Friday, April 29, 2016

শিল্প শ্রমিকদের সমস্যা প্রসঙ্গে


 শিল্প শ্রমিকদের সমস্যা প্রসঙ্গে 
আলী ফোরকান
‘ঘাম শুকোবার আগেই শ্রমিকের মজুরি দিয়ে দাও’। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ নির্দেশ দিয়েছিলেন এখন থেকে ১৫০০ বছর আগে। আর ৭১ বছর আগে ১৯৩৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আইন করেছিলেন মাস শেষ হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে হবে। ওই একই বিধান রাখা হয়েছে ২০০৬ সালে পাস হওয়া সংশোধিত শ্রম আইনেও। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করলেও ৫/৬ মাস বেতন- মজুরি পায় না। মিলগুলোতে তাদের মজুরি/ বেতন থেকে কেটে রাখা পিএফএ’র টাকাও পাচ্ছে না। যারা অবসর গ্রহণ করেছেন বা কোনো কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয় না। এ ব্যাপারে শ্রমিকরা অনেকবার রাস্তায় নেমেছে। জীবন দিয়েছে। সরকারের সাথে কয়েকবার চুক্তিও হয়েছে কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। বর্তমান  সরকার  ২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ৪টি বন্ধ করে অবশিষ্ট ১৮টি জুটমিল চালু রেখে ভালভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১ আগস্ট থেকে খুলনার পিপলস জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিলস এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও ফোরাত কর্ণফুলি এই ৪টি মিল বন্ধ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের দায়দেনা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। বাকি ১৮টি মিলের জন্য পাট ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ২০০ কোটি টাকা প্রদান করা হবে। কিন্তু ওই ১৮টি জুটমিলের শ্রমিকদের পাওনা বেতন/মজুরি, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পিএফ, গ্রাচুইটি পরিশোধ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া কেবল পাট ক্রয় করলেই মিল চালানো যায় না। এর সাথে শ্রমিকের মজুরি, যন্ত্রাংশ, তেল, মবিল, বিদ্যুৎ, জ্বালানির ব্যবস্থাও করতে হবে। মিল বন্ধ করা শ্রমিকদের জন্য আত্মহত্যার শামিল। দীর্ঘদিন শ্রমিকরা মিল চালু রাখার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। ধর্মঘট, অবরোধ, ঘেরাও, ভুখা মিছিল, কফিন মিছিল, থালা-বাসন নিয়ে মিছিল, কাফনের কাপড় পরে মিছিল এমনকি লাঠি মিছিলও করেছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আইন ভঙ্গ করে বেতন পরিশোধ না করার জন্য বিজেএমসি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ন্যায্য পাওনা দাবি করায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ফলে ভুখা শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মত অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। অবশ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যস্থতায় সরকার অনেক সময় আংশিক মজুরি/বেতন পরিশোধ করেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলেই অবহিত আছেন যে, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে না। তারা তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম করে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতিবাজদের ধরপাকড়ে তৎপর হলেও জুটমিলগুলো চালানোর ব্যাপারে কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। জোট সরকারের শেষ সময়ে চুক্তি করে কিছু বকেয়া বেতন/মজুরি পরিশোধ করলেও ৬ মাসের মধ্যে আর কোনো বেতন/মজুরি বা অবসরপ্রাপ্তদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে ২২টি জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলের ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ৩০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ৭ জন শ্রমিক ইতিমধ্যে অর্ধাহারে অনাহারে থেকে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। কয়েকটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ সাহায্য দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। অথচ এসব শ্রমিকের মিল কর্তৃপক্ষের কাছে বা সরকারের কাছে বকেয়া বেতন, মজুরি, পিএফ এর টাকা ও গ্রাচুইটি বাবদ অনেক টাকা পাওনা। শ্রমিকরা অর্ধাহারে অনাহারে থেকে এখন আন্দোলন করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তাই ৪টি কেন এখন যদি সব জুটমিল বন্ধ করে এক সাথে সব পাওনা পরিশোধ করা হয়, তাহলেও শ্রমিকরা প্রতিবাদ করবে না বলে মনে হয়। যে ৪টি জুটমিল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ওই সকল মিলের শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি যে ১৮টি মিল ভালভাবে চালানোর কথা বলা হচ্ছে ওই সকল মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতাও জরুরি ভিত্তিতে পরিশোধ করা দরকার। অবশ্য কথায় বলে ‘একেবারে মরা ভাল জ্যান্ত মরার চাইতে’। সরকারি মালিকানায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার চাইতে যদি বেসরকারিকরণ করলে মিলগুলো ভালভাবে চালানো সম্ভব হয়, সরকারের সেদিকেও নজর রাখা উচিত। জাতীয়করণ নীতি রেখে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। সুতরাং এই শিল্পের সমস্যার সমাধান বন্ধে নয়, বিরাষ্ট্রীয়করণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। 
০১৭১১৫৭৯২৬৭

0 comments:

Post a Comment