Friday, March 24, 2017

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একটি পরিসংখ্যান

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একটি পরিসংখ্যান
আলী ফোরকান
১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কোনো আকস্মিক ব্যাপার ছিল নাইতিহাসের সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় যুগে যুগে এ জনপদে গণমানুষের যে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটেছেতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাদের জীবন সংগ্রামেএ ভ-ভাগের সংগ্রামী মানুষ কখনো লড়েছে বহিঃশত্রæ কিংবা বাইরের কেন্দ্রীয় শক্তির বিরুদ্ধেএ অঞ্চলের মানুষের চেতনার দ্রোহ ও সংগ্রামী মানসভখন্ডে সংগঠিত করেছে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার অনেক সংগ্রামআমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সে বিশাল প্রেতি ও ঘটনা পরম্পরা ইতিহাসের পাতায় বহুবর্ণে উজ্জ্বল হয়ে আছেইতিহাস স্যা দেয়এ স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক এক অনিবার্য পরিণতিই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশআমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদূর অতীতইতিহাসের অনেক অধ্যায়কে পিছনে ফেলে, আলোচনার সূত্রপাত করতে চাইবে অপরিহার্যভাবেই১৭৫৭ থেকে ১৯৭১সময়ের সূ² মানদন্ডে তা ২০০ বছরেরও অধিককালএ সময়ে এ উপমহাদেশে রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিগন্তে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে১৭৫৭ সালের জুন মাসে পলাশী প্রান্তরে স্বাধীনতার যে সূর্য অ¯Íমিত হয়েছিল, দুশতাব্দীরও বেশি কাল ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় সেই স্বাধীনতাই আমরা পুনরুদ্ধার করেছি ১৯৭১ সালেএক সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েমাঝখানে আরো অনেক সংগ্রাম-বিদ্রোহ ইতিহাসের নানা অধ্যায়কে আপ্লুত করেছেপরাধীনতার বিরুদ্ধেএ দেশের মানুষের সে সংগ্রামের প্রথম সূত্রপাত ঘটেছিলফকির ও সন্নাসী-বিদ্রোহ দিয়ে (১৭৬০-১৮০০)তারপর একে একে সংঘটিত হয়েছে কৃষক বিদ্রোহ (১৭৯৩-১৮৩৩)সংঘটিত হয়েছে ওহাবী ও ফরায়েজী আন্দোলন (১৮৩১-১৮৫৭)সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) এবং নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-১৮৬০)স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেতি সময়ের এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ তেমন কোনো সংগঠিত আন্দোলন ছিল নাফলে অধিকাংশ েেত্রই এ সব সংগ্রাম ও বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছেএমনকি, প্রায় সর্বেেত্রই দেশীয় জমিদার শ্রেণী এ গণসংগ্রামের প্রতি কোনো সমর্থন যোগায়নি
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন : স্বাধিকারের পথে অগ্রযাত্রাবাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, ঔপনিবেশিক আমলে বঙ্গদেশেই প্রথম জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়তবে এটা একদিনে গড়ে ওঠেনিযে জমিদার শ্রেণী একসময় ইংরেজদের পাবলম্বন করে ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণবিদ্রোহে বিরোধিতা করেছেতারাই একসময় সংগঠিত হয়ে ইংরেজ বিরোধী ভমিকায় অবতীর্ণ হনএ ধারায় ১৮৩৭ সালে গঠিত হয়েছিলজমিদার সভা, ইয়ং বেঙ্গলদের নেতৃত্বে ১৮৩৪ সালে গঠিত হয় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি১৮৭৫ সালে জন্ম নেয় ইন্ডিয়ান লীগ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনবলতে গেলে এ সব সভা-সমিতি এ দেশের শিতি মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং জমিদার শ্রেণীর মাঝে ক্রমশ জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করে১৮৮৫ সালে তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড ডাফরিনের