Tuesday, June 28, 2016

বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ


বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
আলী ফোরকান
বঙ্গোপসাগরে কি ঘটছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ মাঝে মধ্যেই বঙ্গোপসাগরের মাছ মরে ভেসে ওঠে। এই সমুদ্রে নিয়মিত যারা মাছ ধরে সেসব জেলেরা জানায়, অনেক সময় দেখা যায়, গভীর সমুদ্র থেকে বড় আকারের মাছ উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় ব্যাপক হারে চলে আসে। কখনো কখনো সমুদ্রের পানি এতবেশি দূষিত হয়ে পড়ে যে সমুদ্রের মাছগুলো আর অথৈ জলে থাকতে পারছে না। একবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন নদীর মোহনায় মাত্র তিন মিটার পানির গভীরতায় জড়ো হয়েছিল ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
পরিবেশিবদরা জানান, অনেক সময় সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। তখন মাছ গভীর সমুদ্রে থাকতে পারে না। সমুদ্রে শিল্পকারখানার বর্জ্য, জাহাজ ভাঙা শিল্পের বর্জ্যসহ বিভিন্ন বর্জ্য ফেলে পানিকে দূষিত করে ফেলছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজ বোঝাই করে বর্জ্য এনে ফেলছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজ বোঝাই করে বর্জ্য এনে ফেলা হয় বঙ্গোপসাগরে। প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলার কারণে বঙ্গোপসাগরের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। ১৯৯৮ সালে বিষাক্ত পারমাণবিক বর্জ্য বোঝাই একটি জাহাজ বঙ্গোপসাগরে বর্জ্য নিক্ষেপ করে নির্বিঘেœ চলে গিয়েছিল। জাহাজটি পৃথিবীর কোথাও যখন বর্জ্য ফেলতে পারছিল না তখন বঙ্গোসাগরে ফেলার সুযোগটি কাজে লাগালো। অথচ কেউ টেরই পেল না। তাছাড়া বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাহিনীর বর্জ্য শনাক্ত করারমতো আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই।
এছাড়াও ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে গ্রীক ব্যক্তিমালিকানাধীন সাইপ্রাসের পতাকাবাহী একটি জাহাজ ফিলোথে কক্সবাজার উপকূলে বিপুল পরিমাণ তেল দুষণ ঘটিয়েছিল। জানা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোরিয়াম কর্পোরশন অপরিশোধিত তেল পরিবহনের জন্য জাহাজটি ভাড়া করছিল। জাহাজে একটি গর্ত সৃষ্টি হওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ তেল সাগরের পানিতে ভেসে যায়। জাহাজটি ৯৩ হাজার ৬৬১ টন অপরিশোধিত তলে বহন করছিল। বাংলাদেশের নৌ সীমা ত্যাগ করার যথাযথ অনুমতি না নিয়েই তেল দূষণের জন্য দায়ী জাহটি নিরাপদ গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছিল। কিন্তু সংশিল্ট কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে আটক করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
একই ধরনের ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালে খুলনা উপকূলে। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তেল দূষণ দেখা যায়। এতে সমুদ্রের পরিমান মাছ মরে ভেসে ওঠে। এর সময়ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষাক্ত তেল ফেলার জন্য দায়ী জাহজটিকে শনাক্ত করতে পারেনি। নিয়মিত ভাবে এ ধরনের তেল ফেলার ঘটনা ঘটছে। এতে মারাত্মকভাবে সমুদ্রের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সামুদ্রিক উদ্ভিদ এবং মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হতে চলেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের দুটি সমুদ্রবন্দরে বছরে ৫০টিরমতো তেলের ট্যাংকার আসে এবং এগুলো বিপুল পরিমাণ তেল বঙ্গোপসাগরে ছড়ায়। কারণ ট্যাংকারগুলো বন্দরে পবেশ করতে না পারায় বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত অবস্থায় ছোট ছোট ট্যাঙকারের মাধ্যমে তেল খালাস করে। এতে বিপুল পরিমাণ তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে।
দেশীয় শিল্পের বর্জ্যও বঙ্গোপসাগরকে দূষিত করছে। কারণ দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানাই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নেই। পট্রগ্রামের শত শত শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশেল মোট চার হাজার ৪৪২ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ২৫২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানই উপকূলীয় এলাকায়। চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে কর্ণফুলি নদীর তুই তীরে। এ্ িিশল্প কারখানা বিপুল পরিমাণ অশোধিত বর্জ্য কর্ণফুলি নদীর দুই তীরে। এই শিল্প কারখানা বিপুল পরিমাণ অশোধিত বর্জ্য কর্ণফুলি নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। কর্ণফুলি নদীর দুই তীরে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সিমেন্ট কারখঅনা, ইস্পাত কারখানা, সাবান কারখানা, চামড়া কারখানা, তেল শোধনাগার, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রভৃতি। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কিলোগ্রাম বর্জ্য কর্ণফুলি নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের পানিকে দূষিত করছে। এছাড়া জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকেও বঙ্গোপসাগরের পানি দূষিত হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের পরিবেশকে রক্ষা করতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে অন্যথায় উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। কাজেই আাদের নিজেদের স্বার্থেই বঙ্গোপসাগরের পরিবেশকে বাঁচাতে হবে।

0 comments:

Post a Comment