Monday, April 25, 2016

কবি গুরুর শিক্ষা জীবন

কবি গুরুর শিক্ষা জীবন
আলী ফোরকান
দেখতে দেখতে কেটে গেলো পাঁচটি বছর। বয়স হল সতের। সেই বালক রবীন্দ্রনাথ আর বালক নেই। বড় হওয়ার সাথে সাথে একগুঁয়ে হয়েছিল প্রবল ভাবে। কোন কিছুতেই তার যেন যায় আসে না। এরমক একগুয়ে ছেেেলকে নিয়ে বাড়ির সকলে দারুন ভাবনায় পড়লেন। শেষ পযর্ন্ত ঠিক হল,বিলেতে পাঠিয়ে ব্যারিষ্টারি করে আনা যাক।
রবীন্দ্রনাথ। জন্মটা হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। সেদিন ছিল বাংলা ১২৬৮ সালেন ২৫ বৈশাক আর ইংরেজি ৭মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ। চৌদ্দ জন ভাইবোনরা নিজেদের নিয়েই ছিল ব্যস্ত। অথচ তিনি ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ।
রবীন্দ্রনাথের বাল্যকাল ঃ গুরুজনদের তত্ত্বাবধানে নিয়মমাফিক নানা প্রকার শিক্ষাভ্যাস শুরু হলো। খুব ভোরে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তেন । তা সে শীতকালই হোক, কি বর্ষা অথবা গ্রীস্ম যাই হোক না কেন। এরপর সেই ভোরেই উঠেই এক কানা পালোয়ান হিরা সিং-তার কাছে ল্যাঙ্গোট পরে ধুলোমাটি মেখে কুস্তি লড়তেন । কুস্তি লড়া শেষ হতে না হতেই মাইনে করা মাষ্টার মশাই চলে আসতেন ভূগোল-ইতিহাস ইত্যাদি পড়াবার জন্য। তার পর স্কুল। বিকেল বেলা স্কুল থেকে ফিরে আসার পরও নিস্তার ছিল না। কেননা ড্রয়িং মাষ্টারের কাছে ছবি আঁকা শিখতে হতো এর পর আবার কিঞ্চিৎ ব্যায়াম। সন্ধা বেলা বই নিয়ে পড়তে বসতে গেলেই চলে আসতো তাঁর রাজ্যের ঘুম।
স্কুল জীবন ঃ বাড়ির পাশের স্কুল থেকে তাঁকে এনে ভর্তি করানো হলো বেঙ্গল একাডেমী নামে এক স্কুলে। তখন তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর। ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়া,বিশেষ করে বলা-কওয়া ভাল রকম হবে এই আশায় তাঁকে এই স্কুলটিতে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু এখানে রেখেও কোন লাভ হয়নি তাঁর। 
এ সময় বেঙ্গল একাডেমী থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল মেট্রোপলিটন স্কুলে, লোকে এই স্কুলটিকে বলত বিদ্যাসাগর হাই স্কুল। তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধীনে জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু এখানেও কোন লাভ হলো না। বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করে বসলেন। এরই ভিতরে মা মারা গেলেন। মা-হারা চৌদ্দবছরের এই বালক আরো প্রশয় পেল। স্কুল যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিলেন তিনি। ব্যস লেখাপড়াও হলো শেষ। দেখতে দেখতে কেটে গেলো পাঁচটি বছর। বয়স হল সতের। সেই বালক রবীন্দ্রনাথ আর বালক নেই। বড় হওয়ার সাথে সাথে একগুঁয়ে হয়েছিল প্রবল ভাবে। কোন কিছুতেই তার যেন যায় আসে না। এরমক একগুয়ে ছেেেলকে নিয়ে বাড়ির সকলে দারুন ভাবনায় পড়লেন। শেষ পযর্ন্ত ঠিক হল,বিলেতে পাঠিয়ে ব্যারিষ্টারি করে আনা যাক। সেকালে ধনীর দুলালরা লেখাপড়া না শিখলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ী পরীক্ষায় ফেল করলে তাদের বিলেতে পাঠানো হতো। রবীন্দ্রনাথ একা একা লাইব্রেরিতে বসে ইংরেজী পড়েন; আর ভালভাবে ইংরেজী আয়ত্ব করার চেষ্টা করতেন। এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখা উচিত। আর সেটা হলো-কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি লেখা তিনি বেশ কয়েক বছর হল আরম্ভ করেছিলেন। প্রায় বছর ছয়েক পূর্বে একটি পত্রিকায় তাঁর এক সুদীর্ঘ কবিতা প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা। পত্রিকাটির নাম “জ্ঞানঙ্কুর” আর তাঁর কাব্যের নাম ছিল “বনফুল”। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর। 
তা ছাড়াও ঠাকুরবাড়ি থেকেই মাসিক পত্রিকা বেরিয়েছে একটি, নাম ভারতী- আর সম্পাদক হয়েছেন বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ভারতীতেও লেখা বেরিয়েছে রীতিমতো- মাইকেলের মেঘনাদবদ কাব্যের আলোচনা, ছোট গল্প ‘ভিখারিণী’ ইত্যাদি। যেকারনে এতগুলো কথা বলতে হলো তা হলো লেখালেখি যেহেতু আগে থেকেই ছিল তাঁর তাই এখানে মানে আহমেদাবাদে এসেও লাইব্রেরিতে ইংরেজি চর্চার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর নিজের লেখালেখির কাজটি চলছিল। 

0 comments:

Post a Comment