পরিবেশ: চাই পলিথিনমুক্ত দেশ
আলী ফোরকান
ব্যক্তি, সমাজ, কি রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা অনেকেই অনেক কথাই ভুলে যাই, বিস্মৃত হই। যেমনটি ঘটেছে পলিথিন শপিং ব্যাগের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আমরা ভুলে বসে আছি যে, পলিথিন বিশেষ করে পলিথিন শপিং ব্যাগের অবাধ ও ব্যাপক ব্যবহার পরিবেশের জন্য কতটা মারাত্মক হুমকি তা সাব্যস্ত এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো অবাধে ব্যবহারের কথা। আমরা জানি পলিথিন অপচনশীল। হাজার বছরেও থেকে যায় অক্ষত। এটি মাটিতে কিংবা পানিতে যেখানেই ফেলানো যাক তা সব সময়ই থেকে যায়। মাটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত বায়ুম-লে আদান-প্রদান চলছে। এ প্রক্রিয়ায় মাটি তার স্বাভাবিক উর্বরতা বজায় রাখে। পলিব্যাগ এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি বাধা দেয়। পলিব্যাগ অপসারণ না করলে অনন্তকাল ধরে এই নির্দিষ্ট স্থানটি পরিবেশের স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। উল্লেখ্য, সরকারি ও বেসরকারিভাবে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও পূর্বে তা এতটুকুও কার্যকর করা যায়নি। একবার ১৯৯৪ সালের ১৮ জানুয়ারি পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। উক্ত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল যে, স্থানীয় বাজারমুখি পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনের নতুন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না এবং বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ১৯৯৪-এর জানুয়ারির মধ্যে দেশের সব পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। ২০০১ সালের ১৮ অক্টোবর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও তার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে এর বিকল্প প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যাগ উদ্ভাবনের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গঠন করা হয় একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স। বলা হয় যে, ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম পর্যায়ে রাজধানীতে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যে রাজধানী ছাড়া সমগ্র দেশেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সরকারি এ সিদ্ধান্তকে তখন সাধারণ জনগণ স্বাগত জানায়। কিন্তু আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার আদৌ বন্ধ করা যায়নি। দোকান ও হাটবাজারে এর ব্যবহার হচ্ছে প্রকাশ্যে। এসব ব্যাগ এখনো পাইকারি দোকানে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। বেচাকেনা ও ব্যবহারে যেন কোনো বাধা নেই, অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এবং দেদারসে এটা এখনো চালু রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায় যে, অগণিত কারখানায় পুরোদমে তৈরি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এগুলোর রয়েছে নানা সাইজ।
পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সচেতন হওয়া আজ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে এবং এর সর্বনাশা ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা আমাদের অবশ্যই করতে হবে। আমরা সবাই জানি ধূমপানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটেও লেখা থাকে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’-তবুও ধূমপান বন্ধ হচ্ছে না। আমরা ধূমপান করেই যাচ্ছি। পলিথিনের ক্ষেত্রেও যদি এমন হয়, তাহলে যতই আইন করা হোক আমরা পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আদৌ মুক্তি পাব না। তাই পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহারকে শুধু নিষিদ্ধ করে নয়, একে চিরতরে অপসারণের জন্য পলিথিনের ক্ষতিকর দিকে তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে অধিক সচেতন করে তুলতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকার তথা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠনকেও পলিথিনবিরোধী প্রচারণার ক্ষেত্রে সোচ্চার হতে হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার না করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের ইচ্ছা শক্তিকে জাগ্রত করতে হবে। বর্তমান দিন বদলের সরকার পরিবেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বার্থে বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্ব দেবেন বলেই আমরা আশা করি।
0 comments:
Post a Comment