Friday, December 27, 2013

মানব সম্পদ উন্নয়নে চাই কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ

 মানব সম্পদ উন্নয়নে চাই কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ

     ড. ফোরকান আলী

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান একটি দেশ। এ দেশের অর্তিনীতি ও উন্নয়নকর্ম মূলত কৃষিভিত্তিক। তাই কৃষিশিা গ্রহণ ও দতা অর্জন হচ্ছে কৃষি উন্নয়নের মূল হাতিয়ার। কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির মেরুদণ্ড। ‘জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের ন্যায়। কৃষি হলো তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ত দেখা দিলে তা সমস্ত গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়।’ চীনা এ প্রবাদটি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি সুষ্ঠু কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিা ও চিকিৎসার উপাদানগুলো যোগান দেয়। কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গ দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কারিগরি কৃষিশিা ও আধুনিক প্রযুক্তির সার্বিক প্রয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯২% লোকই প্রত্য বা পরোভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দতা, অভিজ্ঞতা ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কৃষিশিা গ্রহণ অপরিহার্য। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৪ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে কৃষি শিাকে একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালের এসএসসি পরার্থীরা আবশ্যিক হিসেবে কৃষিশিা বিষয়ে পরীা দেয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ১৯৯৭ সাল থেকে যুগোপযোগী এই কর্মমুখী ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিষয় কৃষিশিাকে মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন কারণে অনেক শিার্থী আগ্রহ থাকলেও কৃষিশিা লাভ করতে পারছে না। ফলে তারা যুগোপযোগী কর্মমুখী এই শিা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দেশে দ জনশক্তি সৃষ্টি মাধ্যমিক স্তরের শিাব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে।  দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের ল্েয মাধ্যমিক শিা প্রতিষ্ঠানে কৃষি ও কারিগরিশা বাধ্যতামূলকক করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় বারো হাজার।  আর এই সকল বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ ল। ছাত্রছাত্রীর শতকরা ৫৩ ভাগ মাধ্যমিক স্তরেই ঝরে যায়। যারা মাধ্যমিক পরীায় উত্তীর্ণ হয় তাদের মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ ছেলেমেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীা দেয়। কিন্তু এই হার ক্রমান্বয়ে আরো কমছে। মাধ্যমিক শিা লাভের পর যাদের পে উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চশিা গ্রহণ সম্ভব নয় তারা অন্তত মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হচ্ছে কৃষি। মাঠ ফসল ছাড়াও কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৎস্য পশু-পাখি এবং বনজ সম্পদ। কৃষির এসব শাখা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে ৫৭ মিলিয়ন গবাদি পশু, ১৩৭ মিলিয়ন হাঁস-মুরগি এবং স্থলভাগের মধ্যে ২২ লাখ হেক্টর জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ টন, যার মধ্যে ১২ লাখ টন অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে এবং বাকি ৬ লাখ টন সামুদ্রিক এলাকা থেকে। পশু-পাখি থেকে আমরা মাংস, দুধ ও ডিম পাই।  যা আমাদের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে । মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২০০৪-২০০৫ সালে ২১২৮ কোটি টাকা আয় করে। এ সময়ে জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল ৫% এবং রপ্তানি আয়ে ১২%। বন পরিবেশতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বনজ সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। কৃষিজ বনায়নের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করা সম্ভব। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫% বন থেকে আসে। কৃষির উপর্যুক্ত শাখাগুলোর দ ব্যবস্থাপনার জন্যেও কৃষি ও কারিগরি শিা আবশ্যক। কৃষিশিা প্রসার ঘটলে সকল স্তরের মানুষ কৃষি সম্বন্ধে জানবে। মানুষ কৃষি ও কারিগরি শিা সম্পর্কে সচেতন হলে চাষের প্রয়োজনীয়তা বুঝবে। এ সম্পর্কে দতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এতে মানুষের মধ্যে চাষাবা ও কারিগরি কাজের উৎসাহ জাগবে। এই উৎসাহ তাদেরকে কৃষির বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান খুঁজে বের করত সাহায্য করবে। এবং আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করতেও প্রেরণা যোগাবে। কারিগরি ও কৃষিশিায় শিতি এসব লোকজন স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। শিা কাঠামোর মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষিশিা বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিার ওপর আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত। তাছাড়াও দেশের বৃহত্তর কৃষক জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও  কৃষিশিা প্রদানের জন্যে উপানুষ্ঠানিক শিা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ শিা কার্যক্রম সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর’র পরিচালনা করতে পারে। এতে দেশের দরিদ্রতা দূর করে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিার প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চাকুরীর অপ্রতুলতার কারণে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যাশায় তরুণদের অনেকেই কারিগরি শিাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়েলডিং, ইলেকট্রিকের কাজ, সেলাই ও কনফেকশনারি ব্যবসার প্রতিও শিতি তরুণ-তরুণীরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র ঢাকা নগরীতেই গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার। এদিকে মেয়েরা স্বাবলম্বী হওয়ার ল্েয ঘরেই ছোট ছোট শিল্প গড়ে তুলছে। এসবই উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার। বেকারত্ব মোচনে আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচী সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মকর্মসংস্থানের প্রসার ও বৃত্তিমূলক শিার প্রতি সাধারণভাবে তরুণদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিরই সহায়ক হবে। তবে কারিগরি শিার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিই কেবল বড় কথা নয়। এর পাশাপাশি কারিগরি শিার মানের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি শিার চাহিদা মিটাতে সরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। তবে সেগুলো যাতে উপযুক্ত মান রা করে পরিচালিত হয় সে ব্যবস্থাও অবশ্যক। এেেত্র সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সংকট মোচনের ল্েয প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিার প্রসার বাঞ্ছনীয়। কারিগরি শিার সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে এ ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থাও নিতে হবে। এই ল্েয সরকারি উদ্যোগ আরো সম্প্রসারিত হওয়া দরকার।  বর্তমানে দেশে যে কারিগরি শিার চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে, সেদিকে ল্য রেখে সরকারি উদ্যোগে যেমন আরো প্রশিণ কোর্স ও প্রশিণ ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজন। তেমনি উপযুক্তমানের প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্যাপকভিত্তিক সরকারি সহায়তারও দরকার। তরুণদের মধ্যে হতাশা মোচনেও কাগিররি শিা যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে।  যে দেশে ও সমাজে কর্মসংস্থানের অভাব এবং একটি বড় সমস্যা। শিতি বেকারের সংখ্যা বিপুল সে দেশে কারিগরি শিার মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তা বলার অপো রাখে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকার  প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিা প্রসারের আরো ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উন্নত, আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিার প্রয়োজনীয়তার কথা নূতন করে ব্যাখ্যা করা অবান্তর। জীবনের সর্বেেত্র যেখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যোগ্যতা ও দতাই যেখানে উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের ভিত্তি। সেখানে উন্নত প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কারণ কারিগরি শিার ল্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বৃত্তিমূলক প্রশিণের মাধ্যমে দ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। কেননা বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। আর এই শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়তে হলে প্রয়োজন দ প্রযুক্তিবিদ, দ ইঞ্জিনিয়ার ও দ টেকনিশিয়ান। আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপান ও জার্মানির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, তারা আমাদের ১০ ভাগের এক ভাগ বিদেশি ঋণ নিয়ে আজকের বিশ্ব অর্থনীতিকে শাসন করছে। সেইদিন তারা উপলব্ধি করেছিল তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দাঁড় করাতে হলে সর্ব প্রথম প্রয়োজন শিল্প-কারখানা, কৃষি-খামার ও শিা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত আধুনিকীকরণ। এই উপলব্ধি থেকে তারা সকল প্রযুক্তিবিদ্যায় কারিগরি প্রশিণ কোর্স চালু করে। সেখানে কারিগরি শিার হার ৫৬% এবং বর্তমানে তারা কারিগরি শিার হার ৭০%-এ উন্নীত করার জন্য আন্দোলন করছে। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর অল্প সময়ে যে বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছে। তার মূলে রয়েছে তাদের শিল্পনির্ভর অর্থনীতি। আর শিল্পনির্ভর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর শিাব্যবস্থা। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ৮%-১০% লোক কারিগরি শিায় শিতি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০% লোক কারিগরি শিায় শিতি। সুতরাং দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণের স্বার্থে কারিগরি শিায় শিতি জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক কারিগরি শিার ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করেন না। তারা তাদের সবচেয়ে কম মেধাবী সন্তানটিকে কারিগরি শিায় শিতি করাতে চান। এখনও গ্রামে-গঞ্জে ভোকেশনাল-এর কথা শুনলে মানুষ নাক সিটকায়। এসএসসি (ভোক) বর্তমানে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ-এর শিা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। এখানে জেনারেল শিার মতো পদার্থ, রসায়ন, ইংরেজি, বাংলা, গণিত, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের সমন্বয় রয়েছে। পাশাপাশি  একটি করে টেকনিক্যাল সাবজেক্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে ভোকেশনালের একজন ছাত্র এখন বুয়েট ও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে। আর যারা উচ্চশিার সুযোগ পাচ্ছে না তারা বিদেশে গিয়েও বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রিতে চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং ছাত্র, শিক ও অভিভাবকদের প্রতি উদাত্ত আহবান- আপনারা কারিগরি শিার প্রতি বিরূপ ধারণা ত্যাগ করুন। সরকারের প্রতি আহবান- কারিগরি শিাকে বেগবান করুন, দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করুন। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই চলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। খুঁড়িয়ে চলছে দেশের কারিগরি শিাব্যবস্থা। ফলে দেশে দ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে না। পর্যাপ্ত লোকবল, অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবের পাশাপাশি রয়েছে নানা সমস্যা। শিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ জীবনমানের উন্নয়ন এবং পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা নেই। মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই শিার্থী হলেও তাদের জন্য দেওয়া সরকারি মেধাবৃত্তি খুবই অপ্রতুল। উপরন্তু কারিগরি শিা বোর্ড বিভিন্ন ধরনের ফি দফায় দফায় বাড়িয়েই চলেছে। এসব কারণে নতুন শতকে, তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিযোগিতার যুগে আমাদের দেশের কারিগরি শিায় লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। এখনো তা মান্দতা আমলেরই রয়ে গেছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও আমাদের সেকেলে কারিগরি শিা আদৌ দ ও প্রশিতি জনবল তৈরি করতে পারছে না। পুরোপুরি কর্মমুখী হলেও ‘কারিগরি শিা’ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে পৃথক শিাব্যবস্থা হিসেবে আলাদা কোনো গুরুত্ব পায় না। দেশের বিশিষ্ট শিাবিদদের মতে, ‘কারিগরি শিার ওপর জোর দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করেছে। মিড লেভেলের কারিগরি জনশক্তি যে দেশের কর্মেেত্র যত বেশি নিয়োজিত, সেই দেশ তত বেশি উন্নতি করতে পেরেছে।’একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত এক সমীায় দেখা গেছে, জাপান ও অষ্ট্র্রেলিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ এবং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও দণি কোরিয়াসহ প্রায় সব দেশে কারিগরিভাবে দ মিড লেভেলের জনশক্তির পরিমাণ মোট শিতি জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫৮ থেকে ১৭ ভাগের মধ্যে। আর এসব দেশে জনপ্রতি বার্ষিক মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ৪০ হাজার থেকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার। অথচ বাংলাদেশে তা মাত্র ২ থেকে ৩ ভাগ এবং মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ৪৮০ মার্কিন ডলার। কারিগরি শিা অধিদফতরে সুত্রমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজস্ব^ভুক্ত মাত্র ২০টি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট এবং ৩টি মনোটেকনিক ইনষ্টিটিউট চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ড থেকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে ১৮টি নতুন পলিটেকনিক ইন¯িটটিউট স্থাপন এবং পুরনো ২০টি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে মধ্যম স্তরের কারিগরি শিার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনটি বিভাগীয় সদরে ৩টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট সরকারের অনুমতি নিয়ে অপরিকপ্লিতভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রতি সেশনে বর্তমানে ১২ হাজার শিার্থী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পারে। তবে সরকারি হিসাব মতে, এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মিড লেভেল প্রকৌশলীর সংখ্যা যদি শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাহলেও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা কমপে আরো ৪ গুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৫৪ সালে কমার্স, লেবার ও ইন্ডাষ্ট্রিজ (সিএলআই) মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিা পরিদফতর সৃষ্টি করে এই শিা পরিচালনার ভার ন্যস্ত করা হয়। যা আজ কারিগরি শিা অধিদফতরে রূপান্তরিত। ১৯৮৩ সালে এই শিাকে কারিগরি ক্যাডারভুক্ত করা হয়। পলিটেকনিক শিার শুরু থেকেই শিকদের জন্য আনুপাতিক হারে উচ্চতর পদ সৃষ্টি না হওয়ায় পদোন্নতির সুযোগ ছিল না। ১৯৮৩ সালে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার পরও পলিটেকনিক শিকদের চাকরি কাঠামোর পরিবর্তন হয়নি। পলিটেকনিক শিকরা বলছেন, বর্তমানের প্রচলিত কাঠামো দেশের চলমান সাধারণ শিা কাঠামোর সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ। পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের একজন শিক যে পদে যোগদান করেন, বেশিরভাগ েেত্রই তাকে সেই পদ থেকেই অবসর গ্রহণ করতে হয়। শিকরা বর্তমানের জুনিয়র ইনষ্ট্রাক্টর-ইনস্ট্রাক্টর-চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পরিবর্তে জুনিয়র লেকচারার-লেকচারার-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর-অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং প্রফেসর ধরনের পদ কাঠামো