Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ: জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিস্ফোরণ


পরিবেশ: জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিস্ফোরণ
আলী ফোরকান
আজকের জীবন হাজারো সমস্যায় সংকন্টকাকীর্ণ। সেটা শহুরে জীবনই হোক অথবা গ্রামীণ জীবন। প্রত্যহ হাজারো সমস্যার কুশাংকুল মাড়িয়েই চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কারুবা নুন আনতে পান্তা ফুরায় আবার কারু পান্তা আনতে নুন। প্রাণ রাখতেই হয়ে যাচ্ছে প্রাণান্ত। নিপীড়ন, শোষণ, প্রবঞ্চনা, প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে মানুষ। সে সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকার সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা আরও কত শত অদৃশ্য চাবুকে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে মানুষ। একের বিবেকহীন আচরণ বহুজনকে ফেলে দিচ্ছে দুর্দশার নরকে। এসব প্রাত্যহিক সমস্যার সঙ্গে মানুষ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। চালিয়ে যেতেও হবে কারণ মানুষকে তো বেঁচে থাকতে হবে। এ সব সমস্যা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে অবশ্যই বিপর্যস্ত করছে, ভঙ্গ করছে সুখ-শান্তি-স্বস্তি। কিন্তু এগুলো সার্বিক কোনও ভয়ংকর অবশ্যম্ভাবী সর্বনাশের ভিত গড়ছে না। তবে কি আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে? না, মোটেই না। মানুষের অতি অবশ্যম্ভাবী মহা সর্বনাশের ভিত কিন্তু সবার অলক্ষ্যে আমরা মানুষেরাই রচনা করে চলেছি আমাদের হঠকারিতা, অদূরদর্শিতা আর অনেক ক্ষেত্রে অন্ধ বিশ্বাসের দ্বারা। প্রকৃতির যে পরিবেশে আমরা মানুষেরা এবং অন্য জীবেরা বেঁচে আছি সে পরিবেশের ভারসাম্যের উপরই নির্ভর করছে আমাদের জীবন এবং মরণও। আমরা নির্বিচারে চিন্তাভাবনা শূন্যভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ইচ্ছেমতো দূষিত করে চলেছি। কী কী কাজের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ দূষিত করে ভয়ংকর সর্বনাশকে ডেকে আনছি সেগুলো সঠিকভাবে জানেন কেবল মুষ্টিমেয় শিক্ষিত লোক আর বুদ্ধিজীবীরা। কিন্তু কেবল তাদের নিয়েই তো আর সমাজ গঠিত হয়নি। সমাজের পনেরো-আনা মানুষই সে সব অপকর্ম সম্পর্কে সচেতন নন। আর যে একআনা লোক সেগুলো জানেন তাঁরাও সে সব কাজ করতে মোটেই উৎসাহী বা আন্তরিক নয়। লক্ষ লক্ষ পেট্রোল-ডিজেল চালিত যানবাহনের পরিত্যক্ত বিষে বাতাস বিষাক্ত হচ্ছে প্রত্যহ। ছোট-বড় মিলে হাজার হাজার কল-কারখানার বিষবাষ্পও বাড়াচ্ছে বাতাসে বিষের পরিমাণ। ওই সব কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থে দূষিত হচ্ছে মাটি, নদী। রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত বিশেষ গ্যাসের ধাক্কায় ফুটো হচ্ছে ওজন স্তর। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি সোজা এসে পড়ছে পৃথিবীতে। নির্বিচারে বন ধ্বংস করে কমাচ্ছি জমির উর্বরতা, কমাচ্ছি বৃষ্টিপাত, কমাচ্ছি প্রাণধারণের অমৃত অক্সিজেন। হু হু করে বাড়ছে পৃথিবীর তাপ। ফলে গলছে মরুদেশের কোটি কোটি টন বরফ। বেড়ে যাচ্ছে সাগরের পানি। এভাবে চললে খুব তাড়াতাড়ি সমুদ্র গ্রাস করবে কোটি কোটি মানুষের ঘর-বাড়ি, বাসভূমি, নগর আর দেশ। মানুষ তথা জীবের বেঁচে থাকার আসল উপাদান পানি-বাতাস-আলো আর পায়ের তলার মাটি এ সবগুলোর উপরই আমরা করে চলেছি নির্মম কুঠারাঘাত। বৈজ্ঞানিকেরা বার বার সাবধান বাণী উচ্চারণ করে চলেছেন, বাতাসে বিষ বাড়ছে, পৃথিবীর উত্তাপ বাড়ছে, আলোতে চলে আসছে মরণরশ্মি, পানি দূষিত হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নেমে যাচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বে পানীয়জলের চরম সংকট দেখা দেবে। কিন্তু এসব কথা নিয়ে কারু মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অনেকেই বলেন যে, ‘এসব হতে এখনও অনেক দেরি আছে। আমাদের জীবদ্দশায় এসব কিছু হবে না।’ এটা বড়ই স্বার্থপরের মতো ভাবনা। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে ভাবব না? আজ যে শিশুটিকে আদরে আদরে কোলে-পিঠে করে মানুষ করছি- যে শিশুটির আধো আধো বোলে মুগ্ধ-মোহিত হচ্ছি, তার জন্য ভাবব না? পৃথিবীটাকে তার বাসযোগ্য করে রেখে যাব না? তাকে কি ছেড়ে দিয়ে যাব এমন এক রুক্ষ, মরণশীল পৃথিবীতে যেখানে সে ক্ষুধার্ত হয়ে একমুঠো অন্নের জন্য হাহাকার করবে? বিষাক্ত আলো-হাওয়ার কামড়ে আক্রান্ত হবে মরণ ব্যাধিতে? এক বুক বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য খাবি খাবে? এক চুমুক পিপাসার পানি না পেয়ে তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে মরবে? হ্যাঁ আমরা তেমনি একটা পৃথিবী রচনা করে চলেছি আমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য। এটা রোধ করার জন্য সর্বপ্রথম চাই ব্যাপক সচেতনতা। তারপরই চাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ। হু হু করে ঘটে চলেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিস্ফোরণ। বাড়ছে সব কিছুর চাহিদা। খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু খাদ্য উৎপাদনের জমি বাড়ছে না। বাসস্থানের চাহিদা বাড়ছে ফলে গ্রাস করা হচ্ছে ফসলের মাঠ আর বনভূমি। ধ্বংস হচ্ছে বন। দ্রব্য সামগ্রীর চাহিদা মেটাতে বাড়ছে কলকারখানা-বাড়ছে যানবাহন। সব কিছুর সঙ্গেই বাড়ছে সর্বনাশের মাত্রা। সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন কঠোরভাবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনেকেই বুঝতে পেরেছে। কেউ-কেউ আবার এর বিরোধিতাও করেন। তবে ইদানীং মানুষজন এটা অনুভব করতে শুরু করেছেন যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। সুতরাং সরকারের উচিত কাল-বিলম্ব না করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কড়া আইন প্রণয়ন করা। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণ করে যদি মানুষকে সঠিকভাবে সচেতন করে তোলা যায় তবেই হয়ত আমরা নবজাতকদের জন্য আগামী পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য করে রেখে যেতে পারব। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা আমাদের অভিশাপ দিবে। 

0 comments:

Post a Comment