মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার ঘরে ঘরে
আলী ফোরকান
মাদক দ্রব্যের বেচাকেনা চলে সীমান্ত এলাকার পয়েন্টে পয়েন্টে। নেশাবস্তুর ব্যবসায় কেন্দ্র করে সীমান্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এ ব্যবসায় সহজেই খুব লাভবান হওয়া যায়। বিধায় এলাকার অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে এই ভয়ংকর কারবারে। অন্যদিকে, প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়, মাদক সেবন কেবল কিশোর-তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।। স্কুল-কলেজের কোনো কোনো শিক্ষকও নেশার নীল দংশনের শিকার। দেশের মাদক ব্যবসায় সুনির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে সীমাবদ্ধ না থেকে এইসব পয়েন্ট থেকে মাদক দ্রব্যাদির চালান দেশের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া বিচিত্র কী। বরং সে আশংকা খুবই প্রবল। বিশ্ব জুড়ে মাদক এক বিরাট, যেনবা অপ্রতিরোধ্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের শহর ও গ্রামের একশ্রেণীর কিশোর ও যুবকের চরম সর্বনাশ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে মাদকের ছোবলে। আশির দশকের আগ পর্যন্ত এই দেশে মদ, গাঁজা, ভাং ইত্যাদি ছাড়া বিশেষ কোনো মাদকদ্রব্যের নাম শোনা যায়নি। আশির দশকে পেথেডিন বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পেইনকিলার ইনজেকশন নিয়ে কারো কারো নেশা করার কথা শোনা যায়। সে সময়ে এই দেশের একজন চিত্রনায়িকা পেথেডিনের নেশায় পড়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়াছিলেন। তার কংকালসার ছবি তখনকার পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। পরে অবশ্য ওই মহিলা নেশার অভিশাপ হতে মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। অতঃপর দেশে আসে হেরোইন, হাসিস। হেরোইনসেবীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কে না জানে, যে একবার হেরোইনে আসক্ত হয়েছে, তার পরিণতি নির্ঘাত অকালমৃত্যু। অবশ্য সময়মত চিকিৎসা দেয়া গেলে হেরোইনের নেশা ত্যাগ করতে পারা অসম্ভব নয়। আজকাল হেরোইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও নানা রকমের নেশা। এখন সর্বাধিক প্রচলিত নেশাকর পানীয়টির নাম ফেন্সিডিল। এই ফেন্সিডিল অতীতে ব্যবহৃত হত কাশি প্রশমনের ঔষধরূপে। এখন নেশার সামগ্রী। অবশ্য ফেন্সিডিল এবং সেই ফেন্সিডিল পুরোপুরি এক নয়। বাংলাদেশে ফেন্সিডিল নিষিদ্ধ। তা হলেও নেশাখোরদের জন্য শতসহস্র বোতল ফেন্সিডিল আসছে মাদকের বাজারে। ফেন্সিডিলসহ যাবতীয় নেশাকর দ্রব্য চোরাপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে সীমান্ত দিয়ে। সে কারণেই সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসায় জমজমাট। কেবল টেকনাফ নয়, সীমান্ত এলাকার প্রায় সর্বত্র কমবেশী মাদক দ্রব্যাদির ব্যবসায় রমরমা। সমুদ্রপথেও দেশে অনেক মাদক সামগ্রী আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইয়বা,হেরোইন-ফেন্সিডিল ছাড়াও উত্তেজক এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঘুমের বড়ি খেয়ে আসক্তদের অনেকে নেশা করে থাকে। নেশার কবলে পড়ে ইতিমধ্যে শহর ও গ্রামে কত জীবন যে ধ্বংস হয়েছে, কত পরিবার যে অশান্তির আগুনে পুড়ে জর্জরিত তার ইয়ত্তা নাই। নেশাখোররা কেবল নিজেদেরই ধ্বংস করে না, তারা সমাজের ভেতরে একাধিক মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। শহরাঞ্চলে ছিনতাই- রাহাজানির মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সহজেই। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে প্রায়শই ছিনতাই ও চুরি-চামারি করে থাকে। বেশ কিছুদিন আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আই,জি,পি কর্মকর্তা খুন হয়েছেন ছিনতাইকারীদের হাতে। এই খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে যারা ধরা পড়ে তারা হেরোইনসেবী। মরণনেশায় আসক্ত যুবকরা নেশার টাকার জন্য যা খুশি তাই করতে পারে। তাদের বোধ-বিবেচনা নাই, থাকতে পারে না। অপরিণামদর্শিতাই তাদের জন্য স্বাভাবিক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, নেশাদ্রব্যাদির উপদ্রব দিনে দিনে এতটাই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল শ্রেণীর মধ্যেই এই উপদ্রবের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এমনও দৃষ্টান্ত আছে যে, অবিবেচক পিতা বা মাতা নেশার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত আর পরিবারের অন্য সদস্যরা, সন্তান-সন্ততি যাপন করছে দুর্বিষহ জীবন। এহেন সর্বনাশা নেশার ছোবল থেকে কিশোর-যুবক এবং সমাজের অন্যান্য স্তরের আসক্তদের বাঁচাবার জন্য মাদকের ব্যবসায় অবশ্যই রোধ করতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকদের সজাগ হওয়া উচিত মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে। ছেলেমেয়েদের চাল-চলন, মন-মানসিকতার প্রতি সব সময়ই অভিভাবকদের খেয়াল রাখা কর্তব্য। মোটকথা মাদক প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার ঘরে ঘরে, জনে জনে।
লেখক: ড.ফোরকান আলী -০১৭১১৫৭৯২৬৭
0 comments:
Post a Comment