Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ: বঙ্গোপসাগর ও অরক্ষিত

পরিবেশ: বঙ্গোপসাগর ও অরক্ষিত
আলী ফোরকান
বঙ্গোপসাগরে পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিভিন্ন উপকূলে ডলফিন মরে ভেসে ওঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের গর্বিত সম্পদ বঙ্গোপসাগর নিয়ে ঘটছে অস্বাভাবিক কর্মকান্ড। মাছের অস্বাভাবিক মৃত্যু কী নীরব দর্শকের মত দেখেই যাব? কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলরেখা বরাবর অজস্র নানা প্রজাতির মাছ প্রায় মরে ভেসে ওঠে। পানির তাপমাত্রার পরিবর্তন বিদেশী জাহাজ থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের কারণে। গভীর পানির মাছের বাস উপযোগী পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে যাবার জন্য উপকূলীয় এলাকা, সামুদ্রিক সম্পদের আজ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল বিপুল সম্পদে সমৃদ্ধ এবং মনোরম বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ রক্ষায় যে কোন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল বরাবর এলাকায় বাস করে। উপকূলীয় এলাকার সম্পদ বিশ্বের বৃহত্তম জোয়ার ভাটা এলাকার ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে গভীরতম বালুকাময় অববাহিকা ধ্বংস করে দিচ্ছে। চিংড়ি চাষের অপরিকল্পিত সম্প্রসারণে সুন্দরবনও হুমকির সম্মুখীন। যা উপকূলীয় জীবতাত্বিক চক্রের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, সাইখ সিরাজের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চিংড়ি চাষের জন্য কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এমন গৃহ পালিত জীবজন্তুর ঘাসের অভাবে তারা গরু-ছাগল পালন করতে পারছে না। উপকূল জুড়ে ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে তান্ডব শুরু হয়েছে তা আমাদের ঠেকানো যাবে না। ৭ হাজার একর আয়তনের গাছসমৃদ্ধ চকোরিয়া চিংড়ি চাষ এবং লবণ উৎপাদনের জন্য জমি দখলের মধ্যে দিয়ে সুন্দর বনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সুন্দরী গাছের মাথা মরে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসের সম্মুখীন আজ। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। ভূমি দস্যুদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। বিদেশি বর্জ্য বোঝাই জাহাজ নির্বিঘেœ বর্জ্য ফেলে দেয়। সরকারকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাহিনীকে অবৈধ বর্জ্য নিক্ষেপ শনাক্ত করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রযুক্তি দিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ থেকে তেল ফেলা সবচেয়ে জটিল পরিবেশগত সমস্যা। বহু যন্ত্রচালিত নৌযান চলাচল করে উপকূলীয় এলাকাতে। এসব নৌযানের চালকরা বঙ্গোপসাগরেই তাদের যাবতীয় বর্জ্য নিক্ষেপ করে। এ বর্জ্য নিক্ষেপে পরিবেশের যে কি ভয়ঙ্কর ক্ষতি হচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। এক জরীপে জানা যায়, দুটি সামদ্রিক বন্দরে প্রায় ৫০/৬০টি তেলের ট্যাংকার আসে। বাংলাদেশের বন্দরগুলো যেহেতু অগভীর পানিতে অবস্থিত, সে কারণে অপরিশোধিত তেলবাহী বড় বড় ট্যাংকার বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত ট্যাংকার থেকে ছোট ট্যাংকারে তেল খালাশের সময়ে সাগরে তেল পড়ে। পানির ওপরে তেল জমাট বেঁধে ভেসে থাকে। যার ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। ভাসমান শ্যাওলা, যা মাছের খাদ্য, তেল দূষণে তা হয়ে যায় বিষাক্ত। যে উপকূলীয় এলাকা এক সময়ে মাছ, কাঠ বনজ পণ্য উৎপাদনের স্বর্ণ খনি হিসেবে বিবেচিত হতো, সেই এলাকা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশের জীবন সূত্র ধরে আছে যে উপকূলীয় পরিবেশ, তা ধ্বংসে পরিণত হবে ভয়াবহ। জেলেরা বলে আগের মত তারা মাছ পায় না। আইলা, সিডরে যে পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়, তা জাহাজ মালিকদের কি আসে যায়? তারা তো অট্টালিকায় বাস করে। নদীগুলো বয়ে আনে শিল্পজাত পৌর বর্জ্য জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীবাহিত প্রতি বছর বিপুল বন্যায় যা বঙ্গোপসাগরে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটায়। লোনা পানির মাছের জীবন সংকট হয়ে পড়ছে। তারপর সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক ও স্বল্পোন্নত দেশ। নানা বৈচিত্র্য, বৈশিষ্ট্য ও বিস্ময়ের আধার সুন্দরবন। এই সুন্দরবন আমাদের জাতীয় গৌরব। কক্সবাজারের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। কপেনহেগেনে যে আলোচনা হয়েছে, বিদেশ থেকে যদি পুরোপুরি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তাহলে সঠিকভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে যা করতে হয় তাই করতে হবে। কিছু মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে বনজ সম্পদের অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত আহরণ, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুন্দরবনে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। উপকূলবাসির আইলা-সিডরে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। চলুন সরকারের সাথে যে যেখানে আছি, সেখান থেকে সকলে মিলে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে এগিয়ে যাই। 

0 comments:

Post a Comment