Sunday, June 12, 2016

প্রসঙ্গ যানজটঃ বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ

প্রসঙ্গ যানজটঃ বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ
আলী ফোরকান
ছোটবেলায় আমরা যে ঢাকাকে দেখেছি। এখন আর সেই ঢাকাকে খুঁজে পাই না। মনে আছে লাইট পোস্টকে তখন ল্যাম্প পোস্ট বলা হতো। মিউনিসিপালের লোক এসে সন্ধ্যায় বাতি জ্বেলে দিয়ে যেতেন আবার অতি প্রত্যুষে এসে তা নিভিয়ে যেতেন। ৫০- ১০০ গজ দূরে দূরে এ ল্যাম্প পোস্টগুলো থাকত। তখনকার দিনে শহর বলতে পশ্চিমে বাবুবাজার/ শোয়ারীঘাট, পূর্বে মিল ব্যারাক পর্যন্ত এর সীমানা। উত্তরে কাকরাইলের পরেই ছিল ঘন বন। যানবাহন বলতে রিকশা তখনো আসেনি। ঘোড়াগাড়িই ছিল তখনকার সময় প্রধান ও একমাত্র বাহন। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে নির্মিত ঘোড়ার গাড়ির আদেলটার দিকে তাকালেই মনে হয় আবার সেই বহু পুরনো দিনে চলে গেছি। যেসব ঘোড়া গাড়ি চলত সেগুলো সাধারণত একটি ঘোড়া দিয়ে চালানো হতো। তবে বিশেষ বিশেষ সময় বাহারি ঘোড়া গাড়ি সজ্জা করে দুই ঘোড়ার গাড়িও চলত। এখন যেমন অলিগলিতে রিকশা গ্যারেজ গজিয়ে উঠেছে। তখনকার দিনে রাস্তার আশপাশে খালি জায়গায় স্বল্প পরিসরে ঘোড়া গাড়ির জন্য স্ট্যান্ড বানিয়ে সেখানে ঘোড়াদের ছোলা-ভুসি খাওয়ানো হতো। গারোয়ানরা এদের যতœ নিতেন। ফরাশগঞ্জে নদীর পাশেই আমাদের বাসা ছিল। তাই দেখেছি ঘোড়াগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও গোসলের জন্য নদীর পানি ব্যবহার করা হতো। ঘোড়ার গাড়িতে করে বিভিন্ন সময় বাবার হাত ধরে ৪ আনা ভাড়ায় সদরঘাট থেকে ফরাশগঞ্জে গিয়েছি।
ঘোড়ার গাড়ি চালকদের অধিকাংশই ছিলেন পুরনো ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা। এ পেশায় এদের নিয়োজিত হওয়ার একটা ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে- নবাব কাটরায় নবাবরা থাকতেন। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে যখন নবাবী ও জমিদারি স্থিমিত হয়ে আসছিল। তখন নবাব বাড়ির অনেকেই ভারতে ও পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এর প্রধান কারণ হলো এদেশে তারা বেড়ে উঠলেও এদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তারা নিজেদের পরিপূর্ণভাবে খাপ খাওয়াতে পারেননি। এমনকি ভাষাটাও ছিল দিল্লির উচ্চ মানসম্পন্ন ভাষা। তারা নিজেদের সেবার জন্য দক্ষিণ ভারতের কটক থেকে অনেক সাহায্যকারী এনেছিলেন। কটক থেকে আনা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকরা ওদের কটকী বলে ডাকতেন। পরবর্তীতে এরাই হলো ঢাকাইয়া কুট্টি। নবাবদের নবাবী চলে যাওয়ার পর জৌলুস ও অর্থ সমাগম স্থিমিত হওয়ার ফলে প্রথম প্রচেষ্টায় তারা অনেক কটকী লোকের পুনর্বাসনের জন্য ঘোড়াগাড়ি কিনে দিয়েছিলেন এ হিসেবে যে, ভরণ-পোষণ দিতে পারব না বরং এটা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা কর। কটকীরা এদেশে আসার পর নবাব পরিবারের ভাষার চেয়ে স্থানীয় ঢাকার লোকদের সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করেছিলেন বেশি। যদিও আশপাশে গ্রামের লোকদের তারা (কুট্টিরা) ‘গ্যারাইমা’ বলে তাচ্ছিল্য করতেন। তথাপি বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন