উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি
ড.ফোরকান আলী
যে জাতি যত বেশি শিতি, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিা ছাড়া কোন জাতি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেনা। শিা,কোন দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা অঞ্চলের বিষয় নয়। এটি মূলতঃ সমগ্র জাতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বলতে হয় যে, উচ্চ শিা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উচ্চ শিতি ব্যক্তিরাই দেশের নীতিনিধারণ থেকে শুরু করে দেশের সব কর্মকান্ডের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীায় পাস করা প্রায় এক লাখ শিার্থী উচ্চ শিা গ্রহণের সুযোগ পাবে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে বিজ্ঞানের শিার্থীদের। এ বিভাগে ভাল ফলাফলকারী শিার্র্থীরাও তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেশি হওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। এবার এইচএসসি পাস করেছেন দুই লাখ ৭৭ হাজার শিার্থী। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে এক হাজার চার শ’ ৫০টি শিা প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে আসন রয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার পাঁচ শ’ ৯২টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ২৭টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে বাকি ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৭শ’ শিা প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও ডিগ্রি কোর্সের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি সরকারি কলেজে অনার্স ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে। এখানে এক লাখ ৩৫ হাজার শিার্থী অনার্স ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পাবে। বাকি ১৬শ’ চারটি ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৭০ হাজার শিার্থী ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫২টি। এতে প্রায় ১৫ হাজার শিার্থীকে অনার্সে ভর্তি করা হয়। আর এ বছর পাস করেছে দুই লাখ ৭৭ হাজার পাঁচ শ’ ২৩ জন শিার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হজার দুই শ’ পাঁচ জন। এবার পাসের হার বেশি হলেও ঢাকা সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে তীব্র প্রতিযোগিতা। পত্রিকার খবরে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে পাঁচ হাজার দুই শ’ ৮৯টি। সাধারণভাবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিার্থীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও মেডিকেল। বুয়েটে ৫টি অনুষদে ১৪টি বিভাগে মোট আসন রয়েছে মাত্র আট শ’ ৮৬টি। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন কোটা রয়েছে। দেশে বর্তমানে ১৪টি মেডিকেল কলেজে মোট দুই হাজার ৬০ জন শিার্থী ভর্তি করা হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ মোট ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে তিন হাজার সাড়ে তিন শ’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদে ২৫টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা এক হাজার দুই শ’ ৮৩টি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি বিভাগে তিন হাজার আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে ৩৪টি বিভাগে প্রায় দুই হাজার চার শ’ আসন রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিভাগে মোট এক হাজার দুই শ’ ২০টি আসন রয়েছে। শাহ্ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি বিভাগে এক হাজার দুই শ’ ৫০টি আসন রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি ডিসিপ্লিনে মোট ছয় শ’ আসন রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি বিভাগে রয়েছে মোট ছয় শ’ ৩৮টি আসন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট এক শ’ আসন । শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি অনুষদেরয়েছে মোট তিন শ’ ৭৫টি আসন । হাজী মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছয়টি অনুষদের ১৫টি বিভাগে তিন শ’ ৩০টি আসন রয়েছে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি অনুষদের সাতটি বিভাগে মোট সাড়ে তিন শ’ আসন রয়েছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ শ’ আসন রয়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি বিভাগে মোট চার শ’ ৮৫টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪টি বিভাগে চার শ’ ৩১টি আসন রয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি বিভাগে চার শ’ ৮৫টি আসন রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বিভাগে এক শ’ ৮০টি আসন রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট তিন শ’ আসন রয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন শ’ আসন রয়েছে। এছাড়া আরও নতুন দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় -সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিার্থীরা ভর্তি হওয়ার পরও অনেক মেধাবী শিার্থী ঝড়ে পড়বে। দেশের বিশিষ্ট শিাবিদরা জানান, সবাই উচ্চ শিার সুযোগ পাবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক। বিশিষ্ট শিাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, উচ্চ শিার েেত্র আসন না বাড়িয়ে এেেত্র বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, সবাইকে অনার্স কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে হবেÑ এমন কোন কথা নেই। যাদের মেধা আছে তারাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আমাদের উচিত পাসের হার না বাড়িয়ে সুশিায় শিতি করা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, যেভাবে পাসের হার বাড়ছে সেভাবে সুশিতি ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে না। ছেলে-মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাল করলেও বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে সবাই পড়তে পারবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, পাসের হারের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়ানো সম্ভব নয়।