মাদক ব্যবসায়ী সমাজের নিকৃষ্টতম প্রতিপক্ষ
আলী ফোরকান
রাজধানীর উপকণ্ঠে বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে উঠেছে মাদকের ডিপো। সম্প্রতি প্রকাশিত এই খবর উদ্বেগের,উৎকন্ঠার। প্রকাশিত রিপোর্টে প্রতীয়মান হয় যে, এই এলাকাগুলোকে কেন্দ্র করে অনেকদিন যাবৎ সক্রিয় রয়েছে মাদক মাফিয়া চক্র। সীমান্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন পরিবহনযোগে এখানে আসে নেশাদ্রব্যাদির চালান। জায়গাগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে। অর্থাৎ এইখান থেকে মাদকদ্রব্যাদি চালান করে দেয়া হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। মাদকের সঙ্গে একই কায়দায় আসে অবৈধ অস্ত্র। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, গত ১২ বছরে এখানে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে খুন হয়েছে অর্ধশত লোক। পুলিশ ও র্যাব সদস্যও আছেন নিহতদের মধ্যে। এর আগে, এখানে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের অনেকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল মস্তক বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। রাজধানীর সন্নিকটে মাদক মাফিয়াদের এহেন সক্রিয়তার সংবাদে বিচলিতবোধ না হয়ে পারা যায় না। বছরের পর বছর ধওে এখানে মাদক ব্যবসায়ীরা কি প্রকারে এমন ভয়ংকর তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে পারছে এই প্রশ্নটি উপেক্ষা করা কঠিন। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও দেশে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। একই এলাকায় অর্ধশত খুনের ঘটনা ঘটার পরও, রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের সনাক্ত করে বিচারের সম্মুখীন কেন করা যায়নি, তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলা বাঞ্ছনীয় যে, মাদক একদিকে আমাদের শত সহস্র তরুণ যুবার জীবনে ডেকে আনছে চরম সর্বনাশ, অন্যদিকে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ওপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র। মাদকব্যবসার স্বার্থেই যারা খুন খারাবি করতে বেপরোয়া। তৃতীয় বিশ্বের এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে সামাজিক শান্তি, সুস্থিরতা নির্বাসিত প্রায়। দেশে বিদেশে ছোটবড় সন্ত্রাসী খুনীদের বেশীরভাগই মাদক ব্যবসার সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। বিভিন্ন দেশে সক্রিয় চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির সঙ্গেও অনেকক্ষেত্রে যোগ রহিয়াছে মাদক মাফিয়াচক্রের। ল্যাটিন আমেরিকার কলম্বিয়ায় একসময় এই মাফিয়া চক্র এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যে, দিনদুপুরে পথেঘাটে সমানে ঘটত মানুষ খুনের ঘটনা। সেই অবস্থার এখন অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এইদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে মাদক ব্যবসার নেটওয়ার্ট যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনই বেড়েছে সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তির সমস্যা। আর, বাংলাদেশে মাদক ও সন্ত্রাসী পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। মদকাসক্তি ও সন্ত্রাসী সমস্যা এখন কেবল শাহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে সীমান্ত সংলগ্ন পল্লী এলাকায় বিপথগামী অনেক তরুণ মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এমনও সংবাদ আছে যে, সীমান্ত এলাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষক এবং অভিভাবক পর্যায়ের অনেক সাব্যস্ত লোকও সর্বনাশা নেশার কবলে পড়ে উচ্ছন্নে হচ্ছেন। গ্রাম ও শহরের উঠতি বয়সের অনেক ছেলেমেয়ে নেশাসক্ত। যেসব পরিবারের কোনো সদস্য নেশাসক্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুঃখ দুর্গতির কথা বলে শেষ করা যায় না। নেশাখোরদের চাহিদা মিটাতে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়বা,হেরোইন, গাঁজা ও ফেন্সিডিলের পাশাপাশি কতরকমের নেশা দ্রব্যাদি যে বাজারে আনছে তার ইয়ত্তা নাই। এই নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য ছেলেমেয়ের জীবন নিঃশেষিত প্রায়। তছনছ হয়ো গিয়েছে বহু পরিবার। এই নেশাখোরদের এক বিরাট অংশ জড়িত ছোটবড় নানা অপরাধে। প্রায়শ এরা ব্যবহৃত হয় মাফিয়াদের দ্বারা। শোনা যায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডে মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের যে অপবাণিজ্য তা বহু সহস্র কোটি টাকার। এ এক নির্দয় অমানুষিক বাণিজ্য। যে মাফিয়া চক্র এই অপবাণিজ্যের হোতা, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তারা মানব সমাজের নিকৃষ্টতম প্রতিপক্ষ। এদের অবশ্যই দমন করতে হবে।
লেখক: ড. ফোরকান আলী-০১৭১১৫৭৯২৬৭
0 comments:
Post a Comment