Tuesday, May 24, 2016

বাংলাদেশ ঃ ৪৫ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ

বাংলাদেশ ঃ ৪৫ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ
আলী ফোরকান 
সোনার বাংলা অবহেলিত কেন? সোনার বাংলার দুঃখ কেন? ৬০ এর দশকের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে এ ধরণের প্রচুর শ্লোগান দেখা যেত। শ্লোগানের মূল অর্থ ছিল এক সময়ের শস্য সমৃদ্ধ পূর্ববাংলা সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে পাঞ্জাবীদের শোষণ আর অত্যাচারে ‘সোনার বাংলা’ তার ঐতিহ্য আর ধরে রাখতে পারেনি । পাঞ্জাবীরা তা কেড়ে নিয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কয়েকদিন আগ থেকে এধরণের বহু শ্লোগান তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করেছে। এর পর আরো প্রকম্পিত করে তুলেছে ঘূর্ণিঝড়। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসপূর্ব - পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে। এতে ৫লাখ লোকের প্রাণ সংহার, ঘরবাড়ি ও ফসলসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। এরপর গত ২৯ এপ্রিল প্রলঙ্করী ঘূর্ণিজড়ের আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ লাখ ৩৮ হাজার লোক মারা য়ায়। ঘরবাড়ি ও সম্পদ বিনষ্ট হয় ১২’শ কোটি টাকার উপরে। এর পর পরই আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস সিড়র। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের শত বছরের ইতিহাসে সিডর অন্যতম ও সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ১৮২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বড় ধরনের যে ৪৪টি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে তার মধ্যে সিডর অন্যতম। অল্প সময়ের ব্যবধানে ৪ নাম্বার বিপদ সঙ্কেত থেকে সিডর ১০ নাম্বার মহাবিপদ সঙ্কেতে ওঠে যায়। ১৫ থেকে ২০ ফিট উচু জলোচ্ছ্বাসের আভাস দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ২০০ বছরের মধ্যে ১৮৭৬ সালের অক্টোবরে বাকেরগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পানির উচ্চতা ছিল ৩ থেকে ১৫ মিটার। ১৯৬০ সালের ৯ অক্টোবর নোয়াখালীতে ৫ মিটার, ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর নোয়াখালী, চট্টগ্রামে ৬.৬ মিটার, ১৯৬১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে ৬-৮ মিটার, ১৯৬১ সালের ২৮ মে নোয়াখালী, চট্টগ্রামে ৮.১ মিটার, ১৯৬৫ সালের  ৩১ মে চট্টগ্রামে ৭.৬ মিটার, ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে ৮.৮ মিটার, ১৯৬৭ সালের অক্টোবরে কক্সবাজারে ৭.৬ মিটার, ১৯৭০ সালের ৭ মে কক্সবাজারে ৫ মিটার, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর খুলনা থেকে চট্টগ্রাম উপকূলে ৯ মিটার, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চাদপুরে ৫ মিটার, ১৯৭৪ সালের আগস্টে খুলনায় ৬.৭ মিটার। সর্বশেষ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে ৪-৮ মিটার উচু জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক বৈরীতা,ঝড়-জলোচ্ছাস, দূবৃত্তায়নসহ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি দুঃস্বপ্নের দেশ। এদেশ স্বাধীন হয়েছে বিগত ৪৫ বছর আগে। কিন্তু  স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এসেও দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত হতে পারেনি  দেশ। শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমলেও নিরঙ্কুশ হিসেবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাঝে নব্বই দশকে এবং তার অব্যবহিত পরেও কখনো এক শতাংশ, কখনো ২ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমেছে। কিন্তু গত দেড়-দুই বছর ধরে এই কমার হারও হঠাৎ করে থমকে গেছে। অনুসঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বৈষম্য। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিরতথ্য মতে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এর মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল দুই থেকে আড়াই কোটি। এখন দেশের জনসংখ্যা ১৬ থেকে সাড়ে ১৬ কোটি। আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৬ থেকে ৭ কোটি। অর্থাৎ স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে নিরঙ্কুশ সংখ্যায় দরিদ্র মানুষ বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। এই মুহূর্তে অর্থাৎ গত আদম শুমারির সালকে হিসাবে আনা হলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে। আর সে কারণেই প্রায় দুই কোটি মানুষকে বিনা মূল্যে পাবলিক রেশনিং পদ্ধতির মাধ্যমে খায়ানোর কথা বলা হচ্ছে। ৯০ দশকে দারিদ্র্য কমছিল বছরে এক দুই শতাংশ হারে। ২০০০ সালের  প্রথম দিকেও এক শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমছিল। কিন্তু গত দুই তিন বছর ধরে দারিদ্র্য কমছে না। সরকারের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এর মধ্যে আবার হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২০ শতাংশ। শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না। বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটি। চলতি বছর খাদ্য নিরাপত্তার যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে গরিব মানুষের সংখ্যা আরো বাড়ছে। এর সঙ্গে বৈষম্য যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠেছে। বৈষম্য বেড়েছে এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের। একশ্রেণীর সঙ্গে অন্য শ্রেণীর। এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশী খুলনা-বরিশালসহ উত্তারাঞ্চলে। সরকারের উচিত এসব অঞ্চলে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। তাতে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও কমবে। মাঝে কৃষিখাত ছিল অবহেলিত। কৃষিখাতের গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা ইত্যাদি খাতে যে বিনিয়োগ হওয়ার দরকার ছিল সেটি হয়নি। এরই ফল হিসাবে এখন আমাদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন কৃষক বিশেষ করে দরিদ্র কৃষক খুব কষ্টে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করত। ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৯১-৯২ সালে এহার ছিল ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশে অঞ্চল ভিত্তিক বৈষম্য যে প্রকট হয়ে উঠছে সেটাও এই জরিপে পরিষ্কার হয়ে উঠে। বিভাগওয়ারী হিসাবে দেখা যায়, বরিশালে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশী। সেখানে ৫২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এছাড়া রাজশাহীতে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ, খুলনায় ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। অন্য বিভাগগুলোর অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। যেমন ঢাকায় ৩২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৪ শতাংশ, সিলেটে ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নিচে। দারিদ্র্যের এই অসম বন্টন নিয়ে কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক সেমিনারে যথেষ্ট কথা চালাচালি হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই এসব অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কম। অন্যদিকে বরিশাল-খুলনাসহ উত্তরাঞ্চলে কাজের সুযোগ কম থাকায় সেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশী। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কম হওয়ার আরেকটি কারণ চিহ্নিত হয় সেখানে। সেটি হলো প্রবাসে চাকরি। বলা হয় লন্ডনে বিপুল সংখ্যক সিলেটি বসবাস করায় পুরো সিলেট অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম। বিশ্বব্যাংকের তৎসময়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর শিয়েন ঝু এর মতে, বাংলাদেশের নদী ভাঙ্গন অঞ্চলের মানুষকে যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রবাসে চাকরি করতে পাঠানো যায় তাহলে বোধহয় একটি স্থায়ী সমাধান আসতে পারে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কোন একটি গ্রাম থেকে একজন মানুষ বিদেশে যেতে পারলে পরে তার আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসীও প্রবাসে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়। অপরদিকে  বিশেজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোই বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।  কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলক কম। বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে আমেরিকা ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলো মূল ভূমিকা পালন করেনি। এতে মূল ভূমিকা পালন করে চীন ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধারা এ বছরও অব্যাহত থাকবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রকাশিত গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্ট ধারণাকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে। এ রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকার অর্থনীতির নিম্নগতি ও ঋণ বাজারের অস্থিরতার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির দ্রুত পতনের যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা প্রতিরোধে আগামী বছরগুলোতে ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থার পূর্বাভাসমূলক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন ও ভারতের মতো উঠতি অর্থনীতির দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে চলতি মন্দাভাব থেকে রক্ষা করবে। ব্যাংকটির মতে, বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ রিপোর্ট সতর্ক করে দিয়েছে, দিন দিন দুর্বল হতে থাকা আমেরিকান ডলার, অর্থবাজারে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দাভাবের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি পতনের ঝুকির মধ্যে রয়েছে। রিপোর্টের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আমেরিকার হাউজিং মার্কেটের নিম্নগতি। যা গত বছর শুরু হয়েছিল তা এ বছরও অব্যাহত থাকবে। এ নিম্নগতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। গত বছর বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৯ শতাংশ। এটা নিচে নেমে গিয়ে বর্তমানে দাড়িয়েছে ৩.৬ শতাংশ। এ রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছর প্রবৃদ্ধির হার আরো কমবে এবং ৩.৩% শতাংশে গিয়ে দাড়াবে। আমেরিকা ও বৃটেনের মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির নিম্ন হারই এর মূল কারণ। উল্লেখ্য, বৃটেন পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পার্র্সিং পাওয়ার পার্টি বা ক্রয়ক্ষমতার তুলনার ভিত্তিতে গত বছরের প্রবৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ থেকে নেমে গিয়ে এ বছর ৪.৯ শতাংশ হবে। পার্র্সিং পাওয়ার পার্টি আয়ের বিভিন্নতাকে নির্দেশ করে। এর বিপরীত দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ যেমন চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো বিগত বছরগুলোয় গড়ে ওঠা নিজস্ব রিজার্ভের সাহায্যে অর্থনীতির মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ডেভেলপিং প্রসপেক্টস গ্রুপ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এগ্রিমেন্টের ডিরেক্টর ইউরি দাদুস এর মতে, আগামী দুবছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আমেরিকান অর্থনীতির অবনতিশীল অবস্থার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর রফতানি আয় ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমেরিকার ক্রমহ্রাসমান আমদানি সত্ত্বেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মনে করে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর উচ্চ আয় এবং চীন ও ভারতের ব্যবসায় সম্প্রসারণের ফলে এ বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ থাকবে। প্রবৃদ্ধির এ ঊর্ধ্ব হার আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। অথচ  প্রবৃদ্ধির তেজি হার ৭.