Tuesday, July 5, 2016

বাটুল পাগলা

বাটুল পাগলা
সাঁতার না জানা একটি লোক স্রোতের উজানে সাঁতরে আসছে। দৃশ্যটি অনেকের কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য আবার কারো কাছে বেশ উপভোগ্য মনে হয়। সাগরের থৈ-থৈ পানির মধ্যে দূরে একটি অস্পষ্ট ছবির মতো একজন মানুষকে দেখা যায়। তার সঙ্গে কিছু একটা ভাসছে। রোদের ঝলকে তা চিক-চিক করে চোখে এসে বাড়ি খায়। এই দৃশ্য দেখে একজন আর একজনকে ইশারা করে। দেখতে-দেখতে দৃশ্যটি রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দেয়। দেখে হাত তালি দিচ্ছে কেউ, কেউ বাহবা দিচ্ছে। অনেকে সাহস যোগাচ্ছে। চেঁচিয়ে বলছে, সাবাস বাটুল-সাবাস।
বাটুল যে জায়গা দিয়ে সাঁতার কাটছে-জায়গাটা রাক্ষুসী সাগরের প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে বিশাল গর্ত হয়ে গেছে। সেখানে স্রোতের ঘূর্ণি তীব্র। স্রোতের টান চক্রাকারে আরো প্রবল বেগে ঘুরছে। অস্পষ্ট মানুষটি কাছে এলে দেখা গেল, সে আর কেউ নয়, ধলঘাটা বাজারের বাটুল। তার হাতে একটি বড় এ্যালমোনিয়ামের পাতিল। সেটা সে উপুড় করে ধরে পা দাপাচ্ছে। বাটুলের পা দাপানিতে কাজ তেমন হচ্ছে না। যতটুকু কিনারের দিকে আসছে সেটা স্রোতের টানে। পাড়ে ওঠার পর সবাই বাটুলকে ঘিরে মজা শুরু করে। অনেকে চোখ কপালে তুলে বলে-বাটুল এই স্রোতে সাঁতরাইয়া আসলি কেমনে? হাসতে-হাসতে অনেকে বলে, পাগলের জান বড় শক্ত। প্রশ্নটা বাটুলের ও। স্রোতের ঘূর্ণির দিকে তাকিয়ে বাটুল শিউরে ওঠে। এই স্রোত ঠেলে সে এলো কিভাবে? বাটুল’র ভাবনা ছিল অণুর কণা মাত্র সময়। লোকজনের তামাশা তাকে মুহূর্তে অন্যরকম করে দেয়।
বাটুল এসেছে ত্রাণ নিতে। সে খবর পেয়েছে সরইতলার চরে ত্রাণের নৌকা এসেছে। সেখানে বানভাসি মানুষদের ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে দু’দিন না খাওয়া বাটুল। খবর এনে দেয় তার স্ত্রী শেফালী। শেফালী জাহাবাজ ধরনের মহিলা। তার ঝগড়ার অত্যাচারে পাড়া-প্রতিবেশীরা পর্যন্ত সন্ত্রস্ত। গায়ে-গতরে টান-টান ভাব চলাফেরায়ও ড্যামকেয়ার। বাটুলের সঙ্গে তাকে একদম মানায় না। বাটুলের পক্ষে এ বউ সামাল দেয়া কঠিন। শুধু কঠিন নয়-রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার। বাটুল বন্যার পানিতে বড়শি ফেলবে, তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শেফালি কোত্থেকে উড়ে এসে ঘাড় ধরে সোজা করে দাঁড় করায়। বইসা-বইসা মাছি মারো। যাও- সরইতলার চরের মাছ ঘরে তেরান দিতাছে। পাতিল নিয়া শিগ্রীর যাও। যাও কইতাছি। শেফালি বলতে-বলতে একটি এ্যালমোনিয়ামের বড় পাতিল হাতে ধরিয়ে দেয়। পানির ঘূর্ণির দিকে তাকিয়ে বাটুল’র বুক কেঁপে ওঠে। সে সাঁতার জানে না। সাগরের এই ভয়াবহ স্রোত ঠেলে সে কিভাবে সরইতলার চরের মাছ ঘরে যাবে? যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেই বাঁধ থেকে সরইতলার চরের মাছ ঘর কম করে হলেও এক মাইল। -কেমনে যামু? আমি যে সাঁতার জানি না। বাটুল তার সমস্যার কথা বলা মাত্র শেফালি ভয়ংকর মূর্তি ধারণ করে বাটুল’র দিকে তেড়ে আসে। বলে, জুয়ান মর্দা, খাওয়ার সময় কাড়ি-কাড়ি খায়, এখন বলে সাঁতার জানে না। তোরে হসাতার শিখাইতাছি। শেফালি তেড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাটুলকে ফেলে দেয় পানিতে। হাবু-ডুবু খেতে-খেতে বাটুল খেয়াল করে এ্যালমোনিয়ামের পাতিলটা উপুড় হয়ে ভাসছে। সে বুদ্ধি করে পাতিল ধরে ভাসতে থাকে। ভাসতে-ভাসতে অবশেষে সরইতলার চরের পাড়ে এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু ততক্ষণে ত্রাণ দেয়া শেষ। ত্রাণকর্মীরা তখন মেম্বারের বাড়ির বাইরের ঘরের বারান্দায় বসে রেস্ট নিচ্ছে। অনেক ধক্কল গেছে তাদের উপর। চড়া রোদে অসংখ্য মানুষকে সামলানো ভীষণ কঠিন কাজ। ভাগ্যিস সঙ্গে দু’জন যৌথ বাহিনীর সদস্য ছিল। খাকি পোশাকের ভয়ে পাবলিক বেশি হৈ-চৈ করতে পারেনি। এইসময় ভেজা কাপড়ে হাসি মুখে বাটুল এসে উপস্থিত হয়। তাকে দেখে মেম্বারে বড় ছেলে রসিকতা করে বলে, কিরে বাটুল পাগলা, খবর কি? বাটুল হাসে। মাথায় তেলহীন একরাশ ঝাঁকড়া চুল। শরীরের বাকী অংশ বড় বেমানান। সৌন্দর্যহীন। মুখে অসংখ্য দাগ। বেটে-খাটো মানুষ। গ্রামে এমন মানুষকে সবাই বাটুল বলে ডাকে। উচ্চতায় চার ফুটের বেশি হবে না। এই জন্যে বোধহয় নাম হয়েছে বাটুল। কথা বলে থড়-বড় করে। খেয়াল না করলে বোঝা যায় না। কিন্তু শুনতে মজা লাগে। মেম্বারের ছেলের প্রশ্নে বাটুল শব্দ করে হাসে। বলে, তেরান দিবা না? তেরান নিতে আইছি। করিম বলে, ত্রাণ দেয়া শেষ। তুই আগে আসলি না ক্যা? বাটুল’র তবু মন খারাপ হয় না। মুখে ঝুলে থাকা অমলিন হাসি। যেন এই মানুষটির কোন কষ্ট নেই। অবারিত সুখের মধ্যে ডুবে আছে। বাটুল একটুপর আবার বলে, তেরান দিবা না? বউ পাঠাইছে। তেরান না নিয়া গেলে আমারে কাইটা দুই টুকরা কইরা সাগরে ভাসায়া দিব। পাশ থেকে ত্রাণকর্মীদের একজন জিজ্ঞেস করে, তুমি বউকে ভয় পাও? বাটুল’র হাসি থামেনি। হেসে বলে, খুব ভয় পাই। -কেন? -মারে। -মারে! কেন মারে?-খাইতে দিতে পারি না। তাই মারে। বাটুল’র এমন কথায় নীরবতা নামে কিছুক্ষণ। খেতে দিতে পারে না, এই কারণে স্ত্রী তাকে মারে। এমন লজ্জার কথা অকপটে কেউ জনসম্মুখে বলবে? ত্রাণ কর্মীদের একজন বলে, তুমি মারতে পারো না? -আমি ওর সাথে পারি না। ওর গায়ে মইষের মতো জোর। করিম বলে, তুই মোটা লাঠি নিয়ে বউকে মারতে যাবি, পারবি না? বাটুল’র সরল স্বীকারোক্তি। বলে, আমি খাটো। বউ লম্বা। আমি ওরে