মাদকাসক্ত তরুণীর হাইজ্যাক করে দিন চলে
আলী ফোরকান
গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য। স্বচ্ছল পরিবারের ৬৫ শতাংশই ইয়াবা ও ফেনসিডিলে আসক্ত। ব্র্যান্ড পরিবর্তনের বাজারে আসা মাদকের কদর সব সময়ই বেশি থাকে। এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় উচ্চমূল্যের দাপুটে মাদক ইয়াবা ও ফেনসিডিল। আগমনী দাপট নেই হেরোইনের বাজারে। ইয়াবা ও ফেনসিডিলের দুর্মূল্যের কারণে দুর্বল গাঁজার বাজার বেশ চড়া। তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তিসহ ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে সকাল বিকাল গাঁজার বাজার বসে। ঠিকানাহীন মানুষের কাছে প্যাথেডিন ও ঘুমের ট্যাবলেট খাদ্যের চেয়েও প্রিয়। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজিত প্রদর্শনীতে ১১টি বেসরকারি মাদক নিরাময় প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তারা সবাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকাসক্তদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে আসছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য থেকে এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।
মাদক নিরাময়কেন্দ্র বারাকাতের কর্মকর্তা উদাস দৃষ্টিতে বলেন, মাদকাসক্তদের নিরাময়কেন্দ্রের সচেতনতামূলক ক্লাস চলছে। অংশগ্রহণকারীরা সবাই তরুণী। তাদের একজন তার কথা আমলে না নিয়ে কেবল ছটফট করছে। একপর্যায়ে সে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ম্যাডাম আমার খেতে হবে, নিতে হবে মাদক। কিন্তু আমার কাছে একটি টাকাও নেই। এখন আমার সামনে হাইজ্যাক করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। তাই চলে গেলাম। এই বলে ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় কলেজপড়ুয়া মাদকাসক্ত তরুণীটি। এরপর আর ফিরে আসেনি সে। এখন হয়তো তার দিন চলে হাইজ্যাক করে। নানা কারণে মাদকাসক্ত হয়ে এভাবেই প্রতিনিয়ত ছিটকে পড়ছে অনেক তরুণ-তরুনী আমাদের সুন্থ সমাজ থেকে। তেজগাঁও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চত্বরে, এক নিঃশ্বাসে জীবন খাতায় তুলে রাখা কথাগুলো বলে নিজেকে অনেকটা হালকাবোধ করছিলেন কারিতাসের মাদক নিরাময় প্রজেক্টের এ কর্মকর্তা। তার মতে, মাদকের স্রোতে গা ভাসিয়েছে অনেক স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও। পারিবারিক কলহের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। বর্তমান মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানটাও বেশ ওজনের, ৬৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি আবার তরুণী। এদের অনেকেই শিক্ষিত। আবার যৌনকর্মীও রয়েছে। মাদকাসক্তদের তালিকায় বর্তমান ফেভারিট হচ্ছে ইয়াবা। পরের স্থান ফেনসিডিল। এসব মাদকের উচ্চমূল্যের কারণে এখন অনেকে গাঁজা সেবন করছে। মাদক নিরাময় ক্রিয়ার কর্মকর্তা দুই বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, তাদের নিরাময়কেন্দ্রে আসা ৬৫ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত। টিএমএসএস-এর মাদক নিরাময়কেন্দ্রে সহকারী পরিচালক বলেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের ২০ শতাংশ তরুণী ও মহিলা। ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিলে আসক্ত। মাদক নিরাময়ের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আগামীতে আরও বড় আকারের কর্মসূচির চিন্তাভাবনা রয়েছে। ব্যবহƒত সূইয়ের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ প্রতিরোধ এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচির পুরানো নিরাময়কেন্দ্র কেয়ার। তাদের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দুই বছর আগেও পুরানো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহƒত সূইয়ের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের সংখ্যা ছিল ৭৭ শতাংশ। যদিও এদের অধিকাংশ ছিন্নমূল মানুষ। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশে। তাদের অনেকেই এইডস আক্রান্ত। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের কানসাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী এলাকায় এ রোগের প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে মাদকাসক্ত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন ।
0 comments:
Post a Comment