Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ : সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা

পরিবেশ : সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা
আলী ফোরকান
সুজলা-সুফলা আমাদের এই বাংলাদেশ বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বন্যার জন্যে আমাদের দেশের বিস্তৃত সমতল ভূমি ভেজা থাকার কারণে উর্বর যা ফসলের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পুকুর, নদী, নালা, খাল, বিল এবং সমুদ্রে শত শত প্রজাতির মাছ রয়েছে যা আমাদের দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশী এবং বিদেশ থেকে উড়ে আসা বহু প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনসহ সারা দেশে শত শত প্রজাতির গাছ রয়েছে। হাজারো পদের বন্য ও গৃহপালিত পশু ও প্রাণী রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মাটির নিচে খনিজ সম্পদ। সারা দেশ জুড়ে যে প্রাকৃতিক সম্পদ বিদ্যমান এর মধ্যে কতটুকু সম্পদে নারীর অধিকার আছে এটা বিবেচনা করে দেখলেই পরিবেশে নারীর অধিকার কতটুকু তা বের হয়ে আসবে। এ ছাড়াও মানুষের বসবাসের জন্য বড় বড় অট্টালিকাসহ নানান পদের বসতবাড়ি, কল-কারখানা, দোকানপাট মানুষেই তৈরী করেছে সেখানেও নারীর কতটুকু অধিকার তা আমরা সকলেই জানি।। এক্ষেত্রে উন্নত দেশের এক ডলারের বিনিময়ে আমার দেশের ৭০ টাকার বিশুদ্ধ (অরগ্যানিক খাদ্য) প্রাকৃতিক সম্পদ কিনে নিয়ে গিয়ে ভোগ করছে, অথচ আমরা রাসায়নিক সার, কীটনাশক বিষ আর ফরমালিন দেয়া মাছ, মাংস ও খাদ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করছি যা একজন গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদে নারীর চেয়ে পুরুষের দখল বেশী আছে। আমরা যদি পরবর্তী প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ যথেচ্ছাচার ব্যবহার না করে একটু যতœশীল হই তবেই প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরকে সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দিতে পারবো।
এটা সত্যি যে, সোসাইটি বা বিশ্ব সমাজ গঠন ব্যতিরেকে পরিবেশ উন্নয়ন আন্দোলন সফল করা সম্ভব নয়। শব্দ দূষণ হয়ত গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কিছু বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু বায়ূ দূষণের ক্ষেত্রে এক দেশের সমস্যা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ এমনকি উন্নত দেশেও প্রভাব ফেলে বিধায় এই বিষয়টা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতাদের বেশ মাথাব্যথা আছে। তবে বিষাক্ত ও অপরিমিত মাত্রায় কিটনাশক ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটি দূষণ ও পানি দূষণ নিয়ে উন্নত দেশগুলোর তেমন চিন্তা নেই। কারণ বিষ ও সারযুক্ত খাদ্যদ্রব্য আমরা বা আমাদের শিশুরা ব্যবহার করলেও তাদের শরীরে কোন প্রভাব পড়ছে না। তবে উন্নত দেশগুলো গ্লোবালাইজেশনের নামে যে সকল দ্রব্য আমাদের দেশ থেকে আমদানী করে সেগুলো তারা উৎপাদন ক্ষেত্র থেকেই তদারকী করে বিজ্ঞানভিত্তিক মানসম্মত অরগ্যানিক বা প্রকৃতিজাত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে যাচাই করে তাদের দেশে ডলার দিয়ে পানির দামে কিনে নিয়ে যায়। ঐ সকল ভাল খাদ্য যেমন গলদা চিংড়ি, পাবদা, বাতাশী, বড় ইলিশ, বড় রুই মাছ, দেশী গরু, খাশী ও মুরগীর মাংস আমাদের দেশে ডলার মূল্যে বাজারজাত হয় বলে এদেশের সাধারণ জনগণ সেগুলো কিনে খাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আমাদের দেশ নিম্নাঞ্চল বিধায় আমাদের দূষিত মাটি থেকে বৃষ্টির পানিতে নদীনালা-খাল-বিলের পানি দূষিত হলেও এই পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। এই পানি যদি অন্য কোন দেশের নদীতে গিয়ে পড়তো তাহলে অন্যেরাও এই দূষণ দূর করতে আমাদের হাতে হাত