Thursday, June 30, 2016

পরিবেশ: পরিবারে সচেতনতা

পরিবেশ: পরিবারে সচেতনতা
আলী ফোরকান
আমাদের চিরচেনা এ পৃথিবী। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ধ্বংসের দিকে। এর পিছনে মূল কারন পরিবেশ দূষণ। পবিবেশ দূষণ, গাছপালার নিধন আমাদের জলবায়ুকে করে তুলছে প্রতিকূল। গ্লোবাল ওয়ার্মিং আজ সারা বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ। আমাদের এ পরিবেশ দূষণ ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে করে তুলছে বসবাসের অযোগ্য।  তাদের ভবিষ্যত জীবনকে করে তুলছে অনিশ্চিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের সন্তানদের ভোগ করতে হবে আমাদের কৃতকর্মের শাস্তি। সারা পৃথিবীর তুলনায় বাংলাদেশ একটি অতি ক্ষুদ্র দেশ। তবে আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে প্রতিটি দেশকে হতে হবে পরিবেশ সচেতন এবং পৃথিবীকে করে তুলতে হবে চিরসবুজ ও দূষণমুক্ত। একজন মানুষের মধ্যে মানবজাতি রক্ষার্থে এই পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণ রোধের মূল্যেবোধ তৈরীতে তার মায়ের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ নয়। একজন মাই পারে তার সন্তানের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত রাখতে। একজন শিশুর মধ্যে তৈরীকৃত এ মূল্যবোধ তাকে সারাজীবন পরিবেশ দূষন থেকে বিরত রাখবে। একজন মাই তার সন্তানকে প্রথম গাছকে ভালবাসা শেখায়। শিশু তার মায়ের কাছ থেকেই জানে যে প্রতিটি গাছের জীবন আছে। একটি ছোট গাছ মাটি থেকে উপড়ে ফেলা আর একটি প্রাণ হত্যা করা একই কথা। আমরা প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরে গাছ কেটে আর বিল্ডিং এর পর বিল্ডিং তুলে এ শহরকে করে তুলছি বসবাসের অনুপোযোগী। যে পরিমান গাছ প্রতিনিয়ত এ দেশে কাটা হচ্ছে তার সমপরিমান তো নয়ই খুবই সামান্য পরিমান গাছ বপন করা হচ্ছে । একজন মা তার শিশুকে গাছ বপনে আগ্রহী করে তুলতে পারে। ঢাকা শহরের বাড়ির সামনে জায়গার অভাবে গাছ বপনের উপায়ই নেই। তবুও উচু উচু বিল্ডিংগুলোর ছাদ হয়ে উঠতে পারে এক একটি সপ্নের বাগানঘর। প্রতিটি বাসার ছাদে সে ব্যাবস্থা থাকা উচিৎ। যেন মা ও সন্তানেরা মিলে ছোট খাট এক বাগান তাতে তৈরী করতে পারে। বর্তমানে শুধু ঢাকা শহর নয় সবুজ শ্যমল বাংলাদেশকে ধূসর অন্ধকার করে তুলতে শহরের লোকজন বহু গাছপালা কেটে গ্রামে গ্রামে গড়ে তুলছে কারখানা, ফ্যাক্টরী। যা প্রতি মূহুর্তে দূষিত করছে পরিবেশকে। কিভাবে সর্বনিম্ন দূষণের মধ্যে দিয়ে এই কারখানা, ফ্যাক্টরীর কাজগুলো করা সম্ভব তা আবিষ্কার করতে হবে। আমাদের দেশকে বাচাতে হলে সে নিয়ম অনুসরণ করতে হবে । ঢাকা শহরের রাস্তার আইল্যান্ডে লাগানো হয়েছে গাছের সাড়ি । সেসব গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া হয় না। সেখানে পরে থাকতে দেখা যায় বাড়ি ঘরের নানা আবর্জনা। মানুষদের উপলব্ধি করতে হবে যেখানে সেখানে এভাবে ময়লা ফেলে সম্পূর্ণ ঢাকা শহরকেই আবর্জনার শহরে পরিনত করা নিজ জীবনের ধ্বংস কে ডেকে আনা। শিক্ষা জীবনের শুরু শিশুকালে। একজন মাই তার সন্তানকে বড় করতে করতে গাছের জীবনের মূল্য বোঝানো থেকে শুরু করে গাছ লাগানো।  যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা , কি কি উপায়ে পরিবেশ দূষিত হয় তা বোঝানো। বড় হয়ে যেন সেসব কাজ থেকে বিরত থাকে তার নিশ্চয়তা দিতে পারে। আমাদের সমাজের খুব সাধারন দৃশ্য একজন শিশু তার বাবা মার সাথে পার্কে গিয়ে খেলছে , শিশু আইসক্রিম খাচ্ছে তো বাবা মা বাদাম, মুড়ি খাচ্ছে। খাওয়া শেষে দেখা যায় সন্তান সহ বাবা মা সবাই বাদামের খোসা , আইসক্রিমের খোলস,পলিথিন ব্যাগ সবই পার্কের মাটিতে ফেলছে। যা পার্কের চিরসবুজ পরিবেশকেও দূষিত করছে । এই সমস্যার সমাধান সম্ভব তখনই যখন বাবা , মা পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন এবং সন্তানকেও তা শেখাবেন। বিদেশে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার জরিমানা বহু ডলার। কিন্ত বাংলাদেশে এভাবে অর্থ দিয়ে নয় বরং সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এ বাংলাদেশের প্রকৃতির মূল্য অনুধাবনের মধ্যে দিয়েই এ দেশের জনগণ কে পরিবেশ সচেতন করে তুলতে হবে। আজকের শিশু কালকে দেশের বড় ব্যাবসায়ী , চাকরিজীবী শিক্ষক। দেশের প্রতিটি শিশুর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ভবিষ্যতের দেশের জনগণ। আমাদের দেশকে চিরসবুজ রাখতে প্রতিটি শিশুর মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা ও বৃক্ষপ্রেম গড়ে তুলতে হবে এবং যার দায়িত্ব সে পরিবারের মায়ের উপরই। প্রতিটি মা তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হলেই বাংলাদেশ চিরসবুজ থাকবে এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের কারনে নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এ দেশের দিকে ধেয়ে এলেও গাছ ও পরিবেশ আমাদের সকল দূর্যোগ থেকে বাচাতে সাহায্য করবে।

0 comments:

Post a Comment