইর, ইসদাইর, সস্তাপুর, পুলিশ লাইন, গাবতলীসহ প্রায় প্রত্যেক মহল্লায় এখন হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থা এতটাই চরমে পৌছেছে যে, নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে প্রথমবারের মত উদ্ধার হয়েছিল বিপুল পরিমাণ কোকেন। তবে জেলায় মাদকের বাজারে বাবা হিসেবে খ্যাত ইয়াবার জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে জানা গেছে। র‌্যাব ১১ (স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী) এর অধিনায়ক জানান, জেলায় মাদক প্রবেশ করছে আশঙ্কাজনক হারে। এক কেজি কোকেনের দাম এক কোটি টাকা হলেও নারায়ণগঞ্জে কোকেন এর মত দামী মাদকের বাজারও তৈরী হয়েছে। একারনে প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় মাদক উদ্ধার হচ্ছে। এই ব্যবসা বন্ধ করতে হলে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  মাদক ও সন্ত্রাসের প্রশ্নে খুব শীঘ্রই সবাইকে এক মঞ্চে উঠে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মাদকের ভয়াল থাবা এখনই রোধ করতে না পারলে আমাদের যুব ও ছাত্র সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারী তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ জানান ,মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু পুলিশের নয়। রাজনৈতিক নেতাদের এবং সকল দলের এই প্রশ্নে এক হতে হবে। গত কয়েক মাসে মাদকদ্রব্য আইনে প্রায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা শাখা প্রতিদিনই কোন না কোন মাদক উদ্ধার করছে। তবে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। 
ড.ফোরকান আলী
লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ
০১৭১১৫৭৯২৬৭  


0 comments:

Post a Comment