Sunday, April 24, 2016

উচ্চশিক্ষায় সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি

উচ্চশিক্ষায় সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি
আলী ফোরকান 
শিক্ষা, সমাজ পরিবর্তন ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। শিক্ষা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মধ্যে একটি জাতির ভবিষ্যৎ নিহিত।  যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি  মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেনা। শিক্ষা,কোন দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা অঞ্চলের বিষয় নয়। এটি মূলতঃ সমগ্র জাতির সর্বাধিক গুত্বপূর্ণ ও জাতীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বলতে হয় যে, উচ্চ শিক্ষা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাই দেশের নীতিনিধারণ থেকে শুরু করে দেশের সব কর্মকান্ডের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সম্প্রতি এই উচ্চ শিক্ষার শিক্ষিকদের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে দেশপ্রেম ও জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা নিয়েও। জাতির ভবিষ্যত কিভাবে অন্ধকারাচছন্ন হয়ে পড়ছে এমন প্রশ্ন বিবেক দংশন করছে অহরহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে। অথচ এই পর্যায়ের শিক্ষকদের মাঝে নৈতিকতার সর্বোচ্চ অবস্থান কাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক স্তরের অবনয়ন যে ঘটেছে তা এখন অনেকটাই খোলামেলা। এই নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে  এবং বাইরে সংগত কারনে আলাপ কম হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি তাতে  উন্নতি না হয়ে বরং অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে বিরাজ করছে নৈরাজ্যকর অবস্থা। দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যাবহারের উন্মত্ততা সর্বোচ্চ বিদ্যালয়গুলোকে কুরে-কুরে খাচেছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে দেশের উচচশিক্ষার ক্ষেত্রেগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ধসিয়ে দেওয়ার আয়োজন চলছে। শিক্ষার মেরুদন্ডটাই যদি ভেঙ্গে দেওয়া হয় তাহলে জাতি হিসেবে টিকে থাকার সব পথইতো রুদ্ধ হয়ে পড়বে। সর্বসাম্প্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম জ্বালিয়াতির ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে জ্বালিয়াত চক্রকে ধরাছোয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬- ২০০৭ ভর্তি পরীক্ষার কমিটি নিয়ে ও অভিযোগ উঠেছিল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।  ইতোমধ্যে  উচচশিক্ষায় ভর্তি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভর্তি নিয়ে এমনিতেই টেনশনে রয়েছে মেধাবীরা। ভর্তি কমিটির দূনীতির কারনে মেধাবীরা বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন । কারন এবারের পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ায়, আসন সংকট দেখা দেয়। ফলে এবছর প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেনা। এছাড়া ভর্তি কমিটির র্দুনীতি ও স্বজনপ্রীতির কারনে জিপিএ ৫ পেয়েও তাদের মনে স্বস্তি নেই । স্বস্তি নেই দেশের হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর। স্বস্তিতে নেই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবক।  এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। ইতোমধ্যে দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গুলোতে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হবে। এসব উচচশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট আসন রয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬২টি। এবার এইচ এস সি তে সারা দেশে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭০ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সুত্র মতে, এবার পাসের তুলনায় অধেূক  আসন কম। এর মধ্যে মেধাবীদের বহুল কাক্সিক্ষত দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটে আসনসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ২৬০টি। মেধাবী শিক্ষার্থীদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে আসনসংখ্যা খুবই কম। সবচেয়ে ভাল ফলাফলকারি জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থীর দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই তাদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবেনা। এবারের ভর্তি যুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে সরকারি ১৩ টি মেডিকেলের ১ হাজার ৪৫০টি ও বুয়েটের ৮১০টি আসন নিয়ে। দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫টি। আর ৫৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা ২৩ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ কলেজে সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ৯০ হাজার ৬টি। একই সঙ্গে এর অধিভুক্ত ১ হাজার ৬৯ টি ডিগ্রি কলেজে স্নাতকের আসন রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬১টি। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল, বি আই টি, টেক্রটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বেশ কিছু কারিগরি কলেজ মিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আসন রয়েছে। এসব আসন পূর্ণ হওয়ার পর ও প্রায় অর্ধেক জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেনা।  এর মধ্যে বাদ পড়বে অসংখ্য মেধাবী। এখানে সবচেয়ে দুর্ভোগ ও কষ্টের শিকার হবে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষার্থীরা। এদের দেশের ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় পড়ানোর সামর্থ বেশিরভাগ অভিভাবকেরই নেই। এসব মেধাবীর কথা মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি ।                                                                                   
মোবাইল ০১৭১১৫৭৯২৬৭
                                                                                                          
                                                      

0 comments:

Post a Comment