Sunday, June 12, 2016

ঢাকা কে যানজট মুক্ত করার সহজ উপায়

ঢাকা কে যানজট মুক্ত করার  সহজ উপায় 
আলী ফোরকান
ঢাকা মহানগরীর মানুষ এখন যে দুটো সমস্যা নিয়ে ‘যারপরনাই’ আক্রান্ত। তা হচ্ছে বিদ্যুৎ আর যানজট। বিদ্যুতের কথা বাদ দিলে যানজট এখন আমাদের সময়, মানসিক চাপ, অর্থ ইত্যাদি নানাবিধ কষ্ট দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। বলতে গেলে কোনো রাস্তা দিয়েই এখন আর সহজে চলাচলের উপায় নেই। প্রায় প্রত্যহ যানজট সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় নানা লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যা তা-ই রয়ে যাচ্ছে বরং মনে হচ্ছে দিনকে দিন সমস্যাটি আরো প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে, ঢাকার রাস্তা নাকি প্রশস্ত নয়। কথাটির মধ্যে আংশিক সত্য থাকলেও পুরোপুরি সত্য কতটুকু তা বিবেচনার দাবি রাখে। জনবহুল হংকংয়ের রাস্তা ঢাকার চেয়ে প্রশস্ত এ কথা কেউ দাবি করতে পারবে না। হংকংও ঢাকার মতো জনভারে ভারাক্রান্ত। কিন্তু সেখানে যানজট এত প্রকট নয় কেন? তাহলে ঢাকায় এ সমস্যা এত প্রকট কেন? যার জবাব কিছুটা এরূপ ঃ ঢাকার যে রাস্তাগুলো আছে তার প্রায় অর্ধেক (চার লেনের মধ্যে দুই লেন) দখল করে রেখেছে গাড়ি বা রিকশা পার্কিং। পার্কিং ছাড়াও প্রথম লেনে নানাবিধ জিনিসপত্র, ঠেলাগাড়ি, মেরামত কারখানা, ভবঘুরে দোকানের মালামাল ইত্যাদি রেখে। ফুটপাথ দখল করেছে হকার ছাড়াও বর্ণিত জিনিসপত্র। তাই ঠেকায় পড়ে কিংবা অভ্যাশবসত বেশির ভাগ মানুষ ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তার প্রথম বা দ্বিতীয় লেন দখল করে হাঁটছে। এ ছাড়া শহরে চলাচলকারী সিটিং ও লোকাল বাসগুলো যত্রতত্র বিশেষ করে পুলিশের সামনেই মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে ও নামাচ্ছে। যেন দেশটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। কখনো কোনো কোনো বাস সমশ্রেণীর বাসের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে ঠিক রাস্তার মাঝে বা দ্বিতীয় ট্রাকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কয়েক মিনিটের মধ্যে সাধারণ গাড়ির দীর্ঘ লাইন লেগে যাচ্ছে। তা ছাড়া বিশেষ সুবিধা না থাকাতে কোনো কোনো যাত্রীবাহী বাস হঠাৎ করে ইউ-টার্ন দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, একটা বাসের ইউ-টার্নের কারণে কমপক্ষে  ১০০টি গাড়ির লাইন পড়েছে। নিন্দুকরা বলেন, পুলিশ নাকি ফুটপাথ ও পরিবহন কোম্পানিগুলো থেকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা পান। এই এরা নিজেরা এই সমস্যার ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না।
এ সমস্যা সমাধানে নি¤œরূপ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, যা প্রথমত বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ০১. অবিলম্বে চলাচলযোগ্য সব রাস্তার সব লেন মুক্ত করতে হবে। এ জন্য পার্কিং জোন ছাড়া কেউ কোনো রাস্তায় যাত্রী নামানো-উঠানো ছাড়া গাড়ি-বাস-রিকশা থামিয়ে রাখতে পারবে না। যাত্রী নামানো বা উঠানোর জন্য দুয়েক মিনিট গাড়ি থামাতে পারবে। যাত্রী ওঠানো-নামানোর পর সংিিশ্লষ্ট গাড়ি নিজস্ব গ্যারেজ বা পার্কিং এলাকায় পার্ক করার জন্য চলে যাবে। দুয়েক মিনিটের বেশি থেমে থাকা গাড়িকে ‘টানা গাড়ি’ দিয়ে টেনে নির্দিষ্ট স্থানে (যেমন প্যারেড স্কোয়ারে) নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে জরিমানা দিয়ে (যেমন দৈনিক ১০০০ টাকা) গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হবে। ০২. সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ফুটপাথমুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে হকারদের নির্দিষ্ট এলাকায় বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পথিক যেন ফুটপাথ ছাড়া রাস্তা দিয়ে না হাঁটে তার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ০৩. ঢাকা শহরে চলাচলকারী বাস কোনো অবস্থাতেই নির্দিষ্ট টপেজ ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানোর কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে যাত্রীর জন্য কোনো বাস কোথাও অপেক্ষা বা ডাকাডাকি করতে পারবে না। এ জন্য আইনকে কঠোরতর করতে হবে। প্রয়োজনে আইনভঙ্গকারী বাস আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ও ড্রাইভারকে তিন-সাত দিনের জেলসহ অর্থদন্ড ও লাইসেস স্থগিত ও বাতিল করার আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। ০৪. ইউ-টার্ন যথাসম্ভব কমাতে হবে। ০৫. আর ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম মাথা পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও শুধু হেঁটে যাওয়ার জন্যে ‘হাঁটা উপযোগী ফুটপাথ’ (রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য প¬াটিক ছাউনিসহ) তৈরি করতে হবে এবং মিডিয়াগুলোতে ‘হেঁটে চলার’ উপকারিতার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার ও জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যাতে ঢাকার ৫০-৭০ শতাংশ মানুষ কাক্সিক্ষত গন্তব্যে হেঁটে চলার তাগিদ অনুভব করেন এবং অন্তত গন্তব্যের এক-দেড় ঘন্টা আগে রওনা দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
মনে রাখতে হবে, সিঙ্গাপুরের মতো জনবহুল দেশে ‘দোররা’ মারার মতো কঠোর আইন বিদ্যমান থাকাতে দেশটি সুশৃ´খলভাবে চলছে। আমরা অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন, দুর্নীতিবাজ জাতি হয়েও গণতন্ত্রের মতো ‘রিল্যাক্স’ আইনে চলছি। বিধায় সঙ্কট দিনকে দিন ঘনীভূত হচ্ছে। আপাতত গণতন্ত্রকে কিছুটা স্তিমিত রেখে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করে ‘দুষ্টচক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তারপর ‘জাতে উঠলে’ তখন প্রজাতন্ত্রের সবার মানবাধিকার রক্ষাসহ গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই ঢাকা কে যানজট মুক্ত করার  সহজ হবে।

0 comments:

Post a Comment