Friday, December 27, 2013

প্রসঙ্গঃ জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা



প্রসঙ্গঃ জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা


ড. ফোরকান আলী

সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক স্থানে জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করছে। কোথাও কোথাও গাছতলায় বসেই চলছে ক্লাস। পাঠ্যবই পৌঁছে না সময়মতো। সিডরকবলিত এলাকায় এখনও বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামো দাঁড়ায়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম, দলাদলি ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। ফলে দিন দিন জাতির মেরুদণ্ড বলে পরিচিত শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার ১৩৭টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ক্লাসরুমসহ অবকাঠামোগত সমস্যা। এসব স্কুলের কোনটিতে নিজস্ব ভবন নেই, আবার কোনটিতে থাকলেও জীর্ণশীর্ণ। এমনকি নেই বসার জায়গা। শিক্ষা উপকরণের অভাব । একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে, শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী নগরীসহ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চলছে চরম সংকট। জেলা ও মহানগরীর প্রায় ১৩৭টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের অভাবসহ রয়েছে নানা সমস্যা। মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলার এসব স্কুলের কোনটির নেই ভবন, আবার কোনটির থাকলেও তা পুরনো, জীর্ণ-শীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাওবা টিনের চালা, দেয়াল হিসেবে বাঁশের বেড়া। বেঞ্চ নেই, নেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা। কোনটির নেই ব্ল্যাকবোর্ড। রয়েছে শিক্ষক সংকট। ছাত্র-ছাত্রীদের স্থান সংকুলানের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কর্মসূচি। এক যুগেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত চারঘাট উপজেলার মোহননগর লক্ষ্মীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এখন পর্যন্ত- তৈরি হয়নি পাকা ভবন। বাঁশের বেড়া ও টিনের চাল দিয়ে তৈরি এ বিদ্যালয়ে কোনরকমে দু’শতাধিক ছাত্রছাত্রী প্রতিবন্ধকতার মধ্যে লেখাপড়া করছে। সেখানে নেই কোন বসার বেঞ্চ। মহানগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলায় সরকারি ৫৫৯টি এবং ৪২১টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়সহ মোট ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। ইতিমধ্যেই জীর্ণ ভবন, স্থান সংকটের অভাব, কোনটির ভবন নেই, আবার কোনটির ভবনের সংস্কার দরকারÑ এমন তথ্য খোদ রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে সংশ্লি­ষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুননির্মাণ ও সংস্কার-সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-২ এর অধীনে এসব স্কুলের প্রতিটির পাঠদান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলানের অভাব মেটাতে দুটি করে নতুন রুম স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি  দু’জন করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। খোদ রাজশাহী মহানগরীর ৯টি স্কুলের পুননির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই সংশ্লি­ষ্ট কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। গৌরহাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ রাজস্ব বিভাগের জনৈক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী নিজ নামে করে নিয়ে দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ঐ এলাকার অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় উপজেলা বাগমারার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-২ এর অধীনে সম্প্রসারণ কর্মসূচির মধ্যে এনে সংশ্লি­ষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন খোদ শিক্ষা কর্মকর্তা। তানোর উপজেলার ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও অন্যান্য উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর মতোই। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, নারায়ণপুর-২ ও চাপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনশেডের নিচে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করে। মোহনপুর উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা করুণ হলেও বেড়াবাড়ি, বসন্তকেদার, বাকশিমুইল ও জাহানাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষের সংকট প্রকট। দুর্গাপুর উপজেলার ধরমপুর ও আলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। পবা উপজেলার ৯টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো খারাপ। পুঠিয়া উপজেলার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুননির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রস্তাব পাঠানোর পর ইতিমধ্যে ৩৬টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু' বাকি ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা। বাঘার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুননির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সংশ্লি­ষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলার ১২টি প্রাথমিক রেজি. বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে দেশের অনেক জায়গায়  প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার ১৮৩টি গ্রামের মধ্যে সরকারি ও রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৮২টি। সেই হিসেবে এখানে ১০১টি গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এতে করে জরিপ অনুযায়ী পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২৩ হাজারের বেশি শিশু থাকলেও প্রায় ৫ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসছে না। উপজেলার ৫০টি সরকারি এবং ৩২টি রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ হাজার ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী লেখাপাড়া করছে। কিন্তু এ সব বিদ্যালয়ে ৪৪ জন শিক্ষকের পদশূন্য। এ এলাকায় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ১ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। দীর্ঘ ১ বছর ধরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে ১০১টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকলেও কেউ বিদ্যালয় স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে না। বিদ্যালয় স্থাপনে নানা ঝক্কিঝামেলায় আর কেউ বিদ্যালয় গড়তে আগ্রহ করছে না। কর্তৃপক্ষের শিক্ষার অভাবসহ সার্বিক নজরদারি না থাকায় প্রতি বছরেই ১ হাজার ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। অনেকের আগ্রহ অংকুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মানারকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সাল থেকে যুদ্ধ করতে করতে ১৪ বছর পার করে ২০০৮ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ফলে গ্রামের পর গ্রামের বিদ্যালয় শূন্য থাকলেও এখানকার কেউ আগের মতো বিদ্যালয় স্থাপনে এগিয়ে আসছে না। তাছাড়া উপজেলায় গত ২০ বছরের মধ্যে কোনো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়নি।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার ৬১টি গ্রাম  ‘সবার জন্য শিক্ষা’ সরকারের এ নীতির আওতায় এখনো আসেনি । পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের মধ্যে ৬১টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নাই। ফলে এ এলাকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষা বঞ্চিত শিশুরা অশিক্ষা-কুশিক্ষাসহ নানা কুসংস্কার নিয়েই বড় হচ্ছে। যে বয়সে শিশুরা মায়ের কোল ছেড়ে বইখাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, বিদ্যালয় না থাকায় এ সব শিশুরা সংসারের নানা কাজে নিয়োজিত রয়েছে। গবেষণার তথ্য মতে, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫২টি। তন্মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৫টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০টি, কমিউনিটি ৬টি ও রেজিঃ ছাড়া ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৬১টি গ্রামে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ওই সব এলাকায় শিক্ষিতের হার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উল্লেখিত চিত্রটি বলতে গেলে সারাদেশেরই বললে চলে।