হাতে পাই না। ও আমার কল্লাটা ধইরা শূন্যে তুইলা মাটিতে ধপাস কইরা আছাড় মারে। একবার কোমরে খুব দুঃখু পাইছিলাম। বউ আবার রাইতে তেল গরম কইরা মালিশ কইরা দিছে। খুব আরাম পাইছিলাম। -খুব আরাম পাইছিলি? পাবো না? বউ আদর করলে আরাম লাগে না? এ কথায় উপস্থিত লোকজন হো-হো করে হেসে ওঠে। এবং সে হাসি অনেকক্ষণ ধরে চলে। তা’হলেতো তোমার বউ তোমাকে খুব ভালবাসে? বাটুল বলে, ভালবাসা কি? খাইবার দিতে পারি না, মন চাইলে রাগ করে চলে যায়। কয়দিন আগে একবারে চলেগেছিল। কি মন করে আবার ফিরে আসছে। -ভালবাসার টানে ফিরে এসেছে। ত্রাণকর্মীদের একজন হেসে বলে। বাটুল হাসে। হ ঠিকই বলছেন, আমারে খুব ভালবাসে। মাঝে-মাঝে মাথায় ছিট ওঠে। তখন হাতের সামনে যা পায় তাই দিয়া মাইর শুরু করে। -তোমার বউ কি পাগল? -না। -তবে যে বললে তার মাথায় ছিট ওঠে? -খাবার দিতে পারি না-খিদায় মাথা গরম অয়। তখন হাতের সামনে যা পায় তাই দিয়ে মাইর শুরু করে। বাটুল বলতে-বলতে অদ্ভূত ভাবে হাসে। তার হাসির সঙ্গে ত্রাণকর্মীদের হাসি যোগ হয়ে শোরগোলের মতো হৈ-চৈ পড়ে যায়। এই ফাঁকে বাটুল কোথাও যেন হাওয়া হয়ে যায়। করিম বলে, ও একটা অদ্ভুত চরিত্র। ওর বৈশিষ্ট্য হলো, ও যাকে সমর্থন করে, নির্ঘাত সে প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং তার নির্বাচনী প্রচারণাও অভিনব। সে একটি প্লাকার্ডে তার সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী পোষ্টার লাগিয়ে একা-একা হেঁটে চলে। একটু পর-পর সে ওই প্রার্থীর মার্কা বলতে থাকে। যেমন ধরা যাক, প্রার্থীর মার্কা টেলিভিশন। সে পোষ্টার নিয়ে একটু পর-পর ‘টেলিভিশন’ ‘টেলিভিশন’ বলতে বলতে সারা এলাকা ঘোরে। কথিত আছে, বাটুল যে প্রার্থীর প্রচারণায় নামে সে প্রার্থী নির্ঘাত জয়লাভ করে। তাই বলে যে কারো পক্ষে সে প্রচারণায় নামে না। তার যাকে পছন্দ কেবল তারই পক্ষে সে প্রচারণায় নামে। এটা তাকে বলে-কয়ে করানো যায় না। এটা বাটুল’র নিজস্ব ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। এবার সে মেম্বারের ছোট ছেলে বকুলের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছিল। বকুলের মার্কা ছিল আনারস। সে আনারস মার্কার একটি পোষ্টার বাঁশে লাগিয়ে মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের সারা গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছে। আর বলেছে, ‘আনারস’, ‘আনারস’। তার এই কর্ম দেখে অনেকে হাসে। বিষয়টি জনগণের মধ্যে যথেষ্ট হাস্যরসের খোরাক যোগায়। লোকজন মজা করে বলে, পাগলে কি না করে, ছাগলে কি না খায়। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা গেল বকুল বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। বকুল বয়সে অনেক তরুাণ। তার নির্বাচনে জয়লাভ করার ব্যাপারটা অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। অনেকে মুখের উপরও বলে দিয়েছে, বকুল পাস করলে কলাগাছও বাদ থাকবে না। অথচ ভোট গণনার পর দেখা গেল বকুলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামানত হারিয়েছে। এটা কি বাটুল ’র প্রতি সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত? এ নিয়ে নানাজন নানা মত ব্যক্ত করে। কেউ বলে, বাটুল পাগল না। ওর সঙ্গে সৃষ্টি কর্তার বিশেষ সম্পর্ক আছে। প্রতিবাদী দল বলে, তা’হলে ওর কপালে এত দুঃখ কেন? তিনবেলা পেটে ভাত জোটে না কেন? মেম্বারবাড়ির বাইরের ঘরে বসে সবাই যখন বাটুল’র বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, এ সময় বাটুল এক প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে হাসি মুখে আকস্মিক এসে হাজির। ত্রাণ পেয়ে বাটুল’র হাসিও বদলে গেছে। মুখে ঝুলে আছে অনাবিল হাসি। করিম জিজ্ঞেস করে, ত্রাণ কই পালি?  বাটুল হেসে বলে, মেম্বার দিছে। মেম্বার আমাকে খুব ভালবাসে। আমি তার জন্যে ভোটে কাম করছি। -কি কাম করছিস? -ক্যাভাস করছি। বলছি, ‘আনারস’, ‘আনারস’। -তুই যে একলা-একলা আনারস-আনারস করে সারা এলাকা ঘুরলি, তোর ভয় করলো না? -ভয় কিসের? মহুরিঘোনার একজন আমাকে কয়, আর এই এলাকায় আসতে পারবি না। আমারে ভয় দেহায়। ব্যাটা খুব উঁচালম্বা। আমি কায়দা কইরা ওর পোতায় দিলাম লাথ্বি। লাথ্বি খায়া পানির মধ্যে হুড়মুড় কইরা পইড়া গেল। -তারে লাথ্বি দিলি কেন? -সে যে আমারে লাথ্বি দিয়া পানিতে ফালায় দিছিল। মজা করার অর্থে করিম আবার জিজ্ঞেস করে, তুই এই চাল কই পালি? চুরি কইরা আনছিস? এই , ওকে বান। বাটুল পাগলা ত্রাণ চুরি করছে। বাটুল প্রবলভাবে মাথা নাড়ে, চুরি করবো ক্যা? আমার কিসের অভাব? -অভাব নাই? তাহলে বউ তোকে মারে ক্যা? -খাওয়া না থাকলে মারে। -এই যে বললি তোর অভাব নাই? -এখন নাই। এখন তেরান পাইছি। -সকালে কি খাইছিস? করিম মজা করতে গিয়ে ওর পেটে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করে। বাটুল হেসে বলে, এক মগ পানি। করিম অবাক হয়ে বলে, শুধু পানি খেয়ে এতক্ষণ আছিস! বাটুল বলে, পানি খেয়ে আমি চার-পাঁচ দিন থাকতে পারি। বাটুল বলছে আর হাসছে। কিন্তু তার কথা শুনে অনেকের হাসি মিলিয়ে গেছে। কি নির্মম কথা। শুধু পানি খেয়ে চার-পাঁচ দিন থাকা কি চাট্টিখানি কথা? অথচ ঘটনাটা বাটুল’র জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গি। ত্রাণ কর্মীরা বিস্ময়ে বাটুল’র দিকে তাকিয়ে থাকে। ত্রাণ কর্মীদের মধ্যে একজন লেখক ছিলেন। করিম বলেন, দেখেন ভাই, দেশের মানুষের অবস্থা দেখেন। শুধু পানি খেয়ে চার-পাঁচ দিন কাটিয়ে