নিজ ভাষা বলে। প্রথম প্রচেষ্টায় যাদের পুনর্বাসিত করা যায়নি তারা নবাবদের কাছে বিশেষত খানসামা ও রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করতেন। নবাব অন্দর মহলে তাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। কারণ বাংলার চেয়ে উর্দুর কদর তাদের কাছে বেশি ছিল। ফলে নবাব পরিবারে নিজেরা শুদ্ধ বাংলা বলতে না পারলেও উর্দু ও বাংলা মিলে এক মিশেল ভাষা তারা ব্যবহার করতেন। এ ভাষাকে বলা হতো বাজাইরা। এ নামকরণের কারণ হলো দ্বিতীয় বার যখন এসব খানসামাকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল তখন তাদের ব্যবস্যা-বাণিজ্য করার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ফলে বাবুবাজার থেকে আর্মানিটোলা, চুরিহাট্টা, রহমতগঞ্জ, চকবাজার পর্যন্ত তখন থেকে এখন পর্যন্ত বাজাইরাদের কবলে। ওরা এখনো নিজ নিজ পরিবারে মিশ্রিত উর্দু ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। শিক্ষার আলো প্রসারিত হওয়ার ফলে আজ ঢাকাইয়া কুট্টিরাও যেভাবে শুদ্ধ বাংলা বলতে অভ্যস্ত হয়েছেন যে নিজস্ব গন্ডিতে নিজেদের মধ্যে কথা বললে তা বিশ্বাসই হয় না। যদিও অনেক ঢাকাইয়া অনেকদিন ধরেই গুলশান-বনানীতে নিজেদের পুনর্বাসিত করেছেন।
নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতা ও বহু আগে থেকে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য কুট্টি ও বাজাইরা বেশ সম্পদশালী হয়ে ওঠেছেন। বিশেষভাবে ঘোড়াগাড়ি ব্যবসায় ও পরবর্তীতে রিকশা ব্যবসায় স্থানীয় লোকদের অংশীদারিত্ব ছিল ও এখনো আছে। এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের অনেকেই রিকশা মালিক না হলেও রিকশা লাইসেন্সের মালিক ছিলেন একচেটিয়াভাবে। বনেদি ঢাকাইয়া পরিবারে লাইসেন্স ব্যবসা ছিল মেয়েদের সোনা গয়নার মতো। এক সময় এমন ঢাকাইয়া বনেদি পরিবার ছিল না যে ঘরের মেয়েদের নামে ৫০০-১০০০ লাইসেন্স ছিল না এবং এগুলো তারা ভাড়ায় খাটাতেন। মিউনিসিপাল অফিস পুরনো ঢাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে রিকশা লাইসেন্স ব্যবসা ছিল ওদের একচেটিয়া। অর্থাৎ ঢাকাইয়ারা যানবাহনের ব্যবসাকে গুরুত্বের সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই করে আসছিলেন এবং পরবর্তীতে অটোরিকশা প্রচলিত হওয়ার পর একই পন্থা অবলম্বন করা হয়। অর্থাৎ অটোরিকশা লাইসেন্সও তাদের হস্তগত হয়ে যায়। এ সময় অবশ্য মোটর যন্ত্রাংশের আরেকটি ব্যবসা শুরু হয় নর্থ ব্রক হল রোডে। যা দিগবাজার নামে পরিচিত ছিল। এখানেই ঢাকার একমাত্র মোটর যন্ত্রাংশের দোকান গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সে আস্তানা রামপুড়া বাংলা মোটরে সম্প্রসারিত হয়। যানবাহনের আকার ও প্রসারতা এত বাড়তে শুরু করে যে বিখ্যাত ধোলাইখালের সব ব্যবসাটি এখন ঢাকাইয়াদের হস্তগত হয়ে গিয়েছে। অটোরিকশার পরে প্রচলিত হয় মিনিবাস। এর আগে ঢাকা টাউন সার্ভিস বলতে ছিল মুড়ির টিন নামে খ্যাত এক বাস। যার নাম ছিল টাউন সার্ভিস নম্বর ২। ঢাকায় তখনো ধোলাইখাল বন্ধ হয়ে যায়নি। পূর্বে মিল ব্যারাক, উত্তরে কাকরাইল, পশ্চিমে নীলক্ষেত বা নিউমার্কেট, চকবাজার, সদরঘাট। আর ঠিক মাঝামাঝি ছিল পল্টন বা নারিন্দা- এ ছিল ঢাকার মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা। মুড়ির টিন বা টাউন সার্ভিস ওঠে যাওয়ার পর মিনিবাসই সে জায়গা দখল করে নেয়। এগুলো তখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে বহু প্রচলিত ছিল যদিও এখনো তা দেখা যায় কালেভদ্রে মাত্র।
