Thursday, June 23, 2016

শিশুদের ভাগ্যন্নোয়নে

শিশুদের ভাগ্যন্নোয়নে 
আলী ফোরকান
দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ষোল কোটি। এর দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী দেশের শিশুর সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। অর্থাৎ এই পরিমান দেশের মোট জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ। দেশের শিশুদের কি ভয়াবহ অবস্থা, এতে কি আৎকে না উঠে পারা যায়? এদিকে বর্তমানে দেশে শিশু উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসুচি প্রতিপালিত হচ্ছে। কিন্তু এতে কি লাভ হচ্ছে? বরং আমরা দেখছি যে বর্তমান বাস্তব অবস্থা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দারিদ্র্য হ্রাসের কার্যক্রম সত্বেও কার্যত ব্যাহত হয়ে দারিদ্র্যতা বাড়িয়েছে। 
শিশু উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে এক-চতুর্থাংশ শিশু হচ্ছে চরম দরিদ্র। বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে দেয়া ইউনিসেফের একটি রিপোর্টে এতথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও দরিদ্রতা হ্রাসের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৬ সালের মধ্যে কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা দাড়াবে সাড়ে ৯ লাখ এবং অনাথ ও পথশিশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ লাখ। 
এই হিসাবেই বোঝা যায় যে, দেশের শিশুদের অবস্থা যে কি ভয়াবহ। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, দরিদ্রতা নিরসনে গৃহীত কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট সকলেই আশা করছে। শিশুদের এসব প্রকল্পে কাজ করার ফলে ৪৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে তিন কোটিরও বেশি শিশু উচ্চ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করছে। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ শিশুই হচ্ছে হতদরিদ্র।
শিশু উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প ও রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বিনিয়োগ কৌশল দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরানি¦ত করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। এসব শিশুকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তোলার জন্য দশ বছর মেয়াদি যে তিনটি কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে এর মাধ্যমে ৪৬ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দরিদ্রতা হ্রাস ত্বরানি¦তকরণে আর্থসামাজিক অসমতা নিরসন: সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বিনিয়োগ শীর্ষক ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রকাশিত দুটি গ্লোবাল রিপোর্টে এতথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের শিশুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু। এদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। অর্থাৎ মোট শিশুর মধ্যে চরম দরিদ্র হচ্ছে এক-চতুর্থাংশ। ২০০৫-০৬ সালে যেখানে শিশুশ্রমিক ছিল সাড়ে ৩৫ লাখ। সেখানে ২০১২ সালের মধ্যে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ এবং অনাথ ও পথশিশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ লাখ। এসকল কার্যক্রমে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের দরিদ্রতম শিশুদের ৬৪ শতাংশ স্যানিটেশন সুবিধা, ৫৯ শতাংশ তথ্য লাভের অধিকার, ৪১ শতাংশ বাসস্থান, ৩৫ শতাংশ পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত। আর দারিদ্র্য হ্রাসের বদলে দারিদ্র্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে, দরিদ্রতা নিরসনে গৃহীত কর্মসূচিতে সর্বাধিক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের চাহিদাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফ যৌথ উদ্যোগে তিনটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিভাগীয় শহরের কর্মজীবী শিশু, পথশিশু ও অনাথ শিশুদের বিকাশ, বসবাসের অবস্থার উন্নয়ন এবং জীবনমান বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হার্ড টু রিচের মেয়াদকাল ৪০ মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কর্মসুচিতে উদ্দ্যোক্তারা বলছেন যে, সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১০ লাখ ৭০ হাজার ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শহরে কর্মজীবী শিশু, ১১ লাখ ২০ হাজার পথশিশু ও সম্পদের নিচে থাকা ১৫ লাখ ২০ হাজার শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী অনাথ শিশুকে সেবা দিতে ১০ বছর মেয়াদি কর্মসূচি প্রয়োজন হবে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলেই আশা করছে। শিশুদের এসব প্রকল্পে কাজ করার ফলে ৪৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দরিদ্রতা হ্রাস কর্মসূচিতে তিন কোটিরও বেশি শিশু উচ্চ দারিদ্র্য সীমায় বাস করছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে এক-চতুর্থাংশ বসবাস করছে হতদরিদ্র অবস্থায়। তারা মৌলিক ও সামাজিক প্রয়োজন ও নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত। এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশু শহরে কর্মজীবী, রাস্তায় বসবাসকারী ও অনাথ। এই কার্যক্রম অনুযায়ী প্রতি বছর প্রতিটি গ্রুপের শিশুদের মধ্য থেকে ১০ শতাংশ সুবিধা বঞ্চিত শিশুকে কার্যক্রমের আওতায় আনা হলে সব শিশুর কাছে পৌঁছতে আনুমানিক ১০ বছর সময় লাগবে। ইউনিসেফ বলছে, আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের প্রায় সব সুবিধা বঞ্চিত শিশুকেই মৌলিক সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এই শিশুদের সংখ্যা হবে ৪০ লাখ। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনকালে এসব শিশুদের দারিদ্র্য সীমার ওপরে তোলা সম্ভব হবে বলে কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট বিষেশজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, এজন্য দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙার জন্য এদের ভাগ্যান্নোয়নে বিনিয়োগ করা দরকার। উন্নয়ন সহযোগীদের এ ব্যাপারে আরো বেশি সহযোগিতার আহ্বান জানান হয়। তারা বলেন, সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের দিকে নজর দেয়া। এর মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় চলমান দারিদ্র্য চক্র ভাঙা সম্ভব, যা দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরানি¦ত করতে পারে। দারিদ্র্য হ্রাস সরকারি নীতির কেন্দ্রবিন্দু। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে এমন একটি কৌশল বাংলাদেশের জন্য যৌক্তিক।  মূলকথা হচ্ছে, বিষেশজ্ঞ এবং ইউনিসেফ ও কর্মসূচি কর্তাগন খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে, শিশু তথা মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে দারিদ্র্য হ্রাস ত্বরানি¦ত করার কোন বিকল্প নেই। তাই দেশের এই বিপুল সংখ্যক শিশুদের ভাগ্যন্নোয়নে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙা দরকার। ফলে এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের দিকে নজর দেয়ার খুবই প্রয়োজন। যদিও ওই কর্মসূচি অনুযায়ী নিদিষ্ট সংখ্যক শিশুদের উন্নয়নে আনুমানিক সময় লাগবে ১০ বছর। কিন্তু এই দশ বছরে যে এর সংখ্যা বাড়বে, সে ব্যাপারে তাদের কোন দিক-নির্দ্দেশনা নেই এসব কর্মসূচিতে। বরং তাদের কর্মসূচিতে রয়েছে শিশুদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবার কথা। অর্থাৎ শিশুশ্রম বাড়বে। সমগ্র বিশ্ব যখন শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক তখন শিশু-কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাময় এই কর্মসূচি কি স্ববিরোধী নয়? আমাদের মনে রাখতে হবে, আগামী দিনের জন্যে ভালো কিছু চাইলে। আমাদের শিশুদের জন্য ভালো কিছু করতে হবে ।

0 comments:

Post a Comment