দেয়। শহরে বসে এই ধরনের গল্প কোথায় পাবেন? এদের নিয়ে লেখেন। এরাই প্রকৃত গল্পের বিষয়। লেখক যিনি ছিলেন, ততক্ষণে তিনি হতবাক হয়ে বাটুল’র দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মুখের কথা থেমে গেছে। তিনি নির্বাক তাকিয়ে আছেন বাটুল’র দিকে। করিম লেখককে দেখিয়ে বাটুলকে বলে, ওনার সাথে কথা বল্, উনি খুব নামকরা লেখক। তোকে নিয়ে পেপারে গল্প লেখবে। বাটুল হাসে। পেপারে লেখে কি অইবো? বাটুল তারপর লেখকের কাছে এসে দাঁড়ায়। বলে, আমারে নিয়া না লেইখা সাগরের ভাঙ্গন নিয়া লেখেন। সরকারকে বলেন, আমরা তেরান চাই না, আমরা কাম চাই। লেখক এবার সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেন। বাটুল বলে, আমাগো বাড়ি-ঘর ভাইঙ্গা সাগরের মধ্যে ঢুকে গেছে। সরকার কি করে? সরকার এসব দেখে না? করিম বলে, সরকার কি করবে? সরকারতো ঠিকই টাকা দিছে। তোদের নেতারা সেই টাকা মেরে খাইছে। করিম আবার জিজ্ঞেস করে, ভোট দিছিস কারে? ধানের শীষ না নৌকা? বাটুল এবার কিছুক্ষণ নীরব থাকে। তারপর আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আপনারা বা কোন্ পার্টি, আমি কোনটা বলে আবার বিপদে পড়মু? এবার হাসির রোল পড়লো উচ্চস্বরে। ত্রাণ কর্মীদের সঙ্গে দু’জন যৌথ বাহিনীর সদস্য। তাদের একজনের নাম আবেদ। বুকে তার নাম লেখা আছে। আবেদ এবার হেসে বলে, সিয়ান পাগল। করিম আবার বলে, নিশ্চয়ই অযোগ্য লোককে ভোট দিছিস। তারাই টাকা-পয়সা লুটপাট করছে। এইজন্যে সাগরে বাঁধ ভাঙ্গছে। আর অযোগ্য লোককে ভোট দিবি? বাটুল সঙ্গে-সঙ্গে জবাব দেয়, কোনদিন না। বাটুল বলে অযোগ্যরা সব সন্ত্রাসী। তারপর সে সাগর মাঝ বরাবর হাত তুলে দেখায়, ওইখানে আমাদের বাড়ি ছিল। ভাঙ্গতে-ভাঙ্গতে সাগরের মাঝখানে চলেগেছে। বাটুল’র হিসেব মতে সাগর প্রায় দুই-তিন’কিলোমিটার ভেঙ্গে পশ্চিমে চলে এসেছে। বাটুল এবার ক্ষোভের সঙ্গে বলে, হালারা বর্ষা আইলে বোল্ডার ফালায়। ফালায় একটা খাতায় লেখে একশোটা। বাটুল লেখকের কাছে আসে। বলে, আমি একটা মানুষ-চামচিকা একটা পাখি। আমারে নিয়া লেখে লাভ নাই। দেশের বড়-বড় অযোগ্যদের নিয়া লেখেন। দেখবেন, সাগর আর ভাঙ্গবে না। আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে না। যেতে-যেতে বাটুল আবার ফিরে আসে। লেখকের কাছে এসে নিচু স্বরে বলে, ছেলেমেয়ের সামনে বউ মারলে খুব খারাপ লাগে। বুক ফাইটা কান্দন আসে। দুঃখে মইরা যাইতে ইচ্ছা করে। বাটুল’রচোখ টল-মল করে। লেখকের চোখ আগেই ভিজে গেছে। সে মুখ ঘুরিয়ে চোখ মোছে। বাটুল’র গল্পটি মাথায় ভোঁ-ভোঁ করে ঘুরছে। ভাবছে, বাটুল’র কাহিনী লিখতে হবে। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে বাটুল’র কষ্টের কাহিনী?

0 comments:

Post a Comment