Friday, June 24, 2016

ধনী ও গরিব শিশুর বৈষম্য বাড়ছে

ধনী ও গরিব শিশুর বৈষম্য বাড়ছে   
আলী ফোরকান
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগই শিশু। শিশুদের এই মোট সংখ্যার ৪৬ ভাগ অর্থাৎ ৩ কোটি শিশুই নিরঙ্কুশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদিকে দরিদ্র শিশুদের জন্য জাতীয় মোট বাজেটের ১.৪৪ শতাংশ মাত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত শহরের কর্মজীবী শিশু, রাস্তায় বসবাসকারী শিশু ও এতিম শিশুদের জন্য সাময়িকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ০.৭ শতাংশ। এমতাবস্থায় সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি অর্জনে চরম বাধার সম্মুখীন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, আর্থ-সামাজিক অসমতা এবং বৈষম্য দূরীকরণে নজর দিলে দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে দারিদ্র্য একটি প্রধান বাধা। আর এটা অর্জনে বাংলাদেশের জন্য কার্যকর কৌশল হলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করা। এদিকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় বড় ধরনের উন্নতি সাধিত হলেও বৈষম্য বাড়ছে বিস্তর। এ বৈষম্য বাড়ছে উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে। দেশের অভ্যন্তরে ধনী ও গরিব শ্রেণীর মধ্যে, গ্রামীণ ও নগর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। তা দূরীকরণের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও জাতীয় বাজেটে আরো বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউনিসেফের বৈষম্য বিষয়ে প্রকাশিত বার্ষিক বিশ্ব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে প্রায় ৩ কোটি শিশুই নিরঙ্কুশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। যার মধ্যে এক-চতুর্থাংশ শিশু বাস করছে চরম হতদরিদ্র অবস্থায়। তারা সবাই মৌলিক সামাজিক প্রয়োজন তথা আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি সংকট, স্যানিটেশন ও তথ্য পাওয়ার ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শহরের কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা হবে ১২ লাখ ৫০ হাজার। পথে বসবাসকারী ও শূন্য (০) থেকে ১৪ বছর বয়সী অনাথ শিশুর সংখ্যা হবে পৃথকভাবে ১০ লাখ করে। সূত্রে জানা যায়, শহরের কর্মজীবী শিশু, পথে বসবাসকারী শিশু এবং অনাথ শিশুরা রয়েছে সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে। অথচ এই দরিদ্র শিশুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ৯.৮ ভাগ, যা জাতীয় মোট বাজেটের ১.৪৪ শতাংশ মাত্র। এর মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত শহরের কর্মজীবী শিশু, রাস্তায় বসবাসকারী শিশু ও এতিম শিশুদের জন্য সাময়িকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বাজেটে ০.৭ শতাংশ রবাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আবুল বারকাত জানান, দারিদ্র্য নিরসনে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য প্রধান বাধা। শিশুদের ক্ষেত্রে এ বাধা বহুগুণ, যা তাদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে চরমভাবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনের কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিষয়ে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। তবে সরকারের পাশাপাশি দাতা গোষ্ঠীদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, ইউনিসেফ সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রায় সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুকেই মৌলিক সেবা প্রদান করা সম্ভব। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এ সংখ্যা ধরা হয়েছে ৪০ লাখ। কর্মসূচিতে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন সামাজিক নিরাপত্তা বাজেটের মাত্র ২.৪ ভাগ এবং জাতীয় উন্নয়ন বাজেটের দশমিক ৩৭ ভাগ। 

0 comments:

Post a Comment