Monday, June 13, 2016

শিশু-কিশোরের মুখে হাসি ফুটুক

শিশু-কিশোরের মুখে হাসি ফুটুক
আলী ফোরকান
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ছোটবড় শহরে দরিদ্র পরিবারের লাখ লাখ শিশু-কিশোর বড় হয় অযতœ-অবহেলার মধ্য দিয়ে। ওদের পেটে খাবার নেই, পরনে বস্ত্র নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে ওরা বঞ্চিত। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ লাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষার বাইরে থেকে যায়। লাখ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার হয়। আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। সামাজিক নিরাপত্তার লেশমাত্র নেই পথশিশুদের জীবনে। ওরা রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, অফিসের বারান্দা ও ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটায়। নদীভাঙন, মঙ্গাপীড়িত এলাকার পরিবারের শিশু-কিশোরদের নিজস্ব কোন ঠিকানাও নেই। শিশুকাল থেকে মা-বাবার আহ্লাল-মমতা বঞ্চিত হয়ে ওরা পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতিকূল পরিবেশে নানা অবহেলা, বঞ্চনা ও নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে এক সময় অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। কখনও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় হয়ে ওঠে বেপরোয়া। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত শিশু-কিশোররাই প্রথমে অপরাধ জগতের নবীন সদস্য হয়ে কালক্রমে শীর্ষস্থানে চলে যায়।
সম্প্রতি রাজধানীতে সংঘটিত বেশ ক’টি বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল উঠতি বয়সের কিশোর। এ বয়সের অনেক কিশোর প্রতিনিয়ত অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়েই। ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও অস্ত্র বহনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকার উদ্বেগজনক তথ্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের অপরাধী হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে একশ্রেণীর সন্ত্রাসী ও অপরাধ চক্রের ভূমিকা। সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল পরিবারের শিশু-কিশোরদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টানছে। সাহসী ও বুদ্ধিমান শিশু-কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো মারাত্মক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য ওদের দেয়া হয় লোভনীয় অংকের টাকা। অভাব-অনটনের পাশাপাশি অর্থের প্রলোভনে ধীরে ধীরে শিশু-কিশোররা অপরাধ জগতের স্থায়ী সদস্য হয়ে যায়। কেউ কেউ হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী। মাদক ও অস্ত্র বহনের মতো অপরাধমূলক কাজে জড়িত অনেক কিশোর হয়ে পড়ে মাদকসেবী। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের শ্রমজীবী শিশু-কিশোরদের কমমূল্যের রাবার সলিউশন (যাকে স্থানীয় ভাষায় ডান্ডি বলা হয়) নিঃশ্বাস টেনে নেশাগ্রস্ত হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বস্তিবাসী অথবা ছিন্নমূল পরিবারের এসব সন্তান সাধারণত ভাঙ্গাড়ি টোকায় বা রিকশার গ্যারেজে কাজ করে। অনুশাসনের অভাবে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওরা কঠোর শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ ব্যয় করে নেশার পেছনে। অবশেষে জড়িয়ে যায় নানা অপরাধে। এ থেকে তাদের আর ফিরে আসার সুযোগ থাকে না। গত বছর জাতীয় শিশু দিবসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের বর্তমানকে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করারও আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘের শিশুসনদ যথাযথভাবে মেনে চলার নিশ্চয়তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন। তার এ আশ্বাস শিশু-কিশোরদের অপরাধ জগৎ থেকে বের হয়ে আলোর পথে ফিরে আসতে পথ দেখাক। দেশে শিক্ষার দ্বার ক্রমে অবারিত করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার অধিকার দেশের প্রতিটি শিশু-কিশোর যাতে ভোগ করার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা হোক। দেশ গড়ার কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার জন্য পপ্রস্তুত হোক আমাদের অবহেলিত শিশু-কিশোররা। এ দেশের অধিকার বঞ্চিত শিশু-কিশোররা প্রয়োজনীয় খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, বস্ত্র ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয়। ওরা পাক সামাজিক নিরাপত্তা ও বাঁচার অধিকার। প্রতিটি শিশু-কিশোরের মুখে হাসি ফুটুক, আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক তাদের জীবনÑ এটাই জনগণের প্রত্যাশা।


0 comments:

Post a Comment