Friday, June 24, 2016

শিশুদের নিরাপদ বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করুন

 শিশুদের নিরাপদ বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করুন
আলী ফোরকান
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। প্রত্যেক শিশুর অধিকার রয়েছে শিক্ষালাভের ও নিরাপদ বেড়ে ওঠার। দেশের সংবিধান ও জাতিসংঘের সনদ অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুদের অধিকার কতোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ব শিশু দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সব খাত থেকে শিশুশ্রম বিলোপ, কর্মজীবী শিশুদের জন্য কর্মভিত্তিক শিক্ষা চালু, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যবহার না করা, শিশুদের ওপর শারীরিক মানসিক নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অনাকাক্সিক্ষত হলেও বাস্তবতা হলো, এখনো এ দেশে শিশুরা জীবিকার তাগিদে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের দিয়ে হরতালে পিকেটিং, মিছিল-মিটিংয়ে ককটেল ছোড়ানোর মতো কাজও করানো হয়েছে। গ্রাম-শহরে অনেক শিশুই দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে; স্কুলে না গিয়ে তাদের রোজগারে নামতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে তাদের শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাতো বটেই, পড়ালেখার সুযোগ পাওয়া শিশুরাও শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পরিবারিক পরিমন্ডলে এমনকি স্কুলেও। স্কুলে শারীরিক শাস্তির অমানবিক ব্যাপারটি বন্ধে সম্প্রতি আদালত থেকেও নির্দেশ এসেছে, তারপরও এ চর্চা একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। সর্বোপরি রয়েছে সমাজের সার্বিক অস্থিতিশীলতাÑ সন্ত্রাস-নৃশংসতা; গণমাধ্যমে এসব যেভাবে প্রচারিত হয়, তাও শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে অনেকাংশেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় শহরাঞ্চলের শিশুদের এক নির্মম বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন। এ শিশুরা ফ্ল্যাট বাড়িতে বন্দি জীবনযাপন করে। তাদের বিনোদন কম্পিউটার গেমস ও ফাস্টফুড। কম্পিউটার গেমসগুলোর বিষয়বস্তুও সুস্থ কিছু নয়Ñ কেবল মারামারি-কাটাকাটি। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে খেলাধুলার সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে শহরের ক্রমেই দালানকোঠার দখলে যাচ্ছে শহরের মাঠ-ঘাট খোলা জায়গা। ভয়াবহ ও আত্মঘাতী এ প্রবণতার রাশ টানা যাচ্ছে না। এ দেশে শিশুদের অধিকার সুরক্ষা ও স্বাভাবিক বিকাশে বাধা প্রধানত আর্থসামাজিক পশ্চাৎপদতা। অন্যদিকে দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতা। গ্রাম-শহরে এখনো শিশুদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের জন্য কর্মভিত্তিক শিক্ষা চালুর কথা বলেছেন। জীবিকার তাগিদে তাদের যেন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত হতে না হয়। তাদের যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার না করা হয় এসব কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। গণমাধ্যমে, পোস্টার-প্রচারপত্রে ভায়োলেন্সের চিত্র যা শিশুর কোমল মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা না দেখানোর আহ্বান রেখেছেন তিনি। আমরা আশা করবো সংশি¬ষ্টরা সে আহ্বানে সাড়া দেবেন। তবে সমাজে যদি সন্ত্রাস ভায়োলেন্স চলতে থাকে, শিশুদের চোখের সামনে নৃশংস সব ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে শুধু গণমাধ্যম বা প্রচারমাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করে খুব সুফল আসবে না। তবে শিশুদের সুস্থ বেড়ে ওঠার স্বার্থে অবশ্যই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের কোথাও এমন কিছু করা উচিত নয় যা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশাপাশি শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার। শিশুদের জন্য কল্যাণমুখী সমাজ গঠন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করবো সরকারের এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংশ্লি¬ষ্ট সবাই 
আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন। পাশাপাশি সমাজের সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিশুদের স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে অবদান রাখবেন।

0 comments:

Post a Comment