পরিবেশ: বায়ু দূষণে অকাল মৃত্যু
আলী ফোরকান
নগর সভ্যতার ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো পরিবেশ দূষণ। এর প্রভাবে জটিল সব রোগ দিন দিন দেশে দেশে সংহারি মূর্তি ধারণ করছে। জীবন কেড়ে নিচ্ছে অকালে। তেমনি একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী। তাদের মতে, বায়ু দূষণের মাত্রা কমে যাওয়া সত্ত্বেও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধির আলামত পাওয়া গেছে এবং সেটা ধনী ও শিল্পোন্নত দেশেই। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের তত্ত্বাবধানে একদল বিজ্ঞানী ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেন। ১৯৮২-১৯৮৬, ১৯৮৬-১৯৯০, ১৯৯০-১৯৯৪ এবং ১৯৯৪-১৯৯৮ সাল পৃথক চারটি পর্যায়ে তারা বাতাসে বিদ্যমান কালো ধোঁয়া ও সালফার-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ পরিমাপ করেন। তাতে তারা দেখতে পান ১৯৮২ সালের তুলনায় ১৯৯৮ সালে বাতাসে কালো ধোঁয়ার মাত্রা পাঁচগুণ কম। পক্ষান্তরে একই সময়ের ব্যবধানে সালফার-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কম পাওয়া গেছে চারগুণ। একই সময়ের ব্যবধানে তারা যুক্তরাজ্যের ৫ হাজার লোকের মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করেন। ব্যাপক বিশ্লেষণ শেষে তাদের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়- থোরাক্স জার্মানে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ু দূষণের মাত্রা কমে যাওয়া সত্ত্বেও এর প্রভাবে অকাল মৃত্যুর হার রয়েছে আগের মতোই। ক্ষেত্রবিশেষে এ হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের ভাষায়, বাতাসে কালো ধোঁয়া নির্গমনের হার প্রথমদিকে অর্থাৎ ১৯৮২ সালে ১৯ ভাগ চিহ্নিত করা হলেও ১৯৯৮ সালে এর মাত্রা ছিল ১০ ভাগ। পক্ষান্তরে একই সময়ের ব্যবধানে সালফার-ড্রাই-অক্সাইডের হার ২০ থেকে ১০ ভাগে নেমে এলেও বায়ু দূষণজনিত কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর হার বেড়েছে। গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর পল ইল্লিয়ট বলেন, কালো ধোঁয়া ও সালফার-ড্রাই-অক্সাইডের মাত্রা কমে যাওয়া সত্ত্বেও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটার কারণ অস্পষ্ট। তবে হতে পারে বায়ু দূষণের ধারা পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে তা আরো বিষাক্ত হয়েছে। ব্রিটিশ থোরাসিক সোসাইটির বিশেষজ্ঞ ড. রিনার্ড রাসেল বলেন, গবেষণা রিপোর্টের বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনক। এর নানাবিধ ব্যাখ্যা দেয়া যায়। বলা চলে পরিবেশ-দূষণের ধারা পরিবর্তন হয়েছে। যাতে কালো-ধোঁয়া ও সালফর-ড্রাই-আক্সইডের মাত্রা কম হওয়া সত্ত্বেও বিষাক্তের মাত্রা বেড়েছে। হতে পারে গত চল্লিশ বছরের ব্যবধানে লোকজন আগের তুলনায় বেশিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে আরো নিবিড় গবেষণা হওয়া দরকার।
0 comments:
Post a Comment