কানাডার সাইমন ফ্রাজার ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট মিস জেনিফার হোভ’র গবেষণা মতে, মাধ্যমিক স্তরে ৮৩ ভাগ শিক্ষার্থীই ঝরে পড়ছে। তবে এর চেয়েও উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পর ৫৫ ভাগ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে পাই রাখে না। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের শতকরা মাত্র ১৪ জন আর ছাত্রদের মধ্যে ২০ জন অংশ নেয় এসএসসি পরীক্ষায়। শিক্ষাক্ষেত্রে এ নাজুক অবস্থা সম্পর্কে গবেষকের মতামত হচ্ছে, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, পাইভেট পড়া প্রথা, বাল্যবিয়ে, স্কুল ও আর্থ-সামাজিক প্রতিকূল পরিবেশ। এছাড়া স্বল্পসংখ্যক উপবৃত্তিসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থা দায়ী। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি দরিদ্র দেশ। একমাত্র দারিদ্র্যের কারণে এ দেশ নানা বিষয়ে আজও পিছিয়ে আছে। শিক্ষা তার মধ্যে প্রধান। দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে শিক্ষার হার বাড়বে না। আর শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরেপড়া বন্ধ হবে না। মিস হোভ তার গবেষণাপত্রে আরও একটি মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছেন, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কারিকুলাম এবং ট্রেড ও ভোকেশনাল শিক্ষা এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া শিক্ষা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সুযোগ সুবিধার অতি কেন্দ্রীভূতকরণ, ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষিত ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব এবং স্কুল ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। মিস হোভ সুপারিশ করেন, ছাত্রীদের উপবৃত্তি লাভের জন্য পাস নম্বর ৪০ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সমন্বিত কর্মপ্রয়াস, স্কুলের একাডেমিক-আর্থিক কার্যাদি মনিটরিং ও মূল্যায়নের। আমরা মিস হোভের গবেষণাশ্রমকে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে একথা জোর দিয়ে বলতে চাই, শিক্ষাসহ দেশের যে কোনো অগ্রগতি ও উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে সবার আগে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। তবে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সাক্ষরতার হার বাড়াতে একটি মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে জাতীয় সাক্ষরতার হার যেখানে ৬৩ শতাংশ এবং প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাস করা শিশুর হার ৬৮ শতাংশ। সেখানে সাক্ষরতা ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনকারী শিশুর হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করাই সরকারের লক্ষ্য। এটা ভালো উদ্যোগ, সন্দেহ নাই। তবে  এক্ষেত্রে সাফল্য  পেতে হলে দেশে বিদ্যমান বাস্তবতা যথাযথ অনুধাবন করতে হবে। আর সে মতে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়ছে দীর্ঘদিন ধরে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিইডিপি-২) কথা বলতে হয়। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বিকেন্দ্রায়ন এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাকে আরও সহজ করতে সরকার ২০০৩ সালে পিইডিপি-২ হাতে নেয়। দাতাগোষ্ঠীর আংশিক সহায়তায় কর্মসূচিটি ২০০৯ সালে সম্পন্ন হবার কথা। পর্যালোচনায় দেখা  গেছে, অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে এই কর্মসূচির আশাব্যঞ্জক নয়। প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হলে দূর করতে হবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য। উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি, পাঠক্রম, সিলেবাস অভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশে একই সঙ্গে চালু রয়েছে সাধারণ ও মাদ্রাসা পদ্ধতি। আবার সাধারণ পদ্ধতি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে বিভক্ত। দেশে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। গ্রামের স্কুলগুলোতে ভালো শিক্ষকের অভাব তীব্র। গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষা সরঞ্জামও অপর্যাপ্ত। শিক্ষার্থীদের যেই যতœ প্রয়োজন, স্বাভাবিকভাবেই তা হয় না। শিক্ষার মান বাড়াতে এঅবস্থার পরিবর্তনের উপর জোর দিতে হবে। অবশ্য নূতন কর্মপরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ জোরদার এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি রাখা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা গ্রহণই যথেষ্ট নয়।  নিশ্চিত করতে হবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। ভালো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা সচরাচর গ্রামের স্কুলে থাকতে চায় না। এর কারণগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার হার বাড়াতে সর্বাগ্রে ড্রপ আউট বা ঝরে পড়া বন্ধ করার উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই উল্লে­খযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে যায়। নূতন কর্মপরিকল্পনায় স্কুলে শতভাগ শিশুর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ঝরে পড়া রোধে মধ্যাহ্ন-আহার, উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে । এটা ঠিক, ড্রপ আউটের মূল কারণ দারিদ্র্য। তবে শিক্ষকদের অযতœ, শিক্ষাদানে আন্তরিকতার অভাব এবং অভিভাবকদের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। টিআইবির রিপোর্টে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হলে সর্বাগ্রে শিক্ষা অফিসগুলোর দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা জরুরি বলে মনে করি।

অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ উদ্যোগটি অবশ্যই চমৎকার ও প্রশংসনীয়, সন্দেহ নেই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস, পড়াশোনা ও স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। সাধারণত হুট করে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করানো হলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা অস্বাভাবিক বোধ করে। প্রি-প্রাইমারি বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের ক্লাস ওয়ানে পড়াশোনার প্রস্তুতি দেয়া হবে। নতুবা শিশুরা হুট করে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েই পড়াশোনা করবে না। এটি চালু করা হলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির আগেই শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুলে যাতায়াতের অভ্যাস গড়ে উঠবে। তারা পড়াশোনা শেখার পাশাপাশি স্কুলের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও স্কুলের আচার-আচরণ জানতে ও শিখতে পারবে। ফলে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরসংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি স্কুলভীতি দূরীভূত হওয়ায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক কমবে। বর্তমানে দেশের ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই হয় এনজিও কর্তৃক পরিচালিত, নয়তো স্থানীয় উদ্যোগে গড়ে তোলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারি এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক নয়। এ দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। তাছাড়া রয়েছে  শিক্ষক স্বল্পতা - এ রকমই চিত্র। বাংলাদেশে অনেক ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখা যায় না। উদ্যোগটি মাঝপথে ভেস্তে যায়। এ ক্ষেত্রে অন্তত এরকমটি ঘটবে না বলে আমরা আশা করি। সে জন্য অবশ্য সরকারকে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান  কে দিয়ে কাজ করাতে হবে। প্রাথমিকভাবে দেশের যেসব বেসরকারি স্কুলে প্রি-প্রাইমারি চালু আছে সেগুলোর কারিকুলাম, শিখন পদ্ধতি, শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা সরকারি উদ্যোগে করা দরকার। এর পরে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালুর কথা ভাবা যেতে পারে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কারিকুলাম তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এখনই একযোগে কাজ শুরু করা উচিত। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা-ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি তা সফল করার জন্যও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ সরকারেরই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
†jLK: W.†dviKvb Avjx
M‡elK I mv‡eK Aa¨¶
36 MMbevey †ivo,Lyjbv
01711579267


0 comments:

Post a Comment