Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ: দূষণমুক্ত করার সহজ উপায়


পরিবেশ: দূষণমুক্ত করার সহজ উপায়
আলী ফোরকান
পরিবেশ দূষণ বাংলাদেশে আজ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পানি, বাতাস, মাটি ও শব্দ দূষণে ভারাক্রান্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর-বন্দর। দীর্ঘকাল আগেই মহানগরী ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক সংস্থার জরিপ মতে, ঢাকার বাতাসে সীসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে হাজার গুণ। রাজধানী শহর আজ যেন একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। তাই ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষ প্রতিনিয়ত শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের জীবন ধারণের জন্য পরিচ্ছন্ন বাতাস অপরিহার্য। বাতাস মধ্যস্থিত উপযুক্ত পরিমাণ অক্সিজেন ছাড়া প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যায়। বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সীসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার ও ফটো-কেমিক্যাল অক্সিডেন্টসমূহ জীবজগতের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর। যানবাহন ও কলকারখানার কালোধোঁয়া, জ্বালানীর দহন, বনভূমি উজার প্রভৃতি কারণে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ত্রুটিপূর্ণ বাস, বেবিটেক্সী, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং বিক্ষিপ্তভাবে স্থাপিত কলকারখানা থেকে অবিরাম পরিবেশ বিনষ্টকারী কালো ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। যানবাহন ও কলকারখানার অনিয়ন্ত্রিত কালোধোঁয়া বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন-মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের বিস্তার ঘটায়। এসব উৎস থেকে সৃষ্ট মিথেন, ইথেলিন বাতাসে মিশ্রিত হয়ে প্রাণী দেহের ভীষণ ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। চামড়া শিল্প , রং কারখানা, রাসায়নিক গবেষণাগার, পয়ঃশোধনাগার থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইড জীবজগতের অস্তিত্বের ওপর হুমকিস্বরূপ। বনজঙ্গল এবং কঠিন বর্জ্য আবর্জনা পোড়ানোর ফলে বাতাসে মিশে যাওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র , প্লাষ্টিক ও বিস্ফোরকদ্রব্য প্রস্তুত কারখানা থেকে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বের হয় যা পানিতে মিশ্রিত হয়ে বিষাক্ত নাইট্রিক এসিডে পরিণত হয়। এছাড়া ধাতু গলানো কারখানা, কয়লা-পেট্রোল-কেরোসিনের মতো জ্বালানীর সাথে মিশ্রিত সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে সালফার-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে যা এসিড বৃষ্টির কারণ হতে পারে। এ বৃষ্টি পরিবেশ দূষণসহ মাটির বিশেষ ক্ষতি করে প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। সুপার ফসফেট কারখানা থেকে নির্গত হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রাণী দেহের হাড়ের ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টসমূহ বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বৃষ্টিপাতে বিঘœ ঘটায় এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে উদ্ভিদ জগতের বিকাশে বাধা দেয়। এসবেস্টস আঁশ, ধূলাবালি, সিগারেটের ধোঁয়া ও কীটনাশক কণা প্রতিনিয়ত বাতাসকে দূষিত করে মানবদেহে ক্যান্সারসহ এলার্জিজনিত নানা জটিল রোগের সংক্রমণ ঘটায়।রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছোটবড় অটোমোবাইল, প্রে পেইন্টিং এবং ওয়েল্ডিং কারখানা গড়ে উঠেছে। অনেক সময় নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে আবাসিক এলাকায় এসব কারখানা স্থাপিত হওয়ায় ব্যাপকভাবে বায়ুদূষণ ঘটায় এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ওয়েল্ডিংয়ের বিচ্ছুরিত অতিবেগুনী রশ্মি চোখ ও ত্বকের জন্য মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শহরের কাছাকাছি স্থাপিত ইটের ভাটার কালোধোঁয়া লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস করে। শহরের অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য অপসারণও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত। কঠিন তরল বর্জ্যের পচন বাতাসে নানারূপ গ্যাসের বিস্তার ঘটিয়ে মানুষসহ ও অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বায়ু দূষণের নির্মম পরিণতি থেকে প্রাণীকূলকে বাঁচাতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
১] বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে দেশব্যাপী বনায়ন কর্মসূচিকে আরো জোরদার করা।

২] শিল্প কলকারখানা শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা।
৩] ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা। 
৪] যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৫] ইটের ভাটা স্থাপন এবং ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালোধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তাবিধান করা।
৬] পলিথিনের মতো অপচনশীল দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ সকল কঠিন ও তরল বর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ সুনিশ্চিত করা।
৭] কেমিক্যাল ও ট্যানারীর মতো যে কোনো শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের পূর্বে পরিশোধন বাধ্যতামূলক করা।
৮] পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ব্যবস্থ্া গ্রহণ করা।
৯] পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বেসরকারী সংস্থাসমূহকে সম্পৃক্ত করে দেশের আপামর জনগণকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।
১০] পরিবেশ আইন ও বিধান ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থ্া গ্রহণ নিশ্চিত করা।


0 comments:

Post a Comment