নির্দেশে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের আলেকজান্ডার হিউমের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসজাতীয় কংগ্রেসই এ দেশে প্রথম জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেবঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলন ১৯০৫ সালে বাংলাদেশ ভাগ এবং পূর্ববাংলা ও আসাম নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠিত হয়ঢাকায় এ নতুন প্রদেশের রাজধানী স্থাপিত হয়পূর্ববাংলার মুসলিম নেতা নবাব স্যার সলিমুলøাহ বঙ্গ-বিভাগকে সমর্থন করেনপূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে যখন বঙ্গবিভাগ ঘটেঠিক সেই সময় পাঞ্জাবের একটি অংশকে উত্তর-পশ্চিম এলাকার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে গঠিত হয় উত্তর-পশ্চিম প্রদেশকিন্তু পাঞ্জাব বিভক্তি নিয়ে সেখানে কোনো প্রতিবাদ বিােভ না হলেও বঙ্গ মাতাকে বিভক্ত করার জন্য বর্ণ হিন্দুদেব মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছিলবঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে ১৯০৪ সালে কলকাতায় শুরু হয় সখারাম গণেশ দেউসূরের নেতৃত্বে শিবাজী উৎসব১৯০৬ সালে কলকাতায় শিবাজী উৎসব-এর আয়োজন করেন ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়এ উৎসবের অন্যতম অনুষ্ঠান ছিল ভবানী পূজাশিবাজী উৎসব ও ভবানী পূজা উপলে লোকমান্য তিলক একদিন ত্রিশ হাজার লোক নিয়ে গঙ্গাস্নানে যানএকই সময় সংগঠিত হয় স্বদেশী আন্দোলনবঙ্গভঙ্গ মূলত শিবাজী উৎসব ও ভবানী পূজার রূপ পরিগ্রহ করেছিলফলে এ আন্দোলন ধর্মনিরপে আন্দোলনের রূপ নিতে পারেনিআর এ কারণেই বাংলার মুসলমান সমাজ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কখনো জাতীয় আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেননিবঙ্গভঙ্গ আন্দোলন এবং একই সময়ে শিবাজী উৎসবের পটভমিতে ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালাভ ঘটেএকই সময় ১৯০৬ সালে জন্মলাভ করে হিন্দু মহাসভাএ দেশের ইতিহাসে দ্বিজাতিতত্তে¡র প্রথম সূত্রপাত এভাবেই ঘটেছিলতা সত্তে¡ও বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন একদিকে যেমন হিন্দু-মুসলিম জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেতেমনিভাবে দুশ্রেণীকে আন্দোলনের যে দীা দিয়েছেতা পরবর্তীকালে স্বাধিকার ও ঔপনিবেশিক বিরোধী আন্দোলনে সহায়ক ভমিকা পালন করেছেবাংলাদেশে বঙ্গ বিভাগের বিরুদ্ধে দুহাজারেরও বেশি জনসভা হয়পান্তরে, পূর্ববঙ্গের মুসলমান সম্প্রদায় নবাব সলিমুলøাহর নেতৃত্বে কিছুটা সংগঠিত হলেও জনমত তৈরিতে তারা পিছিয়ে ছিলেনবঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকারীগণ এ সময়ে ব্যাপকভাবে স্বদেশী আন্দোলন গড়ে তুলতে সম হনতারা বিদেশি দ্রব্য বয়কট শুরু করেনএ সময়ে স্বদেশী কাপড়ের কল, ব্যাংক, স্কুল, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, সাবানের ফ্যাক্টরি এবং ²ীর ভান্ডার, ‘বেঙ্গল স্টোর, ‘ইন্ডিয়ান স্টোর নামে স্বদেশী দ্রব্যের ভান্ডার গড়ে তোলেনপূর্ববঙ্গের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পাবনা, ফরিদপুর প্রভৃতি স্থানে এ আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করেছিলবরিশালে অশ্বিনী কুমার দত্তের প্রচেষ্টায় এবং চারণকবি মুকুন্দ দাশের দেশাত্মবোধক গান মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই ইত্যাদি দেশব্যাপী স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার বয়ে আনেএ কথা সত্য যে, বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন এবং স্বদেশী আন্দোলনে পূর্ববাংলার বাঙালি মুসলমানদের রাজনৈতিকভাবে কোনোরকম লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল নাবর্ণবাদী হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত বঙ্গ বিভাগ রদ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফল হলে পূর্ববাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটেতবে এ সময়ের গঠিত মুসলিম লীগ পরবর্তীকালে পূর্ববাংলার মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব গ্রহণ করেঅন্যদিকে হিন্দু বর্ণবাদী ও শিতি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করেছিলসেটাই ধাপে ধাপে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছেরবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকালে রচিত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটি সে সময়ে যেমন স্বদেশী আন্দোলন বর্ণবাদী হিন্দুদের প্রেরণা যুগিয়েছেতেমনিভাবে পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও এটি ছিল প্রেরণার অন্যতম উৎসরাজনীতিতে ধর্ম ও সম্প্রদায় চেতনা যে বিষবাষ্পের জন্ম দেয়তা উপমহাদেশের রাজনীতিতে পরবর্তীতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিলআজকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মধ্যে অনভিপ্রেত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যে মহড়া চলে তার সূত্রপাত এ শতাব্দীর গোড়াতেই শুরু হয়েছিলবঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকালে পূর্ববাংলায় বঙ্গভঙ্গের পরে মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বর্ণহিন্দুদের দ্বেদ্বর সূত্র ধরেই ১৯০৭ সালে কুমিলøজামালপুর এবং পাবনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকালে যদি হিন্দু-মুসলিম বিরোধ রাজনৈতিক রূপলাভ না করত তাহলে হয়ত এ দেশে হিন্দু-মুসলিম মিলন ঐক্যের ইতিহাস অন্য রকম লিখিত হতো
স্বাধীনতা প্রচেষ্টা : বিপ্লবী ধারা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালেই বাংলাদেশে বিপ্লবী প্রচেষ্টা সংগঠিত হতে থাকেএক সময়ের বরোদা রাজ কলেজের অধ্য অরবিন্দ ঘোষ এবং তাঁর ভ্রাতা বঙ্গভঙ্গকালে বঙ্গদেশে এসে বিপ্লবী কর্মতৎপরতা শুরু করেনএ সব বিপ্লবী কর্মকাÐের মূল উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ থেকে বেনিয়া ইংরেজদের উচ্ছেদ করাযদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এ কাজটি ততো সহজ ছিল নাতবুও শিÿিত হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা অংশ ক্রমশ এ বিপ্লবী কর্মকান্ডে ঝুঁকে পড়তে থাকেবাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও বন্দরে গড়ে উঠতে শুরু করে অনুশীলন সমিতি১৯০৬ সালে বিপ্লবীদের মুখপত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যুগান্তর পত্রিকাপূর্ববাংলার প্রধান প্রধান শহরে এ সমিতির শাখা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে শুরু করেএভাবে একমাত্র ঢাকাতেই অনুশীলন সমিতির ৫০০ শাখার সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়ে ৩০ হাজারবাংলার এ বিপ্লববাদী প্রচেষ্টা খুব মহান হলেও এ আন্দোলনে বাংলার মুসলমানদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল নাফলে এটা কোনো সর্বজনীন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে পর্যবসিত হতে পারেনিপূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলা শহরে অনুশীলন সমিতির শাখা স্থাপিত হয়েছিলফরিদপুরের ব্রতী সমিতি, বরিশালের বান্ধব সমিতি এবং ময়মনসিংহের সুহৃদ ও সাধন সমিতি ছিল এর মধ্যে অন্যতমবাংলাদেশ বিপ্লব প্রচেষ্টা এতই প্রসার লাভ করেছিল যে, ১৯১৮ সালের সেভিশান কমিটির রিপোর্টের ১৮০ পৃষ্ঠার মধ্যে ১১০ পৃষ্ঠাই ছিল বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলন সংক্রান্তপ্রকৃতপে এ সময়ের বিপ্লব প্রচেষ্টায় বাংলার মুসলমানদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল নাকেননা তখন পর্যন্ত মুসলমানদের ইংরেজরা পৃষ্ঠপোষকতা করার নীতি অনুসরণ করেছিল
অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন: ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক রাউলাট বিল পাস করেমহাত্মা গান্ধী দÿিণ আফ্রিকা থেকে এসে ইংরেজদের এ দমননীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং রাউলাট বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেনএ সময়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে রবীন্দ্রনাথ এর প্রতিবাদে তাঁর নাইট উপাধি ত্যাগ করেনএ আইনে কোনো নাগরিককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, প্রত্যহ থানায় হাজিরা দেয়া এবং কোনো স্যা-প্রমাণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে আদালতে শা¯িÍ দেয়া যেতঅসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশে ব্যাপক প্রভাব বি¯Íার করেছিলপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ইংরেজদের বিরোধিতা করেফলে ইংরেজরা তুরস্কের অঙ্গ-বিচ্ছেদ করে এবং যুদ্ধে পরাজিত তুরস্কের প্রতি অন্যায় সন্ধি চাপানোর কথা প্রকাশ পেলে ভারতীয় মুসলমান সমাজ তুরস্কের সুলতানের স্বাধীনতা রÿার দাবি তোলেমাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলীর নেতৃত্বে মুসলমানরা এ আন্দোলনকে একটি সর্বভারতীয় আন্দোলনে পরিণত করেনমহাত্মা গান্ধী এ আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেনতিনি এটাকে‘An opportunity of uniting Hindus and Muslims as world not arise in hundred years.’ এ আন্দোলনের ফলে সাময়িকভাবে হলেও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।  স্বরাজ দল ও বেঙ্গল প্যাক্ট দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ১৯২২ সালে স্বরাজ দল গঠন করেন এবং ফরোয়ার্ড নামে দলের একটি দৈনিক মুখপত্র প্রকাশ করেন১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্ট বা হিন্দু-মুসলিম চুক্তি স্বাÿর করেনএ চুক্তির ফলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকৃতি পায়মুসলমানদের পÿে স্যার আবদুল রহিম, মৌলভী আবদুল করিম, মৌলভী মুজিবুর রহমান, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খা, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ মুসলিম নেতা স্বাÿর করেছিলেনএ চুক্তির কারণে অনেক মুসলমান শিÿিত শ্রেণী কলকাতা করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পানবঙ্গভঙ্গকালে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের যে সর্বনাশ ঘটেছিল, পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীর রাজনীতিতে আসার কারণে এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দের দূরদৃষ্টির ফলে তা অনেকটা প্রশমিত হয়গান্ধীজী দÿিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন সেখানে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছেন, তা করেছিলেন মূলত সেখানকার ভারতীয় মুসলমান ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্যগান্ধীজির অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পরবর্তীকালে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ফাটলে অনেকটা জোড়া লাগাতে সÿম হয়১৯১৬ সালের ²ৌ চুক্তি অবশ্য হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথ সুগম করেছিল
পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি : আইন অমান্য আন্দোলন ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন কমিশন গঠন করেনএ কমিটির কাজ ছিল ভারতবর্ষকে কতটুকু স্বাধীনতা দেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখাকিন্তু এ কমিটিতে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত হয়ফলে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়েই এক পর্যায়ে ডোমিনিয়ন দেয়ার কথা ঘোষণা করেকিন্তু তা সত্তে¡ও লাহোরের কংগ্রেস অধিবেশনে দাবি ওঠে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতারএ সম্মেলনেই বয়কট ও আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বা¯Íবে রূপ দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিলনেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এ সময়ে ১৯২৯ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কথা ঘোষণা করলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ হয়১৯১৬ সালের ল²ৌর চুক্তির দ্বারা অবশ্য মুসলিম লীগ এবং জাতীয় কংগ্রেস একমত হয়েছিল যে, ‘কাল বিলম্ব না করে ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে ব্রিটিশ সরকারকেঅবশ্য ইতিপূর্বেই ১৯১৫ সালে বাল গঙ্গাধর তিলক এ দেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে হোমরুল লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেনহোমরুল আন্দোলনের মূলকথাই ছিল, ভারতবর্ষ নিজেদের দ্বারা শাসিত হবেহোমরুল আন্দোলন খোদ ব্রিটিশ সরকারকে বিচলিত করেছিলমুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং আলী ভ্রাতৃদ্বয় একসময় এ আন্দোলনে যোগ দিয়ে হিন্দু-মুসলিমের মিলিত ধারায় এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন
ভারত শাসন আইন : মুসলিম স্বাতন্ত্র্যের উৎস সাইমন কমিশনের পরে ৩টি গোল টেবিল বৈঠকের পরিপ্রেেিত ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাস হয়এ আইন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচনএ নির্বাচন মুসলিম লীগকে আলাদা সরকার গঠনের সুযোগ এনে দেয় এবং ফজলুল হকের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়এভাবে স্বতন্ত্র মন্ত্রিসভা গঠনের ফলে মুসলিম মানসে ভারত ভূখন্ডে মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্র চিন্তার বিষয়টি মুখ্য হয়ে দেখা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনীতির মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধি দানা বাঁধতে থাকেএ সময়ে মি. জিন্নাহ সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন, ‘কংগ্রেস নিজেকে হিন্দুদের প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করুক এবং মুসলীম লীগকে মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিমূলক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিকজিন্নাহর এ উক্তির মাঝে যে দ্বিজাতিতত্তে¡র বীজ লুপ্ত ছিলসেটাই পরবর্তীতে বিকশিত হয়ে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক উত্থাপিত লাহোর প্র¯Íাব-এ প্রতিফলিত হয়েছিলযদিও জিন্নাহ একসময় ঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাবকে ছাত্রের স্বপ্ন বা ঝঃঁফবহঃং উৎবধস বলে আখ্যা দিয়েছিলেন
ঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাব : যেখানে স্বাধীনতার মূল নিহিত ছিল১৯৪০ সালের ২২ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের সপ্তবিংশতিতম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়এ অধিবেশনে এ কে ফজলুল হককে শের-ই-বাংলা উপাধি দেয়া হয়শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক এ অধিবেশনেই ঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাব পেশ করেনএ প্র¯Íাবে বলা হয় ‘The areas in which Muslims ar numerically in a majority as in the North-Western and Eastern zones of India should be grouped to constitute independent states in which constituent units shall be antonymous and sovereign
