প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে পদক্ষেপ জরুরি
আলী ফোরকান
ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি। তাই প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে এখন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ধূমপান যিনি করেন কেবল তিনিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না।। এটা ধূমপায়ীরা ভালো করেই জানেন। গর্ভবতী মা ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি, কেউ যদি তাদের পাশে ধূমপান করে। ধূমপান থেকে হাঁপানি, কফ-কাশি, মাথা ধরা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা প্রকার জটিল রোগ সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক রিপোর্ট মতে প্রতি বছর সারাবিশ্বে ৪০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তামাক ও ধূমপানের মধ্যে হাজারো রকমের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার ২০-৩০টি উপাদানই ক্যান্সার জন্ম দিতে সহায়তা করে। এটা একটি নীরব ঘাতক। গড়ে প্রতি মিনিটে বিশ্বে প্রায় ১২ জন লোকের মৃত্যু হচ্ছে তামাক ও ধূমপানজনিত কারণে। জানা যায়, প্রতি বছর আমাদের দেশের ৫৭ হাজার মানুষ তামাক ও ধূমপানজনিত কারণে মারা যাচ্ছে। ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গু হচ্ছে। শতকরা ৪০ জন নারী-পুরুষ ধূমপায়ী। এর শতকরা ১৫-২০ ভাগই মহিলা ধূমপায়ী। সে হিসেবে ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ধূমপানে আসক্ত। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি মানুষ সরাসরি প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। ফলে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে। বছরে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি সিগারেট ও বিড়ির শলাকা আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে। তাই এর ভয়াবহতা বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকদের ভাষায় এটাকে এখন একটা মহামারী বলা চলে। ভয়ংকর এ বদ-অভ্যাসটি বদলাতে দেশের প্রতিটি মানুষকে এখন বিষয়টি শুধু উপলব্ধি করলেই চলবে না। পাশাপাশি গণসচেতনতাবোধ জাগ্রত করে তা প্রতিরোধ করতে হবে। ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করা এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস হয়। ওই আইনবলে জনবহুল স্থান, অফিস, আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সকল প্রকার যানবাহন প্রভৃতি স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আমলে এনে ৫০ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে এ আইনে। আমাদের চাঁদপুরে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে ২০০৮ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ৩/৪ জনকে ৫০ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানি না। এ-ব্যাপারে গণসচেতনতা বাড়ালে ব্যাপক সাড়া জাগতে পারে। অফিস-আদালতে, যানবাহনে, দেয়ালে, গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যমান স্থানে, স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এক বাক্যে লেখা যেতে পারে: ধূমপান বর্জন করুন, ধূমপান নিষেধ, ধূমপান বিষপান, ধূমপান বর্জনে আপনার ইচ্ছাই যথেষ্ট, ধূমপান থেকে বিরত থাকুন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপান করবেন না, স্বাস্থ্য রক্ষায় ধূমপান ত্যাগ করুন, এ কক্ষে ধূমপান করবেন না, এ কক্ষে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন, অধূমপায়ীদের পাশে ধূমপান করবেন না, ধূমপানমুক্ত কক্ষ, ধূমপানমুক্ত এলাকা, ধূমপায়ীদের এড়িয়ে চলুন, ধূমপান একটি বদ-অভ্যাস, ধূমপানে আয়ু কমে, ধূমপান পরিত্যাগ করুন, ধূমপান হৃদরোগের কারণ, ধূমপান মৃত্যু ঘটায়, ধূমপান নানা রোগ সৃষ্টি করে, ধূমপান জটিল রোগের কারণ, ধূমপানে স্বাস্থ্য শেষ।।বউ চলছে বাপের দেশ, ধূমপান না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, ধূমপান আধুনিক তরুণ-তরুণীদের অপছন্দীয়, ধূমপান ত্যাগ করুন।।তামাকমুক্ত দেশ গড়ুন, শিশুদের সামনে ধূমপান করবেন না, প্রকাশ্য ধূমপান আইনত দন্ডনীয়, প্রকাশ্যে ধূমপান করবেন না, ধূমপান বর্জন করুন।।পরিবেশ নির্মল রাখুন ইত্যাদি শ্লোগান ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনমনে ধূমপান পরিত্যাগের মনোভাব সৃষ্টি করবে। কেউ ধূমপায়ী হিসেবে জন্ম নেয়নি। পরিবেশ বা কোনো কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে অনেকেই ধূমপায়ী হয়ে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগামী বছর প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকে তামাকবিরোধী প্রবন্ধ সংযোগের উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার। সুতরাং আমরা আশা করছি ধূমপান রোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।
0 comments:
Post a Comment