Friday, April 29, 2016

নিরাপত্তা: শ্রমিকরাই সভ্যতার চাকা সচল রাখছে

নিরাপত্তা: শ্রমিকরাই সভ্যতার চাকা সচল রাখছে 
আলী ফোরকান
আমরা দেখতে পাই আমাদের দেশের শ্রমিকদের করুণ চিত্র। শ্রমিকরা পায় না তাদের ন্যায্য অধিকার। পায় না সঠিক মজুরি। পায় না সঠিক সময়ে কাজের সুযোগ। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আমাদের শ্রমিকরা। তাইতো শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। কারণ অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়া অপরাধ নয়। শ্রমিকরা কাজ করছে এমন সময় কারখানা বিক্রি করে বা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাতে দেখা যায় শ্রমিকরা সপরিবারে পথের ভিখারি হয়ে যায়। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে শ্রমিকদের কাজের কোনো সঠিক নীতিমালা নেই। আর এ শিল্পের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। এই নারী শ্রমিকরা আসলে কারা? দুবেলা দুমুঠো খাবারের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা অতি অল্প টাকায় বেতন দিয়ে নারীদের ভোর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করিয়ে নেয়। এ কথা বলতে গেলে মালিকরা বলবে তাদের তো ওভারটাইম দেয়া হয়। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকির মতো বেতন দেয় ৫০০ ওভারটাইম দেয় ৫০০ এই মোট একহাজার টাকা। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা বলবো যে, বেতন কতো হওয়া দরকার? ওভারটাইম তাদের একটা কৌশলমাত্র। তারপরও সেই নারীদের নেই কোনো কাজের পরিবেশ। নেই তেমন কোনো নিরাপত্তা। যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় বারবার। শ্রমিকরা নিয়মিত ও ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন করলে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হয়। একদম গ্রামের কৃষক শ্রমিকদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই। শ্রমিকরা যখন মঙ্গার ফাঁদে না খেয়ে থাকে ঠিক তখনই মহাজনদের বা জমির মালিকদের যেন একটা সুযোগ তৈরি হয়ে গেলো। মঙ্গার সময় এই শ্রমিকরা তাদের আগাম শ্রম বিক্রি করে দেয় খুব অল্প মূল্যে। আমরা ঢাকা শহরে বা অন্যান্য বড় বড় শহরে দেখতে পাই সেখানে অট্টালিকাগুলোর নিচতলা থেকে বহতল পর্যন্ত নারী-পুরুষ শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলছে। তাদের বিপদ হলে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কোনো নীতিমালা থাকে না। উদাহরণস্বরুপ ঢাকার র‌্যাংগস ভবনের কথাই বলা যায়। কর্মরত অবস্থায় বিল্ডিং ধসে পড়েছে কিন্তু শ্রমিকের লাশ ৫/৭ দিন পর্যন্ত ঝুলে ছিল উদ্ধারের কোনো প্রযুক্তি খুঁজে না পাওয়ার কারণে। আমরা এ চিত্র প্রত্যেকটি টিভি চ্যানেলে দেখতে পেয়েছি।  রানা প্লাজার ট্র্যাজেড়ির কথা নাই বা বল্লাম। তাই এ দিনে শ্রমিকদের শুধু ন্যায্য মজুরির কথা বললেই চলবে না। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে ফলপ্রসূ ও কার্যকরী নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এ জন্য সকল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কন্যাশিশুরা আবার শ্রমিকের কাজ করেও পায় না তাদের কোনো স্বীকৃতি। হাজার হাজার বাড়িতে গৃহস্থলি র কাজের জন্য হাজার হাজার কন্যা রাখা হয়েছে। এমনিতেই তারা শিশু। অট্টালিকার বন্ধ ঘরে এই শিশু শ্রমিকরা কি করে? করতে হয় তাদের ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কাজ। গৃহকর্তা বা গৃহকর্তী এই কোমলমতি শিশু শ্রমিকদের পান থেকে চুন খসলে অমানবিক শাস্তি দিয়েও খান্ত হন না। পত্রিকার পাতায় বা টিভি চ্যানেলে তার অনেক চিত্র আমরা দেখেছি। শ্রমিকের অমানবিক নির্যাতন পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতিই মেনে নেবে না। এখানে চলে আসে মানবাধিকারের কথা। 
প্রত্যেক নাগরিক জন্মের সংগে সংগে তার কিছু অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই শ্রমিকরা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ভোগ করার অধিকার রাখে। সরকার থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য। মহাজনদের নীতিমালার ছকে ফেলতে হবে যেন সকল শ্রমিক তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। মাঠ পর্যায়ের নারী শ্রমিকদের দিকে তাকালে দেখতে পাই তাদের প্রতিও চরম বৈষম্য করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখোমুখি। প্রতিদিন তাদের কাটে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে। আমরা যদি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে অবশ্যই শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এর জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু পরিবর্তন আসা দরকার। আমরা শ্রমিককে সাধারণত দাস হিসেবে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা একবারো ভাবি না যে তাদের শ্রমের বিনিময়েই সভ্যতার বিকাশ হচ্ছে। শ্রমিকরাই সভ্যতার চাকা সচল রাখছে। তাই বাংলাদেশ যদি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। তাহলে অবশ্যই শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
০১৭১১৫৭৯২৬৭

0 comments:

Post a Comment