ঢাকায় সম্প্রতি যে জিনিসটি অসহনীয় হয়ে উঠেছে এবং এর বিহীত না করলেই নয়। যারা একের পর এক যানজট নিরসনের নকশা কেটে চলছেন মনে হয় পুরনো ঢাকার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। অথবা যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। যানজটের যে প্রতিকার পত্র লেখা হয় তা এর সমাধান নয়- এ কথা বলার জন্য পুরনো ঢাকার যানজট বাহনের ঐতিহাসিক কাসুন্দি ঘাটা হলো। শুনেছি কলকাতা হাওড়া স্ট্রেশন থেকে সরকারি যা আয় ধরা হয় প্রতিবছর তার পরিমাণ বাড়ে দ্বিগুণভাবে। মানুষের চাপে হাওড়া স্ট্রেশনের রাজস্ব আয় বেড়েই চলেছে। একইভাবে গ্রামের অভাবী মানুষের অভাব মেটানোর উদ্দেশ্যে মানুষ শহরমুখী হওয়ার ফলে ঢাকায় এসে ঠাঁই নিচ্ছেন। কিন্তু সে হারে ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি বা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে বর্তমানের যানজট নিয়ে আমরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
ঢাকাইয়ারা শুধু যানবাহনের ব্যবসায় অর্থ উর্পাজন করেন তা নয়। এতে তারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের পুনর্বাসিত করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ এখানে যানজটের কারণে সরকারি রাস্তায় ট্রাক ও যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা হয় যে কোন জায়গায়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে প্রশস্ত রাস্তাগুলোর অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে রিকশা দিয়ে দখল করা হয়েছে । সেসব মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে আইন প্রণয়নকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উপায় বিশ্লেষণ করলে পুঁথিগতভাবে এর পরিমাণ হবে অনেক। কিন্তু সামান্য কয়েকটি পন্থা যদি আমরা সঠিকভাবে প্রয়োগ করি তাহলে মনে হয় ফলাফল পেতে খুব বেশি দেরি হবে না; যেমন ১. কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি সাহস করে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে সরকারি জায়গায় রাখা যানবাহনগুলো একত্রে করে নর্দমা, খাল-নদী, গর্তে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেয় তাহলেই রাস্তায় রাখা সব যানবাহনের অন্য মালিকরা পরিমরি করে সেগুলো সরিয়ে ফেলবে নিঃসন্দেহে। যদি আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয় এবং আইন রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে আইন প্রণেতাদের ট্রাক-বাসগুলো সরকারি জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলতে হবে শঙ্কিতচিত্তে সর্বপ্রথমেই। ২. যে হারে সরকারি জায়গার ওপরে নির্মাণ সামগ্রী রেখে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয় এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করি। যেটি সহজে করা যায় তাহল সরকারি রাস্তাকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার