Thursday, June 23, 2016

শিশুরা তো স্বর্গীয়

শিশুরা তো স্বর্গীয়
আলী ফোরকান 
শিশু বলতে আমরা বুঝি শিশুই। আমারও হতে পারে, আপনারও হতে পারে। আমার এবং আপনার শিশুরা যদি আদর যতœ করি। বেড়ে উঠতে গিয়ে নানারূপ সুবিধা ভোগ করে। তাহলে তো কোন কথাই নেই। যদি ওদের জšে§র কারণে ওদের বেড়ে উঠায় ব্যাঘাত ঘটে। যদি ওরা সুবিধা বঞ্চিত হয়। যদি ওরা পথকলি বা নোংরা বস্তির ছেলেমেয়ে হয় তাহলেও কথা থাকে। ওরাই সুবিধা বঞ্চিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ শিশু। জাতিসংঘের দৃষ্টিতে ১৮ বছরের নিচে সব শিশুই সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু সে অধিকার ওদের দেবে কে? কিভাবে দেবে? মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আছে, দুস্থ মায়েদের জন্য ভাতা আছে। শিশুদের জন্য তেমন কোন সাহায্য ভাতা বা দান অনুদান দেখি না। ‘শিশুদের জন্য খাদ্য’ শিশুদের জন্য বাসস্থান, শিশুদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি প্রকারের সুবিধা আমাদের দেশে দেখা যায় না। ওদের মাতা-পিতা যা পায় তা থেকেই ওরা ভাগ পায়। পিতা না থাকলে মাতার জোরে শিশুরা পরিচিতি পায়। মাতা-পিতা কেউ বেঁচে না থাকলে ওরা কেবল সুবিধাবঞ্চিত শিশুই থাকে। একেবারে পরিচয়হীন। ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন একেক শিশু। পত্রিকান্তরে একটা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ওপর একটা প্রতিবেদন দেখলাম। শিশুদের একটি গ্রুপফটো সংযোজিত হয়েছে সেই প্রতিবেদনের সঙ্গে। চরাঞ্চলের শিশুরা, বিশেষ করে কন্যা শিশু, কিভাবে বেড়ে উঠছে, তা চোখে একবার দেখলেই বুঝতে পারা যায়।আমাদেরই ঘরে, কাজের মেয়েটির দিকে তাকাই না কেনো, দেখবো, সুবিধাবঞ্চিত সেই শিশুই। কাজে ত্রুটি ধরা পড়লে, টুকিটাকি জিনিসপত্র চুরি হলে, কোনকিছু ভেঙ্গে ফেললে ওদেরকে ধরে মার দেয়া হয়। কখনো বা সেটা দারোগা পুলিশের আওতায় পড়ে। মধ্যবিত্ত গৃহিনী তখন নানারূপ কেচ্ছা কাহিনী বলার চেষ্টা করেন। তবে যে কাজের মেয়েটি গায়ের ছ্যাঁকা দাগ, হাত পায়ের বাঁধনের দাগ, আরো নানা রূপ চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার দিকে গৃহিণী তাকান না। ফোঁস ফোঁস করে আপনার জ্বালা আপনি মেটাতে থাকেন সত্যমিথ্যা নানারূপ ফোড়ন কেটে। আজকাল সংঘবদ্ধ চোর ও ডাকাতের সহযোগী শিশু। খুনি, গুন্ডা, ডাকাতের সহযোগী শিশু বেরিয়ে পড়েছে। ওরা গৃহিণীর সোনাদানা হাতিয়ে নেয়, সংসারের অসতর্কতা থাকলে বা শৃঙ্খলার অভাব ঘটলে ওদের পোয়া বারো। ওরা সেই ফাঁকে উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কঠোর জীবন সংগ্রাম ইত্যাদি নিয়ে সাংবাদিকের কলম চালিত হলেও সব শিশুর কথা জানা হয় না। সংসারে আরো শিশু আছে। কেউ কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্ত তাদের বেলা কিন্তু কেউ কিছু বলে না বা লেখে না। ওরাও শিশু। রাশিয়ায় একজন প্রাজ্ঞ ভদ্রলোকের কাছে শুনেছিলাম, শিশুরা চিরকালই শিশু। আমি আপনি শিশু থেকে নানা সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বড় হচ্ছি। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, উকিল হচ্ছি। কিন্তু সমাজের শিশুরা তো শিশুই রয়ে গেলো।’ হ্যাঁ, সমাজের শিশুরা শিশুই থেকে যায়। ওরা বড়দের কাছে যা দেখে ও শোনে তাই ওরা নকল করে। ওরা মাতৃগর্ভ থেকে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। স্বাস্থ্য নিয়ে এলেও তা গড়েপিটে মানুষ করতে হয়। এ কাজটা করেন স্নেহময়ী জননী। মা-আমাদের সবারই প্রথম ধাত্রী। তিনি গড়েপিটে মানুষ না করলে আমরা মানুষ হতাম না। যারা এটা পারেন না, তারা শিক্ষকের সাহায্য কামনা করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের এ কর্তব্য সাধন করে দিতে হয়। বেত শূন্য শিক্ষকের চলাফেরার ভঙ্গিটি হতে হবে আকর্ষণীয়। মুখে থাকবে সব সময়ের হাসি এবং মধুর কথা। তবেই না শিশু তার কাছে মুখ খুলবে। জানাবে তার মনের কথাগুলো। আমি একটা বইয়ে পেলাম, ‘যদি হাতে একটা অস্ত্র থাকতো তাহলে ওকে শেষ করে ফেলতাম।’ প্রতিহিংসার আগুন এমনি করে জ্বলে শিশুদের অন্তরে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি জেলা তো বটেই, বাংলাদেশ অনেক বড়। গোটা দেশেই শিশুরা জš§গ্রহণ করে। প্রতি ঘন্টায় দেশের কোথাও না কোথাও শিশুর জš§ হচ্ছে। এমনি করে শিশু- সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা জš§ নিচ্ছে শহরের বস্তিঘরে, পথে প্রান্তরে, গ্রামের কুঁড়ে ঘরে, হতদরিদ্রের সংসারে মুখ বেড়ে চলেছে। ওরা কেউ সুবিধাপ্রাপ্ত কিংবা সুযোগভোগী নয়। ওদের জš§ মাত্র দু:খের কান্না, মৃত্যুতেও দু:খের কান্নাই শেষ কথা। খেতে পায় না, তাই পড়তে পারে না। পড়তে গেলে মাথা খাটাতে হয়। ওটা ওরা পাবে কোথায়? ওদের দু:খের নাম হচ্ছে ‘নারী শিশু’।বিরাঞ্চলের তুলনায় চরাঞ্চলেই শিশুদের প্রতি অযতœ অবহেলা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বেশি। গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে বেশিই। তাই শহরের শিশুরা অতিঅল্প বয়সে হয়ে ওঠে অতি সেয়ানা। ‘নাক টিপলে দুধ বেরোয়’ এমন শিশুর মুরোদ নেই দু’ আনা অথচ বউ চায় সেয়ানা।’ কোন্ দিকে নেই সুবিদা বঞ্চিত শিশুরা? অপরাধ জগতের কথা আগে বলেছি, আধুনিক কম্পিউটার দিয়ে গোটা দেশের ‘বারোটা বাজাতে’ সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের জুড়ি নেই। শিশুদের মাঝে ‘‘ হ্যাডস্ অর হ্যাভন্ট্ন্স’ থাকে না। ধনী-গরিব পার্থক্য থাকে না বিশেষ করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে। শিশুরা তো স্বর্গীয়। ওদের মধ্যে কোনরূপ বিষবাষ্পই টেকে না। আমি যা দেখেছি, তা অভাবের কারণে ঝরে পড়ে প্রাইমারি ছাত্ররা। এ ব্যাপারে সরকারকে দৃষ্টি দেয়া দরকার।  

0 comments:

Post a Comment