প্রসঙ্গ: ভালবাসা দিবস
আলী ফোরকান
ভালবাসা! বাংলা চারটি অরের একটি শব্দ। ভালবাসার আভিধানিক অর্থ ‘হৃদয়ের টান’ অনুরক্ত হওয়া। আর ঘনীভূত ভালবাসাকেই ‘প্রেম’ বলে। ভালবাসা কথাটি শুনলেই কেমন মায়া মায়া ভাব জন্মনেয় ‘হৃদয়’ নামক স্থানে। পিতা-মাতা,স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে,ভাই- বোন পরস্পরের পরিপুরক বলেই পাগলের মতো একে অপরকে ভালবাসে। পরিবার,প্রতিবেশী, সমাজ, দেশ-প্রত্যেকের রয়েছে প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসা-মমতা-আর দায়িত্ব। এদায়িত্ব পালনে রয়েছে আমাদের নিজস্ব ধর্ম, দর্শন-সংস্কৃতি। দেশের মানুষ ুধা-দারিদ্রতা বেকারত্ব-বঞ্চনা পেরিয়ে আকড়ে ধরে আছে তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য- সংস্কৃতি। কিন্তু আজ নষ্ট সময়ের দুষ্ট চক্রের আবির্ভাবে আমরা তাও হারাতে বসেছি। পদে পদে অপমানিত হচ্ছে বাংলা মাতৃকা। সম্প্রতি আমাদের দেশে “ভ্যালেন্টাইনস ডে” নামের এক অপসংস্কৃতির প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। মাত্র এক যুগ আগেও আমাদের দেশে এর নাম গন্ধ ছিলনা। মূলতঃ এটা আমাদের সংস্কৃতির কোন অঙ্গ নয়। তাছাড়া এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর নয় শুধু, হিন্দু-বৌদ্ধদেরও ধর্ম দর্শনের সাথে কোনো দূরতম সম্পর্ক নেই। বস্তুত এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এর অবস্থান উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। সেন্ট“ভ্যালেন্টাইন্স ডে” উৎপত্তি নিয়ে লোকমুখে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। প্রাচীন রোমবাসী কুমারীরা এ দিন ভালবাসার কাব্য লিখে মাটির পাত্রে জমা করে রাখত। সে পাত্র থেকে কোন যুবক যে মেয়ের লেখা তুলত, সে মেয়ের সাথেই তার বিয়ে হত। অনেকে আবার মনে করেন, দিনটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইস নামের দুজন খ্রিষ্টান ধর্ম যাজকের আত্মহুতির করুণ কাহিনী জড়িত আছে। কথিত আছে, রোমান সম্রাট সে সময় সৈনিক যুবকদের বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তখন “ভ্যালেন্টাইন নামীয় এক খ্রিষ্টান পাদ্রি তার বিরোধিতা করায় সম্রাট তাকে হত্যা করেন। দ্বিতীযতঃ ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে বলা হয়, তিনি রোমানদের মূর্তি পূজার তীব্র বিরোধী ছিলেন। এজন্য তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। তখন তার বন্ধুরা তাদের ভালবাসার কথা লিখে তা কারাগারে নিপে করত। অবশেষে তাকে ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর প্রেেিত ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ প্রথম জুলিয়াস দিনটিকে“ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে” বা “ভালোবাসা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকে পাশ্চাত্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে অনেকটা জাতীয় উৎসবের মতোই। তাদের অনুকরণে বর্তমানে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম জনপদেও এদিবসটির আনুষ্ঠানিকতা দেখে মনে হয়না এদেশের সংস্কৃতিতে এরা বিশ্বাসী। একথা কারো অজানা নয়, তরুন তরুণীদের পারস্পরিক প্রেম বিনিময়ের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় এদিবসটি। দিনের মূল কর্মসূচী হলো প্রেমিক-প্রেমিকার নির্জন আড্ডা,প্রেমপত্র,প্রেমকার্ড বিনিময় ইত্যাদি। অথচ সব ধর্মই বিশেষ করে “ইসলাম” নারী –পুরুষের এরুপ বিবাহপূর্ব প্রেম-ভালবাসা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যযে,সে অবৈধ প্রেম-ভালবাসা আজ নানা ভাবে সমাজকে বিষিয়ে তুলেছে। ভালবাসার বিষাক্ত ছোবলে কত ছেলে মেয়ের জীবন ধ্বংস হচ্ছে। পরিবার বিধ্বস্ত হচ্ছে,সামাজিক শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হচ্ছে তার ইয়াত্তা নেই। তাই আসুন, এব্যাপারে নিজেদের ভুল-অন্যায় শুধরে কথিত এ প্রেম “ভালবাসা” নামক পাপ কাজের ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে নিজে বাঁচি, অপরকে বাঁচাই। এছাড়া এদেশের যুব সমাজের ভাবা উচিত, ভিনদেশী সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দেয়ার মাঝে কোন কৃতিত্ব নেই। বরং তাতে নিজস্ব সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতার প্রকাশ পায়। এরুপ অপসংস্কৃতিকে বির্সজন দেয়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে উত্তম চরিত্রের সুষমা।
0 comments:
Post a Comment