না করার জন্য প্রাথমিকভাবে কড়া নিয়মের নির্দেশ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও অতঃপর বাস্তবায়ন। ৩. শুধু ঘোষণা দিয়ে বসে থাকলে ঢাকা শহর থেকে পুরনো যানবাহন কখনোই বন্ধ হবে বলে মনে হচ্ছে না। যেমন ইংল্যান্ড কর্তৃক তৈরিকৃত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত উইলিশ জিপগুলো এখন মিনিবাস বা ছোট ট্রাকে রূপান্তরিত হয়ে ঢাকায় ঘোরাঘুরি করছে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে। যে কোন মূল্যে ২০ বছরের অধিক পুরনো যানবাহন রাস্তা থেকে সরাতে পারলে যানজট সহজেই কমে যাবে। ৪. বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ- এর সত্যতা এখন উল্টো দিকে ধাবিত। ধীরে চলাচল যানবাহনগুলো ঢাকার রাস্তা থেকে সরাতে না পারলে যানজট সমস্যা থেকেই যাবে। মানুষ আমরা ঘোড়া দেখলে খোঁড়া, কিন্তু উপায় না থাকলে বাধ্য হয়েই একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারব। প্রধান প্রধান রাস্তা থেকে রিকশা চালানো উঠিয়ে দিয়ে ফলাফল ভালো হলে সেভাবে রিকশাকে পরিকল্পিতভাবে সরানো যেতে পারে। কারণ এ বেগের যুগে রিকশার আবেগ বড়ই নিরানন্দ এবং এ আবেগ প্রদর্শন যানজট বোধ করতে পারবে না। গ্রামে খাসজমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে ঢাকার রিকশাচালকদের পুনর্বাসন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস। রাজনীতিবিদরা হয়তো ভাবেন ঢাকা শহরে ১৫ লক্ষাধিক রিকশা আছে এবং ৩০ লাখ লোক কোন না কোনভাবে এর সঙ্গে যুক্ত আছেন। এত অধিক ভোটার বিমুখ হলে সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরানি¦ত হতে পারে- এটা সন্দেহ ভিত্তিক, বাস্তবভিত্তিক নয়। দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সুচারুভাবে প্রদান সম্পন্ন হলে ঢাকার প্রকৃত লোক সংখ্যা ও পেশা সঠিকভাবে জানতে পারা যাবে এবং পরিকল্পিতভাবে ঢাকা থেকে রিকশা উচ্ছেদ করাও সম্ভবপর হবে। কারণ এর সঙ্গে সরকারি রাজস্ব আয়ের বিষয়টি সম্পৃক্ত। কিন্তু সরকারি আয়ের সিংহভাগ থেকেই সরকার বঞ্চিত হয় এবং তা অন্যায়ভাবে অন্যের পকেটে চলে যায় অতি সহজেই। লাইসেন্স প্রদান করতে হবে অবশ্যই পরীক্ষিত ভাবে। পুরনো সব লাইসেন্স বাতিল করা হবে এবং এসব যানবাহন ঢাকার বাইরে সরিয়ে ফেলা হবে। যখন জ্বালানির দাম বাড়ে তখন যানবাহনের ভাড়া বাড়ে কিন্তু সিএনজি করা হলে যাত্রীর মাথাপিছু জ্বালানি মূল্য এক-চতুর্থাংশ কমে আসে যদিও যাত্রীদের তখনো বেশি মূল্যে টিকিট ক্রয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ ঢাকা-চিটাগাং যেতে বড় বড় ৪ সিলিন্ডার গ্যাস খরচ হলে সর্বমোট ১২০০-১৫০০ টাকার জ্বালানি লাগে কিন্তু এ থেকে আয় হয় ২০ হাজার টাকা। সিএনজি মূল্য বাড়িয়ে এবং চলাচলের সময় নিদিষ্ট করার ফলে মধ্যবিত্তের সমস্যা হচ্ছে। সরকারের বোঝা উচিত মধ্যবিত্তরা বিশেষ কোন কারণ ছাড়া বিদ্রোহী হয়ে ওঠে না। তারাও সরকারের নিদের্শিত আইন মেনে চলতে আগ্রহী। কিন্তু যানবাহনের মালিকদের সঙ্গে সরকারও এঁটে উঠতে পারেনি বিগত দিনগুলোতে। কারণ ধর্মঘট নামক জুজুর ভয়। এ জুজুর ভয় দেখিয়ে সিএনজি ব্যবসায় ফায়দা লুটে একশ্রেণী লাভবান হচ্ছে আর সবাইকে পিছনে ফেলে, এ দিকে কি সরকারের দৃষ্টিপাত করা উচিত নয়?
