প্রতিটি শিশুই সহিষ্ণুতার শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠুক
আলী ফোরকান
শিশুর অসহিষ্ণুতাকে প্রায়শ হালকা চোখে দেখা হয়। কোনো কিছু না শিখিয়েই ভাবা হয় বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তেমন ধারণা আর বাস্তবতার মধ্যে প্রায়শ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। মানবিক গুণাবলি শিক্ষণের উপযুক্ত বুনিয়াদ শৈশবে গড়ে না উঠলে শিশু শুধু হাতে-পায়েই বেড়ে উঠবে, মনের দিক থেকে বড় হবে না। যেসব গুণ শিশুকে মনের দিক থেকে বড় করে তোলে, সহিষ্ণুতা সেগুলোর একটি। সমাজে অন্য দশজনের সঙ্গে চলতে গেলে এর কোনো বিকল্প নেই। সহিষ্ণুতার অভাব শুধু ব্যক্তিজীবনকেই বিষময় করে তোলে না, অশান্তি দগ্ধ করে সমাজজীবনকেও। আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে এর অসংখ্য নজির আমরা দেখতে পাই। তাই সামাজিক স্বার্থে প্রতিটি শিশুই যাতে সহিষ্ণুতার শিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠে, সে বিষয়ে বাবা-মাসহ শিশুর নিকটজনকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। শিশু যখন তার কোনো নিকটজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়, সহপাঠী, খেলার সাথি কিংবা শিক্ষক সম্পর্কে অভিযোগ করে তখন বাবা-মা কিংবা অভিভাবককে অবশ্যই তা অন্ধ আমলে না নিয়ে বরং তার যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার কোনো বোঝার ভুল থাকলে সে বিষয়ে তাকে শুধরে দিতে হবে। আর তাকে ঘিরে অন্যদের আচরণিক ত্রুটি- বিচ্যুতি থাকলে সে বিষয়েও তাকে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিতে হবে। দিতে হবে ভালোটাকে গ্রহণ আর মন্দটাকে বর্জনের শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুই আগামী দিনের পরিপূর্ণ মানুষ। আজ যদি সে অসহিষ্ণু প্রবণতা নিয়ে বেড়ে ওঠে তবে অবশ্যই আগামী দিনে তা তার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে অশান্তিময় করবে। আজ আপনার যে শিশুসন্তানটি আপনার ছোটখাটো কোনো কথার সূত্রে ক্রোধে দিনভর না খেয়ে থাকে, ঘরের কিংবা বাথরুমের দরজা আটকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে, বাড়ি ছেড়ে চলে যায় কিংবা ভাইবোনের সঙ্গে টিভি রিমোট বা অন্য কোনো পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে ঝগড়াঝাটি করে পথে বেরোতে চায়, তাকেও একদিন পরিবারের বাইরের কারো সঙ্গে নীড় রচনা করতে হবে। সহিষ্ণুতার সুশিক্ষা না থাকলে সে জীবন সুখের হবে না। শুধু মানুষ নয়, পরিবেশের অন্যান্য নিয়ামক-উপাদানের সঙ্গে তার অভিযোজন ঘটানো প্রয়োজন। শিশু ঘরের টিকটিকি, তেলাপোকা দেখে চিৎকার করে ওঠে বলে ঘরের সব তেলাপোকা, টিকটিকি মেরে ফেলা কিংবা পোকামাকড়হীন ফিটফাট পরিবেশে গিয়ে ওঠাই এর সমাধান নয়। মামুলি কীট-পতঙ্গ, গাছপালা, জীবজন্তুর সঙ্গেও শিশুর অভিযোজন ঘটাতে হবে। অভিযোজন ঘটাতে হবে শীত, তাপ,গন্ধ, দুর্গন্ধ, শব্দ, বৃষ্টি, বাতাস, অনায়াস অস্বস্তির সঙ্গেও। শৈশব থেকেই তাকে বোঝাতে হবে জীবন একতরফা কুসুমাস্তীর্ণ কোনো সত্তা নয়। প্রয়োজনে তাকে দিয়ে উপযোগী কায়িক পরিশ্রম করাতে হবে। অভ্যস্ত করাতে হবে সাধ্যাহরিত খাদ্যদ্রব্যে। স্রষ্টা মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব করে তৈরি করেছেন। সে ক্ষেত্রে মানুষের অভিযোজন বা সহিষ্ণুতা মানুষই শেখাবে। নি¤œ শ্রেণীর প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের মধ্যে বিবেক বুদ্ধি না থাকায় ¯্রষ্টা নিজেই সম্ভবত অভিযোজনের কাজটি করেন। উটের গলার থলি কিংবা ফণিমনসার পাতা ঝরে পড়া তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীই মূলত তাঁর কাম্য। সে লক্ষ্যে তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সময়, অজুহাত আর অনীহা-আলস্যে পিছিয়ে পড়ছি শুধু আমরা মানুষেরা। ভারসাম্যপূর্ণ সুন্দর পৃথিবীর স্বার্থে আমাদের প্রিয় শিশুদের সহিষ্ণুতা শেখাতে হবে।
0 comments:
Post a Comment