প্রবর্তনের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। দেখা গেছে, দেশের ৩৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউটের মধ্যে ৩১টিতেই অধ্যরে পদ শূন্য। ৩৫টিতে উপাধ্যরে পদ শূন্য। বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যান্য শিক পদের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ পদ শূন্য। ৫ বছর আগে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্টেèামা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে আপগ্রেড করে আšøর্জাতিক মানে উন্নূীত করে ৪ বছর করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি ১৭৬টি অতিরিক্ত শিক পদ সৃষ্টির সুপারিশ করলেও গত ৫ বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অধ্য, উপাধ্য, চিফ ইনন্সট্রাক্টরের পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। চরম শিক স্বল্পতার কারণে শিার্থীরাও সুষ্ঠু শিা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কাতি ফলাফল অর্জনেও ব্যর্থ হচ্ছে। দেশে পর্যাপ্ত ডিপ্লোমা   ইঞ্জিনিয়ারও তৈরি হচ্ছে না। ডিপ্লোমা  ইঞ্জিনিয়ারিং শিাক্রমে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিার গুরুত যথাক্রমে শতকরা ৪০ ও ৬০ ভাগ। ফলে ব্যবহারিক কাস বা হাতে-কলমে শিার গুরুত্বই বেশি। অথচ প্রতিটি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিটিউটের ল্যাবে বা ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতির সংকট তীব্র।  কাস বা হাতে-কলমে শিার গুরুত্বই বেশি। অথচ প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ল্যাবে বা ওয়ার্কশপে   যন্ত্রপাতির সংকট তীব্র। পরিসংখানে জানা যায়,  ১৯৫৪-৫৫ সালে এ দেশে যখন কারিগরি শিা চালু হয়, তখন পলিটেকনিকের যে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল।  শিল্প কারখানায় তা ছিল না। আর আজ তার উল্টো। শিল্প কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে, কিন্তু পলিটেকনিক ইনসিঅটটিউিটের ল্যাবে বা ওয়ার্কশপে যšúপাতি, ব্যবহারিক কাস পরিচালনার যোগ্য টেকনিশিয়ান এবং শিকসহ সবকিছুরই সংকট আর সংকট। কারিগরি শিার মানোন্নয়নের জন্য পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল শিকদের প্রশিণ এবং ষ্টাফ ডেভেলপমেন্টের কোনো ব্যবস্থা নেই। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক শিকদের জন্য একটি মাত্র টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে (টিটিটিসি) প্রায়মৃতপ্রায় করে রাখা হয়েছে। আর ভোকেশনাল শিকদের জন্য বগুড়ায় একমাত্র ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইন¯িটটিউটেরও (ভিটিটিআই) কোনো প্রোগ্রাম বর্তমানে নেই। আবার এ দুটি প্রশিণ কেন্দ্রের শিক পদের শূন্যতাও দীর্ঘদিন ধরে পূরণ করা হচ্ছে না। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কারিগরি শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই লেখাপড়া করে থাকে। অথচ গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ড কোর্স অ্যাফিলিয়েশন ফি, পরীা ফি এবং নম্বরপত্র ফিসহ সব ধরনের ফি বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। এর চাপ পুরোপুরিই বহন করতে হয়েছে শিার্থীদের। পান্তরে, কারিগরি শিার্থীদের দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে একই হারে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ষাটের দশকে ধার্যকৃত শিার্থীদের বৃত্তি কোটা ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রতি সেমিষ্টারে ১৩০ টাকা দেওয়া হয়। ছাত্ররা ৫০ বছর আগের বাজার দরের নিরিখে বৃত্তির অর্থ পুনর্নির্ধারণ এবং বৃত্তির কোটা ১০০ ভাগে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে এলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সার্বিক সমস্যা সম্পর্কে বাংলাদেশ কারিগরি শিা অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, ‘কিছু কিছু সমস্যা রয়েছেÑ এ কথা সত্য।  ৩৮টি পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের মধ্যে ৩১টিতেই অধ্যরে পদ শূন্যÑ এক দিক থেকে কথাটি সত্য। তবে এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পাধীন। আর অধ্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ৩ বছর উপাধ্য পদে থাকলে তবেই অধ্য হওয়া যায়। কিন্তু এমন লোকের সংখ্যা কম।’ ছাত্রবৃত্তি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘এজন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। ১৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা বৃত্তির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে ৩ বছর আগেই পাঠানো হয়েছিল।’ শিকদের পদোন্নতিতে জটের অভিযোগ ও রয়েছে। তবে এব্যাপারে মহাপরিচালক বলেন, ‘গত ৫ বছরে বহুবার শিকদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। শিক প্রশিণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টিটিটিসি এবং ভিটিটিআইতে পদ শূন্য হলে তাতে ডেপুটেশনে লোক পাঠানো হয়। কোনো পদ খালি রাখা হয় না। সবচেয়ে বড় কথা দেশে দ লোক সৃষ্টি করতে হলে  কারিগরি শিা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যথাযথ নজর দিতে হবে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কারিগরি শিার কোন বিকল্প নাই। আমরা আশাকরি সরকার কারিগরি শিা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে দেশের বৃহৎ বেকার যুবশক্তি কমের্র হাতিয়ারে পরিণত হবে।
†jLK: W.†dviKvb Avjx
M‡elK I mv‡eK Aa¨¶
36 MMbevey †ivo,Lyjbv
01711579267




0 comments:

Post a Comment