৫ শতাংশ থেকে গত বছর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মাত্র ০.১ শতাংশ। অপরিশোধিত তেলের চড়া দামের সুবাদে এলজেরিয়া ও ইরানের মতো তেল রফতানিকারক দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেড়ে যাবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১০০ ডলারেরও বেশি। অন্যদিকে চায়না এবং ইনডিয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দ্রুত উত্থানের কারণে সেখানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার পরিমাণও বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে উৎপাদনশীলতা ও বিগত ১৫ বছরের চেয়ে জাতীয় আয়ের পরিমাণ বাড়াতে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাবধানী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী কারিগরি উন্নতি। এ দুটি বিষয়ে নজর দেয়া গেলে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দশ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাথাপিছু আয় বাড়বে শতকরা ৩.৯ ভাগ এবং এক দশক পরে এ বৃদ্ধির হার হবে ৩.৪ ভাগ। মাথাপিছু আয়ের এ সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার উন্নত বিশ্বের উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ হবে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, এ সম্ভাবনা বাস্বব রূপ পেলে বিশ্বে প্রতিদিন ১ ডলারের চেয়ে কম আয় সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ২০১৫ সালে ৬২৪ মিলিয়নে নেমে আসবে। ২০০৪ ও ১৯৯০ সালে এ রকম মানুষের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯৭০ মিলিয়ন ও ১.২ বিলিয়ন। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বেশ কিছু হুমকি চিহ্নিত করেছে, যেগুলো বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে ব্যাংকটির পূর্বাভাসকে পাল্টে দিতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো আবার ও অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে।  যদি আমেরিকার হাউজিং মার্কেটে ধস অব্যাহত থাকে এবং আরো মূল্যপতন ঘটে। অনেক বিশ্লেষকের মতামতের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকার হাউজিং মার্কেটে লেনদেন ব্যাপক হারে কমে গেলে সেটা আমেরিকাকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ফেডারাল রিজার্ভ’ সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে, যার ফলে ডলারের দাম কমে যাবে। তাতে করে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা প্রকট আকার ধারণ করবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ পরিস্থিতি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সামনে থাকা বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে ফুটিয়ে তোলে এবং এটা বিশ্ব অর্থনীতিতে মধ্য মেয়াদে আরো নিম্নগতির সূচনা করতে পারে। তাছাড়া অর্থবাজারের অস্থির অবস্থা ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ সঙ্কুচিত করে তুলতে পারে। আর এ রকম হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু ব্যাংকের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোতে ঋণ সঙ্কটের ক্ষতিকর প্রভাবের সম্ভাবনা কম। ব্যাংকের মতে, এ বছরের শেষ পর্যন্ত ঋণের সঙ্কট অব্যাহত থাকবে। রিপোর্ট পূর্বাভাস দেয়,ওইসিডি ভুক্ত ৩০টি দেশ বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী বছর নাগাদ ওইসিডি ভুক্ত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়বে। উল্টো দিকে, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এ বছর আমেরিকার প্রবৃদ্ধির হার ১.৯ শতাংশে নেমে আসবে। ২০০৭-এর তৃতীয় ভাগে আমেরিকার প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৯ শতাংশ। যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের রিপোর্টে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর দুর্বলতর আমেরিকান ডলারের বিপজ্জনক প্রভাবের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। রিপোটে বলা হচ্ছে, আমেরিকার প্রবৃদ্ধির নিম্ন হারের সঙ্গে সঙ্গে এ বছর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির অধিকারী এ দেশটির রফতানির পরিমাণ বাড়বে। রফতানির এ বৃদ্ধি আমেরিকার চলতি বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমাবে। বিগত বছরগুলোতে ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৬ শতাংশে দাড়িয়েছিল। এ ঘাটতির পরিমাণ ৫%-এ নেমে আসবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের গ্লোবাল ট্রেন্ড টিম-এর ম্যানেজার হ্যান্স টিমারের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচুর আমদানি চাহিদা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে। এছাড়া আমেরিকান ডলারের দাম কমে যাওয়ার ফলে আমেরিকার রফতানির পরিমাণ বাড়বে। এটা আমেরিকার পুজিবাজারে নগদ অর্থের ঘাটতি কমাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা দূর করতে অবদান রাখবে। তাছাড়া রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববাজারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমন্বিত হওয়া ও বিশ্ববাণিজ্যে তাদের অংশগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বাড়বে। যার প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণও হ্রাস পাবে। এদিকে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে নিত্যপয়োজণীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে প্রতিদিন দরিদ্র মানুষের সংখ্রা বাড়ছে। সবমিলিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশ এখনো  একটি  দুঃস্বপ্নের দেশ।স্বাধীনতার  ৪৫ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। আমরা আশাকরি এদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে।
০১৭১১-৫৭৯২৬৭


0 comments:

Post a Comment