সম্প্রতি ওয়াটার বাস প্রকল্প চালু করে সরকার আরও হাসির কারণ সৃষ্টি করেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের মাঝে। ৩০ জন করে যাত্রী নিয়ে গাবতলী থেকে সদরঘাট এত দামি যানবাহনে ভাড়া হবে মাত্র ৩০ টাকা। যে কোন যানবাহনের সপক্ষে কমপক্ষে তিনটি যৌত্তিক সুবিধার বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে; সময় সাশ্রয়, মধ্যবিত্তদের সামর্থ্য, কত সংখ্যক যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে? সমষ্টিগতভাবে খরচের পার্থক্য বেশি হলে সে প্রচেষ্টা অর্থবহ হতে পারে না। যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও বিআরটিএর এখন সময় এসেছে এদিকে নজর দেওয়ার। একের পর এক ঘোষণা দেওয়া হয় কিন্তু  কার্যকরী করা হচ্ছে না। এটা সরকারকে সবার সামনে হেয় করা হচ্ছে। কিন্তু আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা, প্রচলিত আইনের অধীনে সবাইকে নিয়ে এর সমাধান করা যায় বলে বিশ্বাস। উৎকোচ, গাড়ি, সিএনজির দাম বাড়ছে মধ্যবিত্তরা কোণঠাসা হচ্ছেন, সুবিধাবাদীরা ফায়দা লুটছে, এটা উচিত নয়। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
পুরনো ঢাকা নিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। শৈশবের দেখা সেই ঢাকায় আবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। বাবুবাজার, নবাবপুর, নারিন্দা আর ধোলাইখালের সম্পূর্ণটাই ছিল খাল। ঢাকা নগরীর সব আবর্জনা সেই খালের সাহায্যে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হতো। তাই এর নাম হলো ধোলাইখাল। ঢাকার মিলব্যারাকের মাঝ দিয়ে এ খাল নদীতে মিশে আরও কয়েক জায়গায়ও মিলিত হতো। আমার স্পষ্ট মনে আছে বর্ষায় এ খাল দিয়ে প্রবল পরিষ্কার পানির স্রোত বয়ে যেত। আমার ধারণা, সরকার চেষ্টা করলেই তা আবার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। এতে শুধু যানজটের নিরসন নয়, জলাবদ্ধ নগরী হিসেবে ঢাকা যে ভীষণ আকার ধারণ করেছে সে দুর্নাম ও ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকেও বাঁচানো যাবে। আইন প্রণয়ন ও ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী ব্যবস্থার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে উপযুক্ত স্থানে সঠিক নিয়োগের অভাবে সরকারের আইন শুধু নথিপত্রে ও ঘোষণা বাতাসের ইথারেই রয়ে যাবে। বাস্তবতার মুখ দেখবে না কখনোই।


0 comments:

Post a Comment