Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ: দূষণমুক্ত জৈব সার প্রাপ্তিতে বায়োগ্যাস


পরিবেশ: দূষণমুক্ত জৈব সার প্রাপ্তিতে বায়োগ্যাস
আলী ফোরকান
জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনে দিন দিন আমাদের বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রাম-বাংলায় রান্নার জন্য খড়কুটো, কাঠ, নাড়া, শুকনো গোবর ইত্যাদি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি হিসেবে গোবর, নাড়া ও অন্যান্য পচনশীল পদার্থ পুড়িয়ে ফেলার ফলে আবাদি জমি জৈব সার থেকে বঞ্চিত হয়ে অনুর্বর হচ্ছে। আগে ফসল কাটার পর নাড়া, খড়কুটো, গোবর প্রভৃতি জমিতে ফেলে রাখা হতো এবং সেগুলো পচে ক্ষেতে সারে পরিণত হতো। এই জৈব সার জমির জন্য খুব উপকারী। ফলে দিন দিন আমাদের দেশের জমি হারাচ্ছে উর্বরশক্তি। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি, মৎস্য, পশু ও মানুষের ওপর এক ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে বলে উদ্ভিদ ও প্রাণী বিজ্ঞানীরা মনে করেন। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের যা মজুদ আছে তা বর্তমান হারে ব্যবহার করলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই জ্বালানি সংকট মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উন্নয়নের জন্য আমাদের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। জ্বালানির প্রয়োজনে আসাধু ব্যক্তিরা বন থেকে কাঠ চুরি করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে তা বন্ধ করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বায়োগ্যাস প্রযুক্তি এখন খুবই সহজ। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্যাস, উন্নতমানের জৈব সার এবং দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে পাওয়া সম্ভব। বায়োগ্যাস পদ্ধতিতে জ্বালানি ব্যবহার করে গ্রামে বাস করেও শহরের সুবিধা পাওয়া যায়। যে কৃষকের তিন-চারটি গরু আছে তিনি অল্প খরচে অনায়াসেই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করে এ জ্বালানির সংকট এড়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি সরকারিভাবে পরামর্শ ও বিভিন্নভাবে সহায়তা নিতে পারেন। এতে করে সাত-আট সদস্যের একটি পরিবারের দৈনিক রান্নাবান্না ও রাতে লাইট জ্বালানোর কাজে সহায়তা পাওয়া যাবে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ব্যবহৃত গোবর/আবর্জনা/মলমূত্রের অবশিষ্টাংশ থেকে পাওয়া যায় ফসল উৎপাদনের জন্য প্রচুর জৈব সার। এ জৈব সার মাছ ও হাঁস-মুরগির উপাদেয় খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। জৈব সারের অভাবে জমিও উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। যে কোনো পচনশীল জৈব পদার্থ যেমনÑ গোবর, মলমূত্র, আবর্জনা, কচুরিপানা, লতাপাতা ইত্যাদি বাতাসের অনুপস্থিতিতে পচালে যে গ্যাস উৎপন্ন হয় তা-ই বায়োগ্যাস। এ বায়োগ্যাসে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মিথেন থাকে। আর মিথেন একটি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। বায়োগ্যাস থেকে গ্যাস উৎপাদনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা জৈব সারে পরিণত হয়। ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা থেকেও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট প্রযুক্তি প্রয়োগ করে জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব। বড় বড় শহরে আবর্জনা একটি সমস্যা। শহরে আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন থাকে। যদিও শহরবাসীর তুলনায় তা নগণ্য। ঢাকা শহরে চালুকৃত কন্টেইনার ও আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও তা অপ্রতুল। পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংখ্যাও অনেক কম। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টনের মতো আবর্জনা জমে। ফলে দুই-তিনদিনের ময়লা জমে উপচে ওঠে ডাস্টবিনগুলো। আর এসব ময়লা পচে সৃষ্টি হয় দুঃসহ দুর্গন্ধের। জনস্বাস্থ্যের জন্য আবর্জনা ডাম্পিংও ক্ষতিকর। আবর্জনা সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে আবর্জনা কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে। বিশেষ করে শহরের বস্তি এলাকায়। এতে করে আমাদের জ্বালানির সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি মনে করি। 
বায়োগ্যাস কী : গোবর ও অন্যান্য পচনশীল পদার্থ বাতাসের অনুপস্থিতিতে পচানোর ফলে যে রঙবিহীন জ্বালানি গ্যাস তৈরি হয় তাকে বায়োগ্যাস বলা হয়। এতে শতকরা ৬০ থেকে ৭৫ ভাগ মিথেন থাকে যা জ্বালানি গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাকিটা মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড । গ্যাস উৎপাদনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা উন্নতমানের জৈব সার। এই জৈব সার ব্যবহার জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। ফসলের উৎপাদন বাড়ে।  এই প্রযুক্তির সুফল : বায়োগ্যাস প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একসঙ্গে চারটি সুফল পাওয়া যায়। (১) পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গ্যাস (২) উন্নতমানের জৈব সার (৩) দূষণমুক্ত পরিবেশ (৪) স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এই গ্যাস নির্গত হওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা একটি উন্নতমানের জৈব সার। এ সারে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সংরক্ষিত থাকে। ফলে সারের মান উন্নত হয়। যে আবর্জনা দ্বারা পরিবেশ দূষিত হতো তা বায়োগ্যাস প্রযুক্তিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে দুর্গন্ধমুক্ত সারে পরিণত হয় এবং আবর্জনায় যেসব জীবাণু থাকে তার অধিকাংশই নির্মূল হয়ে যায়। এতে করে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটা জৈবচক্র সংরক্ষণে সহায়তা করে। বর্তমানে গাছপালা, গোবর, খড়কুটো ইত্যাদি রান্নাবান্নার জন্য পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আবর্জনা এক জায়গায় স্তূপিকৃত করে রাখা হয়। ফলে জমি প্রাকৃতিক সার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বায়োগ্যাস প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ফলে জমিতে জৈব সার প্রয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশ ও রক্ষা পাবে।


0 comments:

Post a Comment