Friday, June 24, 2016

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহহারা শিশুদের কথা

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহহারা শিশুদের কথা
আলী ফোরকান
প্রতিবছর ৫০টি শিশুর মধ্যে একটি গৃহহীন শিশু (বছরে প্রায় পনের লাখ) জন্ম নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির শিশুদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণা পরিচালনা করে ন্যাশনাল সেন্টার অন ফ্যামিলি হোমলেসনেস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা শিশুদের সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ওই সমস্যা চলমান অর্থনৈতিক সংকটের চেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার মতো বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। শিশুদের গৃহহীনতা দূর করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ সংগঠনটি প্রচারণা শুরু করে। একই দিন তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যার শিরোনাম হলো ‘আমেরিকাজ ইয়ননোস্ট আউটকাস্টস : স্টেট রিপোর্ট কার্ড অন চাইল্ড হোমলেসনেস’। ওই প্রতিবেদনে শিশুদের গৃহহীনতা এবং এর কারণ ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর্থিক সংকট, পারিবারিক গোলমাল, যুদ্ধ বা অন্য কোনো কারণে গৃহহীন পরিবারগুলো শুধু গৃহ হারায় না, তারা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নিজেদের ও শিশুদের ভরণপোষণ থেকেও বঞ্চিত হয়। উল্লেখ্য, ওই গবেষণা করা হয় ২০০৫-০৬ সালের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। কিছু কিছু তথ্য নেয়া হয় ২০০৭-০৮ সালের তথ্য থেকে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে জাতীয় জরিপ সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালে। গৃহহীন সমস্যা শুধু শহর এলাকার বলে ধারণা করা হলেও গ্রামীণ এলাকায় এ সমস্যা আরো প্রকট। সেবা, যাতায়াত ও বাসযোগ্য গৃহের সীমিত সুবিধার কারণে তা গোপন থাকে। সার্বিকভাবে বলা যায়, গৃহহীনদের শতকরা ৯ ভাগ হলো গ্রামীণ লোক। এ সংখ্যা থেকে মনে হয়, তাদের বিষয়টা গবেষণায় যথার্থভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ন্যাশনাল সেন্টার অন ফ্যামিলি হোমলেসনেসের বক্তব্য হলো : ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনের জন্যও একটা শিশু গৃহহীন থাকবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ ‘সবচেয়ে ক্ষুদ্র, সবচেয়ে স্পর্শকাতর নাগরিকদের’ সমস্যা সমাধান না করে অপরাধী ব্যাংকারদের প্রণোদনা দিতে ইচ্ছুক জাতি সম্পর্কে কী বলা যায়। গৃহহীন শিশুদের অনেকেই দুই বেলাই ক্ষুধার্ত থাকে। এর মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ শিশুই মনে করে তারা খাওয়ার জন্য যথেষ্ট খাদ্য পাবে না। এক-তৃতীয়াংশ শিশু একেবারেই কিছু না খেয়ে থাকার কথা বলে। গৃহহীনতার কারণে অসুস্থতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিশুদের তুলনায় গৃহহীন শিশুরা দ্বিগুণ সংখ্যায় স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। স্কুলে তারা একই গ্রেডে প্রায়ই দুই বার থাকে, স্কুল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয় অথবা তারা নিজেরাই ঝরে পড়ে। ফেডারেল সরকার, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় আর্থিক সহায়তায় শিশুদের গৃহহীনতার সমস্যা এক দশকের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু এর পরিবর্তে ওই সমস্যা বেড়েই চলেছে। কারণ ওয়াশিংটন তা উপেক্ষা করছে। বছরে অন্তত একবার ২.৩ মিলিয়ন থেকে ৩.৫ মিলিয়ন আমেরিকান গৃহহীন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আছে এককভাবে গৃহহীন লোক, সঙ্গীহীন তরুণশ্রেণী এবং শিশুসহ পরিবার। গৃহহীনদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৯৭ ভাগ স্থান পরিবর্তন করে। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বা আরো বেশি উগ্রতার শিকার হয়েছে, শতকরা ২২ ভাগ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। স্কুলপড়–য়া প্রায় অর্ধেক শিশু উদ্বেগ ও হতাশায় ভোগে, স্কুলপূর্ব বয়সের শতকরা ২০ ভাগ শিশু ভোগে আবেগজনিত সমস্যায়। ওই গবেষণায় গৃহহীনদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে এভাবে : এককভাবে গৃহহীন তরুণ-তরুণী (প্রধানত পুরুষ) শতকরা ৩৭ ভাগ, গৃহহীন বয়স্ক লোক শতকরা ২৩ ভাগ এবং গৃহহীন শিশু শতকরা ২০ ভাগ। এককভাবে গৃহহীন যুবক-যুবতীরা (প্রধানত পুরুষ) ক্ষুধা, অসুস্থতা ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতায় ভোগে। এরা ক্রমশ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং এদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ যুবক মাদক বা ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে। শিশুসহ গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা শতকরা ৩৪ ভাগ, এদের মধ্যে ৪১ ভাগ লোক মাদক বা ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের সমস্যা দূর করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার-এজেন্সি কাউন্সিল অন হোমলেসনেস সর্বপ্রথম একটা কৌশলপত্র কংগ্রেসের কাছে পেশ করে। কিন্তু তা কার্যকর বা আদৌ বাস্তবায়ন করা হবে কি না তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণয়নকারীরা এখন ব্যাংকারদের প্রণোদনা দেয়া ও যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাদের কাছে তৃণমূল পর্যায়ের কেউ চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। সুতরাং তাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা খুবই কম। এ অবস্থায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তরুণ-তরুণীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সরকার তাদের দিকে খেয়াল করছে না, সামাজিক সুবিধা কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনেক লোকই জানে না তাদের এবং তাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে। ‘নিউ ডিল/গ্রেট সোসাইটি প্রোগামস’-এর অধীন সব সময় ‘গণতন্ত্র ছিল মুষ্টিমেয় লোকের জন্য’ (মাইকেল প্যারেন্টি এভাবেই ব্যাখ্যা করেন), কখনোই তা সামাজিক পরিবর্তনের কল্যাণে বিশেষ করে দেশের গরিব ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য নিবেদিত হয়নি। এখন সময়ের পরিবর্তন এসেছে কীনা এমন প্রশ্নের উত্তর হবে একটাই আর তা হলো, ‘সম্ভবত না’। তথ্য সুত্র ওয়েব সাইট

0 comments:

Post a Comment