Friday, June 17, 2016

প্রযুক্তির যুগে তরুণ-তরুণী

প্রযুক্তির যুগে তরুণ-তরুণী
আলী ফোরকান
তথ্য প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির হাত ধরে আমাদের ভালোবাসা ছুটে যায় রঙিন রিক্শায়। মনস্তাত্ত্বিক ভুবনের বিস্তীর্ণ রেখায়। রাঙায়িত আমাদের তারুণ্য। সময়ের পাল তুলে হ্মিগ্ধতার পেছনে ছুটছে প্রজন্মের উচ্ছ্বল স্বপ্নগুলো। কিছুটা দূরে, তারপর দূরে, আরো দূরে; একে একে নিসর্গ হতে চায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যেখানে একান্ত আকাশে ইচ্ছের ঘুড়ি থেমে নেই। ক্রমাগত উড়তে চায় ওই সীমান্তহীন নীলিমায়। কখনও রোদ, কখনো বৃষ্টি, কখনো হিমেল হাওয়া তারুণ্যকে স্পর্শ করলেও থেমে নেই বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা। থেমে নেই বন্ধুত্বের নিটোল টান। থেমে নেই বিচ্ছেদবেদনার কষ্টগুলো। একবিংশ শতককে পেছনে ফেলে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে এখনকার ছেলেমেয়েরা। যারা নিজেকে চেনার, নিজেকে জানার, নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠছে ক্রমাগত। যেখানে নিজস্ব অস্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলার সংগ্রামে বেড়িয়েছে সময়ের প্রান্তরে। তবে এ পথচলায় কতটুকু সচেতনতার ছাপ রাখছে আমাদের ডিজিটাল সময়ের তরুণ-তরুণীরা। পৃথিবীর বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কতটুকু ভূমিকা পালন করছে বন্ধুত্ব-প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কগুলো। কতটুকু স্থায়ীত্ব হচ্ছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসগুলো। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকুরীজীবী তরুণ-তরুণীর মানসিক স্ফূরণের চিত্র ফুটে উঠে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। যেখানে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও দীঘল ভালোবাসার স্পর্শ নিয়ে এগিয়ে চলতে চায় পৃথিবীর বুকে। প্রতিযোগিতামূলক জীবনসংগ্রামে প্রত্যেকটা মানুষই একে অপরের পরিপূরক। বন্ধুত্বহীন পথচলা সময়ের প্রেক্ষাপটে দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু এ বন্ধুত্ব ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা কতটুকু? তথ্যপ্রযুক্তির এ সময়ে মানসিক পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের মধ্যে এর যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যায়। যার ফলে ক্রমাগত প্রতারিত হয়ে কষ্ট পেতে হয় অসংখ্য তরুণ-তরুণীদের। যা জীবনচলাকে ব্যাহত করে, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে, পড়াশোনায় যথেষ্ট বিঘিœত করে। এছাড়াও বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করে মস্তিষ্ককে। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কষ্টকর। কিন্তু প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তার ব্যতিক্রমটিও লক্ষ্য করা যায়। চলমান সময়ে তারুণ্যের যে পরিবর্তনশীল মনোভাব। চাহিদার পূর্ণতার যথার্থ যাচাই ও নিজস্ব মনোভূমের আঙিনায় এনে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মানুষটিকে জানার যে চেষ্টা তা নিরঙ্কুশ এগিয়ে যাওয়ার জানালা খুলে দেয়। 
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাহীন পৃথিবী ব্যর্থ। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে এ ভালোবাসার আধুনিকতা ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। যা শূন্যের দশকে এসে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আবার যথার্থ সচেতনতার অভাবে আমাদের তরুণ সমাজ ক্রমাগত ধাবিত হচ্ছে অন্ধকারে। নৈতিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণী সচেতনার অভাবেই। তাদের ক্রমবর্ধমান প্রতারণান্মোখ উন্মেষ আমাদের সমাজে কতটুকু প্রভাব ফেলছে সময়ই তার প্রমাণ। আধুনিক জীবনধারার ছোঁয়ায় আমরা এখন অনেক এগিয়ে। এই এগিয়ে যাওয়ার মাঝে ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব ছুঁয়ে যায় প্রত্যেককে। কিন্তু এই বন্ধুত্ব-ভালোবাসা কতটা আত্মবিশ্বাসী  হয়ে উঠছে। সে বিষষটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে নির্ণয় করা খুবই কঠিন। 
তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে বন্ধুত্ব ও প্রেম-ভালোবাসার স্থায়ীত্ব নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কা দেখা যায়। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট এ বিষয়টির মূল ভূমিকাস্থল বলে ধারণা করা যায়। বর্তমানে এ দুটি মাধ্যমই তারুণ্যের বন্ধুত্ব বা প্রেম-ভালোবাসার যোগসূত্রের মূল উৎসে পরিণত হয়েছে।  জাস্ট অনুভূতির প্রকাশ ও কণ্ঠনির্বাচনের মাধ্যমেই প্রবেশ করে এ সমস্ত সম্পর্কের  আঙিনায়। যা পরবর্তীতে অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু কিভাবে নিজেকে এতে সম্পৃক্ত করবেন সে বিষয়ে যথেষ্ট যাচাই ও সাবধান থাকা প্রয়োজন। 
বর্তমানে দেখা যায়, অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন, ফেসবুক, হাই ফাইভ, অর্কুড, ইয়াহু ম্যাজেঞ্জার চ্যাটিং থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসহ নানারকম ম্যাগাজিনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এক শ্রেণীর বখাটে তরুণ-তরুণী বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে প্রতারিত করে যায় নির্মল তরুণ-তরুণীদের বা এমনও দেখা যাচ্ছে  এ সমস্ত মাধ্যমদিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাহায্যে ব্ল্যাকমেইলও করছে। এক্ষেত্রে শুধু যে তরুণীরা প্রতারিত হচ্ছে তাই নয়।  সহজসরল তরুণদেরও বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার ফাঁদ বসিয়ে সর্বশান্ত করছে এক শ্রেণীর অসাধু তরুণী। হয়তো বা যার পেছনে আরো কিছু নষ্ট মানুষ রয়েছে। যারা এই মাধ্যমকে পুঁজি করে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ধরনের সমাজবিচ্ছিন্ন মুখোশধারী বন্ধুত্বের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রয়োজন যথেষ্ট সচেতনতা ও যাচাইয়ের প্রকট দৃষ্টি।  এ সমস্ত মাধ্যমে সম্পর্কের ফলে কোমলমতী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রচন্ড মানসিক চাপ ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এমনকি হত্যা, অপহরণসহ নানান ভয়াবহ ঘটনাও ঘটে থাকে। যা সমকালীন পত্রপত্রিকায় বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে এবং আসছে। 
আমাদের মানসিক চিন্তা-চেতনা ক্রমবর্ধনমান হারে পরিবর্তন হচ্ছে। প্রযুক্তির এই যুগে স্বাভাবিকই প্রত্যেকটা মানুষকে নিজস্ব অবস্থানে পৌঁছাতে হয় বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে। আর পেরুনোর পেছনে জড়িয়ে পড়তে হয় অসংখ্য মানুষের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে। এ  সম্পর্ক গড়ে ওঠে ততক্ষণ যতক্ষণ নিজস্ব অবস্থানে পৌঁছাতে সময় লাগে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের মধ্যে ক্ষণিকের ভালোলাগা, ক্ষণিকের ভালোবাসা। যা লক্ষ্যণীয় স্থায়ীত্বহীন। এছাড়াও লক্ষ্যণীয় যে আজকাল ছেলেমেয়েদের বিয়ে করার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার নামে তারা নানাভাবে জীবনকে উপভোগ করছে। যা বাঙালি সমাজবিরোধী। তারুণ্যের মন পরিবর্তনশীল আর বর্তমান প্রজন্মের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। কী তরুণ, কী তরুণী; প্রত্যেকেই আজকাল নিজেকে নিয়ে ভাবতে চায়। নিজস্ব চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে চায়। আর এ প্রাধান্য দিতে ক্রমাগত পরিবর্তন হয় বন্ধত্বের সম্পর্ক। তাই তো বন্ধু আর ভালোবাসা স্বল্প সময়ের জন্য ছুটে যায় রঙিন রিকশায়। চাইনিজ রেস্তোরায়, শপিংয়ে, পার্কে, পাহাড়ে, সমুদ্রে হয়তোবা কোন এক নির্জনতায়। কখনো বা এ সময়ের পেছনে হারিয়ে যায় সময়ের মানুষটিও।

0 comments:

Post a Comment