Thursday, May 26, 2016

খাদ্য নিরাপত্তা বড় ভাবনা

খাদ্য নিরাপত্তা বড় ভাবনা
আলী ফোরকান
খাদ্যের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার পূরণে ফসল ফলাতে হয়। উৎপাদন করতে হয় খাদ্য। বিস্তীর্ণ এ ভূমি ও পানি হচ্ছে উপযোগ। একে কাজে লাগিয়ে শস্য উৎপাদন করে নিশ্চিত করতে হয় খাদ্য নিরাপত্তা। বিশ্বে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। তারা দিন কাটায় অর্ধাহার-অনাহারে। এক জরিপে দেখা যায়, ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য নিয়ে দাঙ্গা হয়েছে। এর বিপরীতে আছে আরেক চিত্র। লাখ লাখ টন খাদ্য অপচয় করা হয়। সাগরে ফেলে দেয়া হয়। কুকুর, বিড়াল, বানর, শূকরের জন্য সরবরাহ করা হয় উন্নতমানের খাবার। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। আছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লি¬উএফপি)। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপী খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তারপর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জš§দিন ১৬ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস।
এফএও’র মতে বর্তমানে পৃথিবীর ২২টি দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট খরা ও বন্যায় অনেক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। কিছুদিন আগে পাকিস্তানে দেখা দেয়া বন্যায় ৭১ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। পুকুর ও খালের মাছ ভেসে গেছে। বিলীন হয়েছে হাজার হাজার পোলট্রি ও গবাদি পশুর খামার। রাশিয়ায় প্রচন্ড খরা ও দাবানলে কয়েক লাখ হেক্টর জমির গমক্ষেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে চীন ও জাপানেও। এছাড়া বছরে পৃথিবীর ১০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি হ্রাস, বিশ্বমন্দা ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও হুমকির মধ্যে ফেলেছে। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির দেশগুলোর অন্যতম। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে আমাদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে ১৭ মিলিয়ন টন। গবেষকদের মতে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হবে ৪০ মিলিয়ন টন। এ বছর সরকারের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ টন। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ টন। এছাড়া প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। আইলা-সিডর আক্রান্ত এলাকাসহ অনেক এলাকায় ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। উপরস্তু সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপাদানের অপ্রতুলতার কথা শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে বিনামূল্যে সার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর বাস্তবায়নসহ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে আরও নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে ২ হাজার ২২২ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়। এর চেয়ে কম গ্রহণ করে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দেশে ৬ কোটি ১ লাখ। ১ হাজার ৮০০ ক্যালরির কম গ্রহণ করে এমন ‘হতদরিদ্র’র সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এমনকি ১ হাজার ৬০০ ক্যালরির কম গ্রহণ করে, এমন ‘চরম দরিদ্রে’র সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৫ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষের দৈনিক আয়ের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কেনায়। আয় না বেড়ে চালের দাম বাড়লে এ জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে। এদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অথচ বাংলাদেশের চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মজুদদারী ও মুনাফাখোরী সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণের মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ 
নির্বাচনের পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন এবং উপকূলীয় এলাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবেÑ এ হোক এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের অঙ্গীকার।
০১৭১১৫৭৯২৬৭

0 comments:

Post a Comment