Saturday, June 25, 2016

জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যায়

জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যায় 
আলী ফোরকান
বাংলাদেশে প্রতিবছর জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করা গেলে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ানো নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। কম ওজনের শিশুদের জন্য মায়ের শরীর ইনকিউবেটরের কাজ করে। শুধু তাই নয়, এ সময় শিশু ও মায়ের পারস্পরিক ত্বকের সংস্পর্শের ফলে মায়ের প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ কম হয়। এছাড়া মাতৃদুগ্ধদান মায়ের অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া রোধ করে, পুনরায় গর্ভধারণ বিলম্বিত করে এবং জরায়ু, ডিম্বাশয়, স্তনের রোগ ও ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি কমিয়ে মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
মেডিকেল জার্নাল ‘লানসেট’ ও ‘বিডিএইচএস’র দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করা গেলে এদের মধ্যে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা সম্ভব। শিশুর জন্মের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা, সব শিশুকে সফলভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে মায়েদেরকে সহায়তা প্রদানসহ ১০টি পদক্ষেপ নিয়ে দেশে ২০১০ সালেই প্রথম সরকারিভাবে বিশ্বমাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। বিশ্বমাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাতৃদুগ্ধদান যেমন মায়ের অধিকার, তেমনি মাতৃদুগ্ধসহ পর্যাপ্ত খাবার ও সর্বোত্তম স্বাস্থ্য সুবিধা প্রাপ্তি শিশুর অধিকার। এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছেÑ জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করা, জন্ম থেকে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত কেবল মায়ের দুধ খাওয়ানো, ৬ মাসের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বয়স উপযোগী ঘরে তৈরি নিরাপদ ও উপযুক্ত খাবার খাওয়ানো। প্রত্যেক মা যেন তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন সেজন্য তাকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে, সঠিকভাবে দুধ খাওয়াতে সহযোগিতা দিতে হবে। পাশাপাশি কোনো মা শিশুকে বুকের দুধ দিতে অনীহা প্রকাশ করলে তার কাছে মাতৃদুগ্ধদানের উপকারিতা তুলে ধরতে হবে। মায়ের দুধ না খাওয়ালে তার সন্তান ও সে কী কী ঝুঁকির মধ্যে থাকবে তা তাকে বুঝাতে হবে। বিষয়টি শাশুড়ি, স্বামী ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য প্রভাবশালী সদস্যদেরও বুঝাতে হবে। মাতৃদুগ্ধদানের বাধাসমূহ দূর করা সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি সামাজিক সংগঠনেরই কর্তব্য। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (ক) ধারায় দেশের সব মানুষের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার সরকারি অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর সরকারই দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। গ্রামীণ জনপদে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নেয়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জনকল্যাণকর কার্যক্রম পরবর্তী জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করেছি। মন্ত্রী বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিটি শিশুর মাতৃদুগ্ধদান, নির্ধারিত বয়সের পর থেকে উপযুক্ত বাড়তি খাবার প্রদান ও মায়ের পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনকে শক্তিশালী করাসহ কয়েকটি দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এসব নির্দেশনার আলোকে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাজারজাত সকল গুঁড়োদুধকে মাননিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়েছে। আইন বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের শিশুখাদ্য ও পুষ্টির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন কর্মীকে এরূপ প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।
কৌটাজাত বা অন্যভাবে প্যাকেটজাত শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী ও বাজারজাতকারীদের নানারকম আকর্ষণীয় মোড়কের ব্যবহার ও মন ভোলানো বিজ্ঞাপন আমাদের শিশুদের অভিভাবককে অতি সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসব ব্যাপারে সঠিক তথ্য ও ধারণার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশব্যাপী মায়ের দুধের প্রচার, সংরক্ষণ ও সমর্থন বাড়ানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাতৃসদন, মেটার্নিটি, শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃপুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত সর্বক্ষেত্রে নিয়োজিত কর্মীদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেনÑ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পক্ষে প্রচারণাকে সফল করতে পারে এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি নবজাতক ও শিশুর সঠিকভাবে মায়ের দুধ গ্রহণের সম্ভাবনা অনেক শক্তিশালী করতে পারে।




0 comments:

Post a Comment