মেলাতো। ভারতের পানি বন্টন চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন লক্ষ্য করলেই সবকিছু আমাদের বোধগম্য হবে। এখন আমাদের দেশে মাত্রাছাড়া যে ক্ষতিকর সার আসছে, আমাদের কৃষকরা এর কুফল জানেন না বিধায় ব্যবহার করছেন। আমাদের দেশে মাত্রার অধিক কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে এবং কীটপতঙ্গের সাথে সাথে মাটি-পানি-ফসল সবই দূষিত হচ্ছে এবং এদিকে জনগণ তথা সরকার গুরুত্বের সাথে দেখছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের দেশের মাটি-পানি-বাতাস-গাছপালা মাছ গাবাদিপশু ফসল সবকিছু রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের দেশের জনগণের। এর জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে বর্তমান জনগণের তথা ভবিষ্যৎ বংশধরের ভোগান্তির কোন সীমা থাকবে না এটা আমরা অনেকেই জানি তথাপিও না জানার ভান করে নিজেরা দেশটাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের চরম প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছি এবং যে সকল কার্যক্রম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায় সেই সকল নিয়ম-কানুন-পদ্ধতি আমরা জেনে-না-জেনে লালন-পালন করি। আমরা আজ কি পাব সেটাই দেখছি এবং কাল কি হবে সেটা নিয়ে আমাদের কারোই কোন মাথা-ব্যথা নেই। আমাদের জনগণ এটা জানে না যে, অযথা হর্ণ বাজানো আইনত নিষেধ। তাই যেখানে-সেখানে হর্ণ বাজিয়ে নীরব ঘাতকের মত নিজেদের পরিবেশ নিজেরাই নষ্ট করছি। আপাতদৃষ্টিতে লাভের লোভে তিলে তিলে মানব সম্পদের আয় কমিয়ে আনছি, সেইসাথে মানুষের অসুস্থতাকে জেনে-না-জেনে বাড়িয়ে দিচ্ছি। এতে করে রমরমা ব্যাবসা বাড়ছে প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার আর ক্লিনিক ব্যাবসায়ীদের। আজকাল টেলিফোন ব্যবসায়ীরাও ফোনে প্রেসক্রিপশন দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মঙ্গল চাইলে প্রাণী, উদ্ভিদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। আমাদের সদিচ্ছা আমাদের দেশের পরিবেশ উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। কোন দেশে সত্যিকারের উন্নয়ন এমনই একটা অবস্থা বোঝায় যা পরিবেশগত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক একটা ভারসাম্য রেখে সেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটি দেশেই বহুমাত্রিক দিক বিবেচনা করে সার্বিক উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রেখে যে কোন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তা কতটুকু কার্যকর আমার জানা নেই। এ ছাড়াও দেশের সার্বিক প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে কিছু দীর্ঘমেয়াদী কর্ম পরিকল্পনার প্রণয়ন তথা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।যে কোন উন্নয়ন কার্যক্রম এক প্রজন্মের জন্য চিন্তা না করে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে তার কি প্রভাব পড়বে তা বিবেচনা করার পর বাস্তবায়ন করা উচিত। সবার ঊর্ধ্বে আমার দেশ এই ধারণাকে সামনে রেখে যে কোন রাজনৈতিক দল যদি দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে সকল উন্নয়ন ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করত, তবেই আমাদের রাজনীতিবিদগণকে জনগণের দেশপ্রেমিক বলে মনে হতো। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের নিজেদের স্বার্থ জড়িয়ে ফেলাতে আজ বিদেশীদের কথামত আমাদের উঠতে-বসতে হচ্ছে। কারণ আমরা নিজেদের দেশের স্বার্থে এখনও সংহতি প্রকাশ করতে পারিনি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদগণ সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন তথা দীর্ঘমেয়াদী জরুরী পদক্ষেপগুলোও হাতে নেয়ার কথা তারা ভাবতে পারেন না। 

0 comments:

Post a Comment