Sunday, June 19, 2016

সাইবার ক্যাফে : তারুণ্যের খোলা জানালা

সাইবার ক্যাফে : তারুণ্যের খোলা জানালা 
আলী ফোরকান
তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে তরুণ প্রজন্মের কাছে সাইবার ক্যাফে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। উন্নয়নপ্রত্যাশী আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, যুবক বৃদ্ধ প্রত্যেকের কাছেই ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সাইবার ক্যাফে। যার ফলশ্রুতিতে নগরীর বিভিন্ন অলিতে গলিতে ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠান। যে ক্যাফেগুলোতে ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা। যারা নিজেকে ডিজিটাল সময়ের সাথে সম্পৃক্ত করে গড়ে উঠতে চায় আধুনিক বিশ্বের একজন প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু সেখানে তারা কি করছে- আমরা কি তা আদৌ ভেবে দেখেছি! কি শিখছে তারা সেখানে, কতটুকুইবা অগ্রসর হচ্ছে, আমাদের যে অভিভাবক রয়েছে, স্কুল কলেজে যে কম্পিউটার বিষয়ক শিক্ষক রয়েছে তাদের দায়িত্ব নয় কি সাইবার ক্যাফের ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সঠিক ধারণা দেওয়া? আর শিক্ষকরাই বা কতটুকু সচেতন সাইবার ক্যাফে সম্পর্কে। তারা কতটুকু জানে, ইন্টারনেট ও ওয়েব সাইটের ব্যবহার। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি চালু থাকলেও সেখানে নেই কোন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ। আবার কম্পিউটার থাকলেও তা যথাযথ ব্যবহার হয় না। শিক্ষার্থীরা তীব্র উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সাইবার ক্যাফেগুলোতে ছুটে যায়। সেখানে দেখা যায় স্কুল পর্যায়ের ছেলেরা-মেয়েরা সহপাঠী বন্ধুদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে গেমসের প্রতিই বেশি ঝুঁকে পড়ে। ক্রমাগত তারা গেমস খেলতে থাকে স্কুল ফাঁকি দিয়ে। যেখানে স্কুল টাইমেও স্কুলব্যাগের তূপ পড়ে যায় ক্যাফেগুলোতে। আবার দেখা যায় তারা স্কুলড্রেস চেঞ্জ করে সারাদিনও পড়ে থাকে এ সমস্ত ক্যাফেতে। যা তাদের মস্তিস‹কে এক প্রকার নেশাক্রান্ত করে ফেলে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণদের একটা অংশকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া ক্রমাগত বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে অথবা বিভিন্ন দেশিবিদেশি মুভি ও পর্ণো ওয়েব সাইটগুলো সার্চ করতে অথবা এসির ঠান্ডা বাতাসে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে সময় কাটাতে দেখা যায়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। তাছাড়া আমাদের দেশের তরণরা ইন্টারনেটে করবেই বা কী? ইন্টারনেট সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট দক্ষতা ও জ্ঞান নেই। কোন্ ওয়েব সাইটটি প্রয়োজনীয়, কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, কিভাবে দেশ বিদেশের খবরাখবর নিতে হয়, কিভাবে ইমেজ নিতে হয়, কিভাবে ডাউনলোড করতে হয়, কিভাবে ই-মেইল ও বিভিন্ন তথ্যের আদান প্রদান করতে হয়, চাকরির খবর-ডাটা কালেকশন-নিউজ কিভাবে দেখতে হয় এ সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই রয়েছে যথেষ্ট জানার অভাব। ফলে সাইবার ক্যাফে বা ইন্টারনেট ইউজ সম্পর্কে তাদের ধারণা জন্মে যে, ইন্টারনেট হচ্ছে জাস্ট বিনোদনের অংশ; কিছু গান ডাউনলোড, গেমস, মুভি দেখা, চ্যাট করা ইত্যাদি।   
সাইবার ক্যাফের ব্যবহার সম্পর্কে ক্যাফে ইউজাররা কতটুকু সচেতন, ক্যাফে সম্পর্কে তাদের মস্তিস্কে কোন ধারণাটি রয়েছে?  তাহলে সাইবার ক্যাফে কি শুধু বিনোদনের অংশ, নাকি নিজেকে গড়ে তোলার এবং পৃথিবীকে জানার অংশ ? আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই একজন তরুণকে ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। নেটওয়ার্কের আওতা হচ্ছে বিতৃত আর ওয়েবভিত্তিক বিভিন্ন পেশার রয়েছে যথেষ্ট কদর। সুতরাং চলমান পৃথিবীর সাথে নিজেকে মানাতে হলে কম্পিউটারের ব্যবহার ও ধারণা থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দরিদ্র দেশে কতজনেরই বা কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য থাকে। তাই যাদের ব্যক্তিগত কোন কম্পিউটার নেই তারা সচরাচর সাইবার ক্যাফে যায় এবং প্র্যাকটিস করে। 
বর্তমানে প্রায় তরুণদের মস্তিসে‹ সাইবার ক্যাফে সম্পর্কে ধারণা, গেমস, চ্যাট, মুভি দেখা প্রভৃতির জন্যই তার ব্যবহার। তথ্য প্রযুক্তির জন্যই মূলত সাইবার ক্যাফের ব্যবহার এটা তাদের জানা প্রয়োজন। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে ইন্টানেটে আমাদের স্বল্পজ্ঞানকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু নেটসিন্ডিকেট বিশ্বব্যাপী সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ক্রাইম করে যায়। যাকে সাইবারসন্ত্রাসও বলা হয়। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইউজারদের তথ্য সংগ্রহ করে এ ধরনের ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইল করে যায়। যা দেশের ইন্টারনেটে স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন নেট-ইউজারদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বন্ধুত্ব করে ই-মেইলে, বিভিন্ন প্রকার ওয়েবসাইট ভিত্তিক ইমেজ ও ভিডিও, লটারি, স্কলারশিপ সহ নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করে যাচ্ছে হাজার হাজার ইউজারদের। এর ফাঁদে পড়ছে বিশেষ করে তরুণরাই। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের প্রয়োজন দক্ষ নেটওয়ার্কিং শক্তি।
এ ইন্টারনেট মানুষের হাতে আসার পর পৃথিবীটাও যেন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।  নেট-এ ঢুকে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবী ঘুরে আসা যায়। আপনার চাহিদা অনুযায়ী যে তথ্যটি চান তা পেতে পারেন একটা ক্লিকেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি সব ক্ষেত্রে আমাদের তথ্য প্রয়োজন। আর এ তথ্যভান্ডার হলো ইন্টারনেট। যা থেকে বঞ্চিত হলে আমরা সামনের দিকে এগুতে পারবো না। দরিদ্র এ দেশে ইন্টারনেটের সেই চাহিদা পূরণ করতে পারে একমাত্র সাইবার ক্যাফেগুলো। তাই প্রয়োজন ইন্টারনেটে শুধু গেমস, চ্যাট, মুভি নিয়ে সময় নষ্ট না করে গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব সাইট ও নেটওয়ার্কিং এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানা।



0 comments:

Post a Comment