Wednesday, July 20, 2016

মাদকের ভয়াল ছোবল

মাদকের ভয়াল ছোবল
আলী ফোরকান
প্রায়ই পত্রিকার খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে মাদক কিংবা নানাধরনের মাদকদ্রব্যের খবর। পুলিশের হাতে জব্দ হচ্ছে ইয়াবা জাতীয় নানা ট্যাবলেট। মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়ছে সমাজের নানা-শ্রেণী পেশার মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ একই চিত্র লক্ষণীয়। ধূমপানের মাধ্যমে মূলত নেশার রাজ্যে পা বাড়ায় সবাই। এটা এখন সর্বজন এবং স¡ীকৃত বিষয়। একজন ছাত্র যখন বন্ধুদের আড্ডার আসরে কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে সিগারেট মুখে দিয়ে যে বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রহণ করে তা মূলত পুরো জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে। নেশার জগতে পা বাড়ায় হাজারো মেধাবী। তারা এ সমাজের কারও না কারও আত্মীয়। আর শেষ পরিণাম সবারই জানা। তারপরও এর বিক্রি সেবন থেমে নেই। সিগারেটের প্যাকেটে নানা সতর্কবাণী থাকলেও শিক্ষিত, অশিক্ষিত সেটা দেখার বিষয় নয়। একটুও যেন ভাবনা নেই আমি যা খাচ্ছি তা কতটুকু নিজের জন্য কল্যাণকর। সবকিছু জেনেও যখন বিষপান করব তখন কে কী করবে? না এমনটি ভাবার সু¡েযাগ নেই। নিজেকেও আজ ধ্বংস করার কোন  না কোন অধিকার কারও নেই। আর এসব মাদক সেবন নিজের জীবনকে ধ্বংস করে তদ্রুপ আশপাশের অগ্রহণকারীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সিগারেটে হাতেখড়ি হলে পরে নিষিদ্ধ সব মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। রাজধানীসহ সব শহরেই আজ মাদক সহজলভ্য। পাশ¡বর্তী দেশগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই আসছে নানা ধরনের নেশা জাতীয় বস্তু। কিন্তু যখন একজন তরুণ সিগারেটে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তখন কী তাকে ফেরানোর সুযোগ থাকে না? তার অভিভাবক মহল কী জানে না তার ছেলে ধূমপায়ী হতে চলেছে? পরিবারের কোন না কোন সদস্যই কী জানতে পারে না তার আচরণে পরিবর্তন ঘটছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে সবার অগোচরেই নেশার অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। আর যখন সবার টনক নড়ে তখন আর সময় থাকে না। তখন কোন পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি ছাড়া উপায় থাকে না। সমপ্রতি খবরে কাগজে জানা গেছে, সিসা সিগারেট নামক একধরনের মাদক খুব জনপ্রিয় তরুণদের কাছে। খোদ রাজধানীতেই এর প্রচলন ব্যাপক। আতংকের বিষয় কলেজ-বিশ¡বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আজ ভয়ানক সিসা তথা আধুনিক ফ্লেভার্ড হুক্কায় আসক্ত। মেয়েরাও আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। কয়লা পুড়ে কার্বন মনোঅক্সাইড হয় যা মানুষের শ¡াস-প্রশ¡াসের চরম ক্ষতিকারক। মৃত্যুও ঘটাতে পারে। সিগারেটে যেখানে ১-৩ শতাংশ নিকোটিন থাকে, সেখানে সিসাতে ব্যবহৃত তামাকে ২-৪ শতাংশ নিকোটিন থাকে। বিদেশি এক বিশেষজ্ঞের মতে, মাত্র একবার পূর্ণভাবে সিসা গ্রহণ করা ৬০টি সিগারেট টানা সমান। গাঁজা, মদ জাতীয় বিভিন্ন দ্রব্যসহ সিডিল, সিডাক্সিন, প্যাথেড্রিন নামক বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সিরিঞ্জের মাধ্যমে উত্তেজক হিসেবে ব্যবহার করে। এসব অনুমোদনহীন দ্রব্য আজ হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। কোমলমতি কিশোর তরুণরা সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে মাদকের দিকে। পাবলিক প্লেসে প্রকাশ্যে ধূমপান অপরাধ হলেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশের সামনেই অহরহ ধূমপান করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যই যখন প্রকাশ্যে ধূমপান করে তখন আমজনতারা কী-ইবা করবে? শিয়ালের কাছে মুরগি পালার গলের মতো অবস্থা। তরুণ সমাজ তথা দেশের আগামী নেতৃত্বকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে সরকারেরও কোনো মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে। দায়সারাভাবে কোনো আইন পাস করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নও সরকারের দায়িত্ব। প্রথমে স্কুল থেকে শুরু করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে  কলেজ-বিশ¡বিদ্যালয়ে কার্যকর করা হোক। শিক্ষার্থীর সামনে যখন একজন শিক্ষক প্রকাশ্যে ধূমপান করেন তখন সত্যিই অবাক হই এইভেবে, যারা জাতিকে পথ দেখাবেথ তারাই নিজেকে ধ্বংস করে যাচ্ছেন। নিজের অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে ভয়াবহ ব্যাধি তা হয়তো অনেকেই খবর রাখে না। টাকা দিয়ে এই ধোঁয়া না খেয়ে পুষ্টিকর, স¡াস্থ্যকর খাবারের পরামর্শ বোধহয় আজ চিকিতসকরাও দিতে লজ্জাবোধ করেন। আর সরষের ভেতর ভূত থাকলে তা কে তাড়াবে এমন গল্প প্রয়োগ করা চিকিতসকদের ক্ষেত্রে। সরকারি বেসরকারি অনেক চিকিতসা প্রতিষ্ঠানের ডাক্তাররা রোগীর সামনেই সিগারেট ফুঁকছেন। তারাই যদি আবার রোগীদের ধূমপান না করার জন্য বারণ করেন তখন নিশ্চয়ই এটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। দেশের অনেক সংগঠনই ধূমপানবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা পেশার লোক। এই আন্দোলনকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পারলেও ধূমপান তথা মাদক থেকে অনেকটা সচেতন করা যাবে। যেহেতু ধূমপানের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ মাদকের রাজ্যে প্রবেশ করে তাই ধূমপানকেই নিরুতসাহিত করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিডিয়াকে অগ্র ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই প্রতিজ্ঞা করুক কখনোই ধূমপান গ্রহণ করবে না। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা শিক্ষার্র্থীদের শপথ পাঠ করাক কেউ-ই কখনও ধূমপান গ্রহণ করব না। আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে এখনই নিজে সচেতন হই। অন্যকেও সচেতন করার চেষ্টা করি। তাহলেই দেশ মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে পারে।

0 comments:

Post a Comment