Friday, June 24, 2016

শিশু শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন

শিশু শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন
আলী ফোরকান
আমরা এ দেশকে ক্ষুধামুক্ত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই। এ দেশের মানুষ অনেক মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। এ দেশের মানুষই তো নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। অতএব আমরা কিন্তু এখন আর হীনমন্যতার ভুগছি না। আমাদের একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে পরিচিত হতে হবে। সে জন্য দরকার আসলেই একটি উন্নত মানসিকতা। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যা যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান নিশ্চিত করা, অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। আমরা এও জানি, দারিদ্র্য কখনই শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারবো না, তবে একটি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। শিশু শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা হতে হবে জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা। যে শিক্ষা প্রতিটি শিশুকে,মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শেখাবে। শিক্ষার গুণগত বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। আমাদের রয়েছে বিরাট জনসংখ্যা। এই জনগোষ্ঠীকে সত্যিকারার্থে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি নজর দিতে হবে। মানুষকে জ্ঞানমনস্ক করতে হবে। মিথ্যা চাকচিক্য, গাড়ি-বাড়ি, রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। একটি বিষয়ে আমাদের গভীর মনোযোগ দিতে হবে, সেটি হচ্ছে জীবনমুখী শিক্ষা। অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষার প্রতি প্রচ- জোর দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাটি অত্যন্ত ভালো করে শিখতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে আমরা এখন বিরাট প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। এ বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমরা দেখি মধ্যপ্রাচ্য তথা অন্যান্য দেশে এখন বাংলাদেশিদের তুলনায় অন্য দেশের কর্মীরা বেশি সুযোগ পাচ্ছে। এর বড় কারণ ভাষাগত দুর্বলতা। আমি একজন ভাষা শিক্ষক হিসেবে লক্ষ্য করেছি, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বড় দুর্বলতা হচ্ছে তাদের উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপদ্ধতি, অর্থাৎ ক্লাসের পরিবেশ পরিবর্তন করতে হবে। কথোপকথনের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, ‘আমরা স্বপ্নভুক জাতি, আমরা স্বপ্ন খেয়ে বাঁচি।’ অর্থাৎ স্বপ্ন না দেখলে সৃষ্টি হবে না। সে জন্য স্বপ্ন অবশ্যই দেখতে হবে এবং তা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রবল চেষ্টা করতে হবে। এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তারা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যে পরিবর্তনের কথা তারা বলেছে, তা প্রমাণ করতে হবে তাদের কাজের মধ্য দিয়ে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ যুব সমাজ, যারা গগনচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিয়েছিল। এর কারণ তারা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছেÑ যেখানে থাকবে না ক্ষুধা, থাকবে না দুর্নীতি, থাকবে না মানুষে মানুষে বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি-কাটাকাটি; বরং এমনই এক বাংলাদেশ হবে যেখানে থাকবে নিরাপত্তা, থাকবে পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ। এমন একটি দেশের প্রত্যাশা করা কি খুব বেশি কিছু?

0 comments:

Post a Comment