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়কলেজ, কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকারের খোলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে একটি যুগান্তকারি পদপে বলে আমরা মনে করি। এমনিতে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসছে শিার্থীর বয়সখাদক মরণব্যাধি সেশনজট। এমন শিার্থী ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে যাদের উচচশিার শেষ সনদ পেতেই শেষ হয়ে যাবে সরকারি চাকরি পাবার বয়স। এদিকে গত ২৬ আগষ্ট দেশের সাতটি শিা বোর্ড়ের এইচ এস সি পরীার পাশাপাশি আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীার ফল প্রকাশিত হয়েছে। মাদ্রাসা থেকে পাস করা মেধাবীরাও ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়াও এবার অন্যান্য বারের তুলনায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে জিপিএ -৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও। সাতটি বোর্ডে অনুষ্ঠিত এইচ এস সি পরীায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ১’শ ৪০ জন। এইচ এস সি পরীায় পাসের পর শিার্থীরা উচ্চ শিার জন্য ভর্তি হয়। এেেত্র যারা মেধাবী ও জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রতি। এতে তারা মেড়িকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে থাকে। এবার এেেত্র আসন রয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৬০ টি। কিন্তু এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজারের অধিক শিার্থী। তাদের প্রায় সবার আকাঙ্কা এ দুটির প্রতি। কিন্তু সবার ভাগ্যে সে সুযোগ হবেনা। এছাড়া এবার অধিক শিার্থী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। পরীায় পাসের হার বাড়ায়, আসন সংকট দেখা দেয়। ফলে এবছর এইচ এস সি পাস করেও প্রায় ১ লাখের অধিক শিার্থী উচ্চ শিার সুযোগ পাবেনা।
দুই-তৃতীয়াংশ শিার্থীই তাদের আকাক্সা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবেনা। এবারের ভর্তি যুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে সরকারি ১৩ টি মেডিকেলের ১ হাজার ৪৫০টি ও বুয়েটের ৮১০টি আসন নিয়ে। দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫টি। আর ৫৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা ২৩ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ কলেজে সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ৯০ হাজার ৬টি। একই সঙ্গে এর অধিভুক্ত ১ হাজার ৬৯ টি ডিগ্রি কলেজে স্নাতকের আসন রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬১টি। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল, বি আই টি, টেক্রটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বেশ কিছু কারিগরি কলেজ মিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আসন রয়েছে। এসব আসন পূর্ণ হওয়ার পর ও লাধিক শিার্থী কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেনা। এর মধ্যে বাদ পড়বে অসংখ্য মেধাবী। এখানে সবচেয়ে দুর্ভোগ ও কষ্টের শিকার হবে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের শিার্থীরা। এদের দেশের ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় পড়ানোর সামর্থ বেশিরভাগ অভিভাবকেরই নেই। এসব মেধাবীর কথা মাথায় রেখে সরকারের প থেকে কার্যকর পদপে নেওয়া উচিত। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের উচ্চশিার সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি ।
যে জাতি যত বেশি শিতি, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিা ছাড়া কোন জাতি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারেনা। শিা,কোন দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা অঞ্চলের বিষয় নয়। এটি মূলতঃ সমগ্র জাতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বলতে হয় যে, উচ্চ শিা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উচ্চ শিতি ব্যক্তিরাই দেশের নীতিনিধারণ থেকে শুরু করে দেশের সব কর্মকান্ডের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীায় পাস করা প্রায় এক লাখ শিার্থী উচ্চ শিা গ্রহণের সুযোগ পাবে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে বিজ্ঞানের শিার্থীদের। এ বিভাগে ভাল ফলাফলকারী শিার্র্থীরাও তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেশি হওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। এবার এইচএসসি পাস করেছেন দুই লাখ ৭৭ হাজার শিার্থী। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে এক হাজার চার শ’ ৫০টি শিা প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে আসন রয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার পাঁচ শ’ ৯২টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ২৭টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে বাকি ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৭শ’ শিা প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও ডিগ্রি কোর্সের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি সরকারি কলেজে অনার্স ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে। এখানে এক লাখ ৩৫ হাজার শিার্থী অনার্স ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পাবে। বাকি ১৬শ’ চারটি ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৭০ হাজার শিার্থী ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫২টি। এতে প্রায় ১৫ হাজার শিার্থীকে অনার্সে ভর্তি করা হয়। আর এ বছর পাস করেছে দুই লাখ ৭৭ হাজার পাঁচ শ’ ২৩ জন শিার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হজার দুই শ’ পাঁচ জন। এবার পাসের হার বেশি হলেও ঢাকা সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে তীব্র প্রতিযোগিতা। পত্রিকার খবরে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে পাঁচ হাজার দুই শ’ ৮৯টি। সাধারণভাবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শিার্থীদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও মেডিকেল। বুয়েটে ৫টি অনুষদে ১৪টি বিভাগে মোট আসন রয়েছে মাত্র আট শ’ ৮৬টি। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন কোটা রয়েছে। দেশে বর্তমানে ১৪টি মেডিকেল কলেজে মোট দুই হাজার ৬০ জন শিার্থী ভর্তি করা হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ মোট ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে তিন হাজার সাড়ে তিন শ’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদে ২৫টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা এক হাজার দুই শ’ ৮৩টি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি বিভাগে তিন হাজার আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে ৩৪টি বিভাগে প্রায় দুই হাজার চার শ’ আসন রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিভাগে মোট এক হাজার দুই শ’ ২০টি আসন রয়েছে। শাহ্ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি বিভাগে এক হাজার দুই শ’ ৫০টি আসন রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি ডিসিপ্লিনে মোট ছয় শ’ আসন রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি বিভাগে রয়েছে মোট ছয় শ’ ৩৮টি আসন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট এক শ’ আসন । শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি অনুষদেরয়েছে মোট তিন শ’ ৭৫টি আসন । হাজী মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছয়টি অনুষদের ১৫টি বিভাগে তিন শ’ ৩০টি আসন রয়েছে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি অনুষদের সাতটি বিভাগে মোট সাড়ে তিন শ’ আসন রয়েছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ শ’ আসন রয়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি বিভাগে মোট চার শ’ ৮৫টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪টি বিভাগে চার শ’ ৩১টি আসন রয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি বিভাগে চার শ’ ৮৫টি আসন রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বিভাগে এক শ’ ৮০টি আসন রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট তিন শ’ আসন রয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন শ’ আসন রয়েছে। এছাড়া আরও নতুন দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় -সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিার্থীরা ভর্তি হওয়ার পরও অনেক মেধাবী শিার্থী ঝড়ে পড়বে। দেশের বিশিষ্ট শিাবিদরা জানান, সবাই উচ্চ শিার সুযোগ পাবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক। বিশিষ্ট শিাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, উচ্চ শিার েেত্র আসন না বাড়িয়ে এেেত্র বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, সবাইকে অনার্স কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে হবেÑ এমন কোন কথা নেই। যাদের মেধা আছে তারাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আমাদের উচিত পাসের হার না বাড়িয়ে সুশিায় শিতি করা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, যেভাবে পাসের হার বাড়ছে সেভাবে সুশিতি ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে না। ছেলে-মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাল করলেও বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে সবাই পড়তে পারবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, পাসের হারের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন বাড়ানো সম্ভব নয়।
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়কলেজ, কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকারের খোলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে একটি যুগান্তকারি পদপে বলে আমরা মনে করি। এমনিতে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসছে শিার্থীর বয়সখাদক মরণব্যাধি সেশনজট। এমন শিার্থী ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে যাদের উচচশিার শেষ সনদ পেতেই শেষ হয়ে যাবে সরকারি চাকরি পাবার বয়স। এদিকে গত ২৬ আগষ্ট দেশের সাতটি শিা বোর্ড়ের এইচ এস সি পরীার পাশাপাশি আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীার ফল প্রকাশিত হয়েছে। মাদ্রাসা থেকে পাস করা মেধাবীরাও ইঞ্জিনিয়ারিং,মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়াও এবার অন্যান্য বারের তুলনায় গ্রেডিং পদ্ধতিতে পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে জিপিএ -৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও। সাতটি বোর্ডে অনুষ্ঠিত এইচ এস সি পরীায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ১’শ ৪০ জন। এইচ এস সি পরীায় পাসের পর শিার্থীরা উচ্চ শিার জন্য ভর্তি হয়। এেেত্র যারা মেধাবী ও জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রতি। এতে তারা মেড়িকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করে থাকে। এবার এেেত্র আসন রয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৬০ টি। কিন্তু এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজারের অধিক শিার্থী। তাদের প্রায় সবার আকাঙ্কা এ দুটির প্রতি। কিন্তু সবার ভাগ্যে সে সুযোগ হবেনা। এছাড়া এবার অধিক শিার্থী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। পরীায় পাসের হার বাড়ায়, আসন সংকট দেখা দেয়। ফলে এবছর এইচ এস সি পাস করেও প্রায় ১ লাখের অধিক শিার্থী উচ্চ শিার সুযোগ পাবেনা।
দুই-তৃতীয়াংশ শিার্থীই তাদের আকাক্সা অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবেনা। এবারের ভর্তি যুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে সরকারি ১৩ টি মেডিকেলের ১ হাজার ৪৫০টি ও বুয়েটের ৮১০টি আসন নিয়ে। দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫টি। আর ৫৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা ২৩ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ কলেজে সম্মান শ্রেণীর জন্য আসন রয়েছে ৯০ হাজার ৬টি। একই সঙ্গে এর অধিভুক্ত ১ হাজার ৬৯ টি ডিগ্রি কলেজে স্নাতকের আসন রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬১টি। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেল, বি আই টি, টেক্রটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বেশ কিছু কারিগরি কলেজ মিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আসন রয়েছে। এসব আসন পূর্ণ হওয়ার পর ও লাধিক শিার্থী কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেনা। এর মধ্যে বাদ পড়বে অসংখ্য মেধাবী। এখানে সবচেয়ে দুর্ভোগ ও কষ্টের শিকার হবে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের শিার্থীরা। এদের দেশের ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় পড়ানোর সামর্থ বেশিরভাগ অভিভাবকেরই নেই। এসব মেধাবীর কথা মাথায় রেখে সরকারের প থেকে কার্যকর পদপে নেওয়া উচিত। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের উচ্চশিার সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি ।
0 comments:
Post a Comment