১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাবকে তখনকার কংগ্রেস সমর্থিত পত্রিকাগুলো পাকি¯Íান প্র¯Íাব হিসেবে আখ্যা দেয়লাহোর প্র¯Íাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে দুটি আলাদা রাষ্ট্রগঠনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল১৯৪১ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে লাহোর প্র¯Íাবকে মুসলিম লীগের ক্রিড বা ঈমান হিসেবে গ্রহণ করা হয়১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে এ প্র¯Íাবের পÿেই মুসলিম লীগ ম্যান্ডেট লাভ করেকিন্তু এ দেশের ইতিহাসে গণমানুষের অধিকারের প্রশ্নে বোধ হয় প্রথম কলঙ্ক আরোপ করা হয় ১৯৪৬ সালের দিলøীতে অনুষ্ঠিত লেজিজ লেটার্স কনফারেন্সেএখানেই লাহোর প্র¯Íাবের ‘States’ শব্দের পরিবর্তে‘State’ লিখে পূর্ববাংলার প্রাণের দাবি- একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দেয়া হয়ফলে পরবর্তীতে যে পাকি¯Íান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, সেখানে লাহোর প্র¯Íাবের সেই ভৌগোলিকভাবে পাশাপাশি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল যেমন পাওয়া গেল না, তেমনি উত্তর-পশ্চিমে ও পূর্ব ভারতে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোও পাওয়া গেল নাপাওয়া গেল দুটির স্থলে একটি জগাখিচুড়ি রাষ্ট্র পাকি¯Íানযা ছিল মূলত কতিপয় লীগ নেতা ষড়যন্ত্রের ফসলসে দিন যদি লাহোর প্র¯Íাব কার্যকর হতো, তাহলে পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ১৯৪৭ সালেই হতে পারতঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাবের মাঝে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারটিও অন্তর্ভুক্ত ছিলযে কারণে যথাযর্থভাবেই বলা হয়, ‘লাহোর প্র¯Íাবের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল
আজাদ হিন্দ ফৌজ : বিদেশে মুক্তির লড়াই  ঐতিহাসিক লাহোর প্র¯Íাবের আলোকে মুসলিম লীগ যখন স্বতন্ত্র আবাসভমির স্বপ্নে বিভোর, ঠিক সেই সময়ে বাংলার আরেক বিপ্লবী সুদ্র বসু নজরবন্দি অবস্থা থেকে পালিয়ে প্রথমে জার্মানি যান এবং সেখানে থেকে জাপান গিয়ে সেখানে বন্দি ১৪০০ ভারতীয় অফিসার এবং ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন১৯৪১ সালে জাপান প্রায় সমগ্র দÿিণ-পূর্ব এশিয়া দখল করে ভারত আক্রমণের উদ্যোগ নিলে ব্রিটেন চিন্তিত হয়ে পড়েভারতবাসীর সমর্থন ছিল তখন ব্রিটেনের জন্য জরুরিতাই ব্রিটিশমন্ত্রী স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে এসে এই বলে আশ্বাস দেন যে, যুদ্ধ শেষে ভারতকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দেয়া হবেইতিহাসে এটাই ক্রিপস মিশন নামে পরিচিতকিন্তু ভারতে এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ফলে ভারতব্যাপী শুরু হয় কুইট ইন্ডিয়া বা ভারত ছাড় আন্দোলনঅন্যদিকে সিঙ্গাপুরে গঠিত নেতাজীর আজাদ হিন্দ সরকার জাপান, ফিলিপাইন, জার্মানি, থাইল্যান্ড, বার্মা ও ইতালির স্বীকৃতি লাভ করে এবং ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয়১৯৪৪ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ চট্টগ্রাম অঞ্চল পথে ভারতে প্রবেশ করেআজাদ হিন্দ ফৌজের অপর একটি দল কর্নেল শাহনাওয়াজের নেতৃত্বে বার্মা ও আসামের নিবিড় অরণ্য ও পাহাড় অতিক্রম করে মনিপুর আক্রমণ করেকিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা ও সেন্সরের মাধ্যমে ভারতবাসীর এ স্বাধিকার সংগ্রামের বিজয় সংবাদ গোপন রাখতে সম হয়বাংলা ও ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যদি নেতাজীর এ সাফল্যের সংবাদ সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারতেন, তাহলে কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলন আরো তীব্র হতোএমন কি, একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালেই এ দেশ থেকে ইংরেজ শাসন উৎখাত করা সম্ভব হতোবলার অপো রাখে না যে, সে েেত্র পূর্ববাংলা ও আসামই হতো এ সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রবেশদ্বারএ অঞ্চল স্বাধীন হলে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়া কোনো বিলম্বের ব্যাপার ছিল নাআর এ ভাবেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ
লেখক গবেষক
মোবাইল:০১৬১১৫৭৯২৬৭
dr.fourkanali@gmail.com


0 comments:

Post a Comment