মাদক: নকল আসছে
আলী ফোরকান
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসছে নকল ফেনসিডিলসহ সর্বনাশা মাদকদ্রব্য। ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে পৌঁছে দিচ্ছে আর দেশীয় চোরাচালানিরা নিত্যনতুন কৌশলে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে। একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশে ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্যের এখন চাহিদা এতো বেশি যে, শুধুমাত্র এ দেশে পাচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে নকল ফেনসিডিলের কারখানা। মাদকাসক্তদের কাছে ফেনসিডিলের অপর নাম ডাইল, ফান্টু, মধু বা জুস হিসেবে। দেশের অভ্যন্তরে শহরাঞ্চল ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে গড়ে উঠেছে ডাইলপট্টি। স্থানভেদে মাদকাসক্তদের কাছে এখন ফেনসিডিল, ডাবুর ও হেরোইন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদকদ্রব্যের দরদাম ওঠানামা করে আবার দু’পারের প্রশাসনিক তৎপরতার ওপর সঙ্গতি রেখে। অবস্থাদৃষ্টে এর বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকাশিত থবরের মুত্র মতে,দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এলাকা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। সুন্দরবন এলাকার রায়মঙ্গল নদীর কাছে কৈখালী থেকে কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট এই দীর্ঘ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে চোরাচালান ঘাট। উভয় সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল শিথিল হলেই বানের পানির মতো মাফিয়া চক্র ঢুকিয়ে দেয় মাদকদ্রব্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাবী শিশু, কিশোর ও মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে মাদকদ্রব্য পারাপারে। জানা যায়, নব্বইয়ের দশক থেকে মূলত ভারত থেকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মাদকদ্রব্য আসা শুরু হয়। ভারতের বম্বে থেকে রোনপোলেঙ্ক কোম্পানি কফ সিরাপ হিসেবে ফেনসিডিল বাজারজাত করে বেশ আগে থেকেই। তবে এতে এলকোহলের মাত্রা বেশি থাকায় এক পর্যায়ে তা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ হয়নি এক দিনের জন্য হলেও। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের নেশাখোরদের কাছে ফেনসিডিলের চাহিদা বাড়তে থাকলে পাচারও বেড়ে যায় বহুগুণে। সাতক্ষীরার ভাদিয়ালী, বড়ালী, চারাবাড়ী, গাড়াখালী, হিজলদী, চান্দুড়িয়া, যশোরের সাদীপুর, বড় আঁচড়া, শিখারপুর, মাসিলা, ঝিনাইদহের যাদপুর, সামান্তা, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর রাজাপুর, দর্শনা, মেহেরপুরের গাংনী, মজিবনগর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের বিভিন্ন ঘাট এলাকা দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আসে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য। বিভিন্ন সময় সীমান্তরক্ষী পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হাতে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও চোরাচালানিসহ ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আটক হলেও তা বন্ধ করা যায়নি। শুধুমাত্র মাঝেমধ্যে স্পট পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে ফেনসিডিলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রোনপুলেঙ্ক ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বানপুর, বহরমপুর ও বারাসাতসহ বিভিন্নস্থানে নকল ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে থেকে প্রতিদিন চাহিদানুযায়ী ২/৩ লাখ লিটার ফেনসিডিল উৎপন্ন্ হয় বলে জানা গেছে। যা বোতলজাতের পাশাপাশি ড্রামে ভর্তি হয়ে এপারে আসে এবং নিরাপদ স্পটে রেখে তা বোতলজাত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল ফেনসিডিল স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। সচেতন মহল মনে করেন, মাদক পাচার রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা।
0 comments:
Post a Comment